কোম্পানীগঞ্জে বিজিবির ওপর হা ম লা: আ হ ত ৩
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
দৈনিকসিলেটডটকম
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বরম সিদ্ধিপুর গ্রামে বিজিবি সদস্যের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে লাইনম্যানের নির্দেশে। এ হামলায় ৩জন বিজিবি সদস্য আহত হয়েছিলেন। তখন হামলা থেকে বাঁচতে ২ রাউন্ড গুলি ছুড়ে বিজিবি সদস্যরা।
গত ২১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ভারত বাংলাদেশ সীমানা পিলার ১২৫৫ এর বাংলাদেশ অংশে বিজিবি সদস্যদের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বিজিবি সদস্য নায়েক মো: আরিফুর রহমান বাদি হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাত রেখে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৩৫জনকে আসামি করলেও যার নির্দেশে বিজিবি সদস্যদের উপর হামলা হয়েছে সেই হেলালকেই মামলায় আসামি রাখা হয়নি। বিজিবি এই মামলায় নির্দেশ দাতাকে না রাখলেও কলেজ পড়ুয়া, সিলেটে বসবাসকারী, ঢাকায় কাজে থাকা এমন অনেককেই আসামি করর অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বরম সিদ্ধিপুর গ্রামের হেলাল ও তৈয়ব আলী বিজিবির নামে সীমান্ত এলাকা থেকে টাকা উত্তোলন করে। তারা ভারত থেকে বাংলাদেশ নিয়ে আসা সব ধরনের মালামাল থেকে টাকা নিয়ে থাকে। সম্প্রতি বরম সিদ্ধিপুর ও মাঝেরগাঁও সীমান্ত দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে মাদক, চিনি ও কাপড়। এগুলো থেকে প্রকারভেদে ১শ থেকে ৫শ টাকা নিয়ে থাকে। বিজিবির লাইনম্যান পরিচয় দিয়ে তারা এসব অবৈধ মালামাল থেকে টাকা নিয়ে থাকে। আর তাদের এই কর্মকান্ডের পেছনে রয়েছেন স্থানীয় এক সরকার দলীয় নেতার ছত্রছায়া।
মামলার ৩৪নং আসামী ও ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা ইমাম আহমদ জানান, ভারত থেকে আমরা যে চিনির বস্তা নিয়ে আসি সেগুলোর জন্য বস্তা প্রতি ১’শ টাকা দেই হেলাল ও তৈয়ব আলীর কাছে। তারা বিজিবির লাইনম্যান। বিজিবিকে ম্যানেজ করবে বলে আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয় তারা। তাদেরকে টাকা দেওয়ার কারণে কালাইগর ক্যাম্পের বিজিবি আমাদেরকে ডিস্টার্ব করে না। উৎমা বিজিবি ক্যাম্পকে তারা টাকা দেয় না তাই প্রায় সময় ঐ ক্যাম্পের বিজিবি এসে মাল আটক করে নিয়ে যায়। ২১ জানুয়ারি রাত ২টায় ভারত থেকে চিনি নিয়ে আসার জন্য লেবাররা সীমান্তের ওপরে গিয়েছিল। এ সময় বরম সিদ্ধিপুরের বিজিবির লাইনম্যান হেলাল, তৈয়ব আলীসহ আমরা ৪/৫ জন শফিক মিয়ার বাড়ির পাশে আগুন পোহাচ্ছিলাম। একটু পরে লেভাররা এসে বলে উৎমা ক্যাম্পের বিজিবি মাল আটক করেছে। তখন হেলাল ও তৈয়ব আলী খবর নিয়ে জানতে পারে হেলালের ভাই দুলাল, তৈয়ব আলী ও তার পার্টনার জুয়েলের মাল আটক করেছে বিজিবি। লেবাররা এ সময় বলে বিজিবি যখন মাল আটক করেছে তাহলে আমরা বাড়িতে চলে যাচ্ছি। তখন হেলাল ও তৈয়ব আলী বিজিবির কাছ থেকে চিনির বস্তা ছিনিয়ে আনার নির্দেশ দেয় লেবারদের। লেবাররা প্রথমে রাজি হয়নি। তখন হেলাল বলে আজ যদি বিজিবির কাছ থেকে চিনির বস্তা না আনো তাহলে আগামীকাল থেকে কাউকে কাজে আসতে দেওয়া হবে না। পরে শ্রমিকরা হেলাল ও তৈয়ব আলীর কথা মতো বিজিবি সদস্যদের ওপর ঢিল ছুড়তে থাকে। শ্রমিকদের ছুঁড়া ঢিল থেকে বাঁচতে বিজিবি সদস্যরা বরম সিদ্ধিপুরের নদীর পূর্ব পাড়ে চলে যায়। তখন কয়েকজনকে দিয়ে চিনির বস্তা গুলো নিয়ে যায় হেলাল ও তৈয়ব আলী। নদীর পূর্ব পাড়ে গিয়েও নিজেদের নিরাপদ করতে না পারায় ২ রাউন্ড গুলি ছুড়ে বিজিবি সদস্যরা। বিজিবি গুলি ছুড়ার পর সকলে সেখান থেকে চলে যায়।
মামলার ১২ নং আসামি মাকসুদুর রহমান টিপু বলেন, স্থানীয় এক সরকার দলীয় নেতার প্রকাশ্যে সাপোর্টে হেলাল ও তৈয়ব আলী বিজিবির নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। বিজিবির লাইনম্যানের পরিচয় দিয়ে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা সব ধরনের মালামাল থেকে টাকা নিয়ে থাকে তারা। তাই রাতারাতি তারা কুটিপাটিও হয়ে গেছে। বিজিবির এই মামলায় বেশ কয়েকজনকে বিনা অপরাধে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, কেউ সিলেটে ডাক্তারের কাছে ছিলেন। কেউ ঢাকায় বসবাস করছেন।
লাইনম্যান তৈয়ব আলী জানান, সেদিন রাতে আমি ঘুমে ছিলাম। গুলির শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠেছি। কারো কাছ থেকে আমরা টাকা নেই না। তবে ইন্ডিয়া থেকে কিছু মালামাল দেশে আসে এটা সত্য। তিনি আরো বলেন, এলাকায় আছি হিসেবে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
মামলার বাদী নায়েক আরিফ বলেন, রাতের আঁধারে সবাইকে তো চেনা যায়নি। আমরা যারা অভিযানে ছিলাম সকলের সমন্বয়ে মামলায় আসামী দেওয়া হয়েছে।