বেতার নাট্যকার-নাট্যনির্দেশক ফোরামের স্মারকলিপি প্রদান
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
দৈনিকসিলেটডটকম
বেতার নাট্যকার-নাট্যনির্দেশক ফোরাম সিলেটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবীদাওয়া সম্বলিত একটি স্মারকলিপি সিলেট বেতার কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল্লাহ্ মোহাম্মদ তারিক’ এর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে আহ্বায়ক নাট্যকার ও নির্দেশক বাবুল আহমদ, সদস্য নাট্যকার সুদীপ চৌধূরী, নির্দেশক আশুতোষ ভৌমিক বিমল, নির্দেশক অরিন্দম দত্ত চন্দন, নাট্যকার ও নির্দেশক এনামূল মুনির, নাট্যকার আবু সাহিদ সমীর, নাট্যকার মুনিরা সিরাজ চৌধূরী রাজু এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এসময় আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল্লাহ্ মোহাম্মদ তারিক স্মারকলিপিটি গ্রহণ করে বলেন, তিনি সমস্যা সমাধানে সাধ্যমত চেষ্টা করবেন।
পেশকৃত দাবী সমূহ:
১। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কাছে বেতার একটি জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম এবং নাটক অতি প্রিয় একটি বিনোদন। নাটকের মাধ্যমে মানুষের আশা আকাঙক্ষাকে যেভাবে প্রতিফলিত করা যায় অপর কোনো মাধ্যমে তা করা প্রায় অসম্ভব। তাই বেতার নাটকের স্থিতি পূর্ণ এক ঘন্টা। কিন্তু বিগত ২/৩ বছর থেকে নাটকের স্থিতি ৫০ মিনিট স্থির করা হয়েছে ফলে আবহসঙ্গীতের জন্য সময় বাদ দিলে সংলাপ রচনার জন্য ৪০ মিনিট হাতে থাকে যাতে একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক রচনা প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। অধিকন্তু পাণ্ডলিপি রচনার জন্য নাট্যকারকে ৫০ মিনিটের সম্মানী দেয়া হচ্ছে। এতে করে একজন নাট্যকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এবং সৃজনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। এমতাবস্থায় একটি নাটকের স্থিতি পূর্ণ ৬০ মিনিট ধরে পান্ডলিপি রচনা বাবদ নাট্যকারকে পূর্ণ ৬০ মিনিটের সম্মানী প্রদানের জোর দাবী জানাচ্ছি।
২। বেতারে জীবন্তিকা অতি জনপ্রিয় খন্ডনাটক হলেও অধূনা সিলেট বেতারে নতুন জীবন্তিকা প্রায় লেখা হচ্ছে না বলে নাট্যকারগণের অভিমত। পুর্বের ন্যায় প্রতি সপ্তাহে ১টি করে বিষয় ভিত্তিক নতুন জীবন্তিকা রচনা ও প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবরে জোর দাবী জানানো হলো। পাশাপাশি ১০ মিনিট স্থিতির জীবন্তিকা রচনার সম্মানী ১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০০ টাকা, বিশেষ স্পট ড্রামা (পিএসএ) রচনার সম্মানী ৪০০০ টাকা এবং সাধারণ দিবস ভিত্তিক স্পটড্রামা রচনার জন্য ২৫০০ টাকা সম্মানী দেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।
৩। একজন নাট্যকারকে দীর্ঘদিন কঠোর পরিশ্রম করে একটি নাটকের পান্ডিুলিপি তৈরী করতে হয়। অতঃপর নাটকটি প্রচারের লক্ষ্যে স্থানীয় বেতার কর্তৃপক্ষ বরাবরে দাখিল করা হয়ে থাকে। প্রত্যেক শিল্পস্রষ্ঠাই চান তার সৃষ্টি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা হোক। আমরা বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রের সকল নাটকের পাণ্ডলিপি ও ধারণকৃত অডিও যথাযথভাবে সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি আর্কাইভ প্রতিষ্ঠার জোর দাবী জানাচ্ছি।
৪। প্রতিযোগীতা মানুষের কর্মস্পৃহাকে শানিত করার পাশাপাশি কর্মে দক্ষ করে তোলে। নাটক একটি সৃজনশীল ক্রিয়া এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এর মানউন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু বেতার নাটকে কোনো প্রতিযোগিতা না থাকায় এবং কর্মের মূল্যায়ন না করায় অধিকাংশ নাট্যকার তাদের সৃজনশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আমাদের দাবী প্রতিবছর বিভাগওয়ারি শ্রেষ্ঠ পাণ্ডলিপি রচয়িতা, শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্দেশক এবং শ্রেষ্ঠনাটকের জন্য মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে সম্মাননা ও সনদপত্র প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক।
৫। বেতার নাটকের ক্ষেত্রে কোন রকম পুরষ্কারের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক মেধাবী লেখক বেতারনাটক লেখায় উৎসাহি নন। প্রতি বছর বা দুই বছর অন্তর বাংলাদেশ বেতারের সকল কেন্দ্রের বাছাই করা নাটকের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ জাতীয় বেতার নাট্যকার ঘোষণা ও আজীবন সম্মাননার ব্যবস্থা করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
