কারা আসছে ছাত্রলীগের কমিটিতে চলছে নানা গুঞ্জন

বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের কমিটি হবে অনেকে এই অপেক্ষা করেও পাড়ি জমিয়েছেন প্রবাসে শেষ করেছেন ছাত্র জীবন কিন্তু কমিটি আর হয়নি নানা জঠিলতায় তবে এবার উৎফুল্লতা ফূঠে উঠেছে বর্তমান কর্মীদের মধ্যে কমিটি হবে এই খবর শুনে।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা করা হতে পারে বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ তিন ইউনিটের কমিটি। তবে উপজেলা, কলেজ ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের সম্ভাব্য রূপরেখা জানাজানি হওয়ার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল সূত্র চলতি সপ্তাহেই বিয়ানীবাজারের কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। এখানে গত প্রায় দুই দশক থেকে ছাত্রলীগের কোন ইউনিটের কমিটি নেই।
সূত্র জানায়, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে গত মাসে বিয়ানীবাজার উপজেলা, পৌর ও কলেজ কমিটির দায়িত্বশীল পদ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন জমা নেয়া হয়। এতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে অন্তত: শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। সেগুলো বাছাই-বিশ্লেষন করে বিভিন্ন গ্রুপের শীর্ষস্থানীয়দের কথা বলে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। বিশ্বস্থ সূত্রের দাবী, উপজেলা শাখার সভাপতি পদে ৩জন (স্বাধীন গ্রুপ, জামাল গ্রুপ, পাভেল গ্রুপ) সাধারণ সম্পাদক পদে একজন (পল্লব গ্রুপ), কলেজ কমিটির সভাপতি পদে ২জন (জয় বাংলা ও রিভার বেল্ট গ্রুপ), সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন (জয় বাংলা ও রিভার বেল্ট গ্রুপ), পৌর কমিটির সভাপতি পদে একজন (মূলধারা গ্রুপ) ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জনের নাম তালিকাভ‚ক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্য থেকে বাছাই করে তিন ইউনিটের ৬ জনকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করা হবে। সম্ভাব্য কমিটির এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় সিনিয়র নেতারা বাদ পড়ছেন-এটা প্রায় নিশ্চিত। তাদের বাদ পড়ার খবরে বিবদমান সবক’টি গ্রুপে ভাঙ্গন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একদিকে কমিটি গঠনের তোড়জোড় অন্যদিকে গ্রুপে ভাঙ্গন শঙ্কা নিয়ে দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন নিয়ন্ত্রকরা।
উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতা বলেন, জুনিয়র পর্যায় থেকে নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হচ্ছে বলে শুনেছি। এরকম হলে সিনিয়র এবং পোঁড় খাওয়া দুই শতাধিক নেতকর্মী বাদ পড়বেন। যা ছাত্রলীগের জন্য সুখবর হবেনা। ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল হক রুনু বলেন, একদম জুনিয়র থেকে সভাপতি-সম্পাদক করা ঠিক হবেনা। এতে সিনিয়ররা বাদ পড়বেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, বিভিন্ন গ্রুপ থেকে যাদের বাছাই করা হয়েছে বলে শুনেছি, তারা গ্রুপ নিয়ন্ত্রকদের আত্মীয়স্বজন। ছাত্রলীগ যদি আত্মীয়স্বজন নির্ভর হয়ে পড়ে তাহলে সাধারণ নেতাকর্মীরা আগ্রহ হারাবে। উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা ছিদ্দিকুর রহমান জানান, সম্ভাব্য কমিটিতে প্রকৃত ছাত্র, মামলাহীন, বয়স বিবেচনা করে দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ঠিক করা উচিত। প্রত্যেকের হাল খতিয়ান যাচাই করে বিতর্কহীন কমিটি হলে সবাই মেনে নিবে।
জানা গেছে, ২০০৪ সালে সর্বশেষ বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ২০১২ সালে তৎকালীন সিলেট জেলা ছাত্রলীগ এই আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করলেও নতুন কমিটির আর দেখা মেলেনি। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বাড়তে থাকে গ্রুপ-উপগ্রুপ।
বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত ১০ বছরে কমপক্ষে অর্ধশত বার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এসব সংঘর্ষে কারো চোখে গুলি লেগেছে, আবার কারো বুকে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২ শতাধিক। নিহত ১জন হয়েছেন। নিজেদের মধ্যে মারামারির দায়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে মোট ৪৭টি মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে গ্রুপিং কোন্দলের কারণে বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ পৃথকভাবে মিছিল, সভা-সমাবেশ করতে থাকে। এসব মিছিলে লোকবল বাড়াতে ‘ভাড়াটিয়া’ কর্মীদের ডাক পড়ে। স্কুলের গন্ডি পার না হওয়া ছাত্ররা ও এসে যোগ দেন মিছিলে আর নেতাদের ডাকে যোগ দেন নরসুন্দর, দোকানের কর্মচারী, অছাত্র, ব্যবসায়ী, দাগী অপরাধী, দর্জি, মিস্ত্রি আর শ্রমজীবীরাও।