৬। একটি নাটকের পাণ্ডলিপির জন্য সরকার নির্ধারিত যে পরিমান সম্মানী নাট্যকার প্রাপ্ত হয়ে থাকেন তা উল্লেখযোগ্য নয়। তদুপরি প্রাপ্ত সম্মানীর উপর ১০% উৎসে কর কর্তন করে রাখা হয়। নাটকের পান্ডলিপি থেকে উৎসে কর কর্তন না করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষ বরাবরে বারংবার আবেদন নিবেদন করে আসছি কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এব্যাপারে অদ্যাবধি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উল্লেখযোগ্য যে ইতিপুর্বে নাটকের ক্ষেত্রে ১০% কর আরোপ করা হলে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিত নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের প্রাপ্ত সম্মানী হতে উৎসে কর আদায় রহিত করেন। আমরা নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারের প্রাপ্ত সম্মানী হতে ১০% উৎসে কর রহিত করার জন্য পুনরায় জোর দাবী জানাচ্ছি।
৭। নাটকের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং মানসম্পন্ন পাণ্ডলিপি তৈরীতে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে প্রতি পাঁচ বছর পর পর আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্র ভিত্তিক প্রতিযোগিতার (গ্রেডেশন) ব্যবস্থা করে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য দাবী জানাচ্ছি।
৮। তালিকাভুক্ত নাট্যকারদের পাণ্ডলিপি যাচাই বাছাইয়ের (গ্রেডেশন) মাধ্যমে যারা একটি নির্ধারিত শ্রেণী অতিক্রম করেছেন সেসব নাট্যকারকে বিশেষ শ্রেণীতে উন্নীত করা এবং বিশেষ শ্রেণীর সম্মানী প্রদানের জোর দাবী জানাচ্ছি।
৯। পূর্বেকার মত নাটক রেকর্ডিংয়ের ন্যুনতম ১৫ দিন পুর্বে নাট্যকারের সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন করার রীতি পুনরায় চালু করার দাবী জানাচ্ছি। নাটক পুনঃপ্রচারের ক্ষেত্রে স্থানীয় বেতার কেন্দ্র অথবা পৃথক বেতারকেন্দ্রে নাটক প্রচারের পূর্বে নাট্যকারকে অবহিত করার দাবী জানাচ্ছি।
১০। স্থানীয় নাট্যকারদের উৎসাহ এবং আরো অধিক সংখ্যায় স্থানীয়ভাবে নাটকের পান্ডলিপি প্রাপ্তির লক্ষ্যে পুর্বের ন্যায় প্রতিমাসে স্থানীয় নাট্যকারদের অন্তত: দুটি নতুন নাটক প্রচার এবং দুটি নাটকের পুনঃপ্রচারের ব্যবস্থা করার দাবী জানাচ্ছি।
১১। সিলেট বেতারে দীর্ঘদিন ধরে নাট্যপ্রযোজকের পদ খালি থাকায় বেতার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় অভিনয় শিল্পীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিকে নাট্যনির্দেশক নিয়োগ দিয়েছেন সেজন্য আমরা বেতার নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক ফোরাম সিলেটের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, একটি নাটকের জন্য তিনদিন মহড়া, একদিন রেকর্ডিং এবং প্রয়োজনে নাটকের এডিটিং ও আবহসঙ্গীত সংযোজনের কাজে সহযোগিতা বাবদ নাট্যনির্দেশককে বাড়তি কোনো সম্মানী দেয়া হচ্ছে না। তিনি (নির্দেশক) যে শ্রেণীভুক্ত অভিনয় শিল্পী সেই শ্রেণীর সম্মানী প্রদান করা হচ্ছে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব বিশেষ নাট্যনির্দেশকগণের সম্মানী ন্যুনতম ৫০০০ টাকা এবং কোন শ্রেণীবিন্যাস না রাখার জোর দাবী জানাচ্ছি।
১২। বর্তমান সরকারের আমলে দেশব্যাপী ডিজিটালাইজেশনের ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে অভুতপুর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দেশের সর্বত্র অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। এব্যাপারে বেতারসংশ্লিষ্ট সকলের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্যাদি সংগ্রহ করা হলেও অদ্যাবধি কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সকল প্রকার ভাতা ও সম্মানী ইএফটি (ঊঋঞ) একাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি প্রাপকের ব্যাংক একাউন্টে প্রদানের ব্যবস্থা করতে কর্তৃপক্ষ বরাবরে জোর দাবী জানাচ্ছি।
১৩। দীর্ঘদিন থেকে সিলেট বেতার কেন্দ্রে ‘মূখ্য নাট্য প্রযোজক’ এবং ‘সহকারী নাট্য প্রযোজকের, পদ শূণ্য আছে। ফলে নাটক উৎপাদনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া দারুনভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় উভয় পদে নাট্য প্রযোজক পুনর্বহালের ব্যবস্থা করার দাবী জানাচ্ছি।
১৪। সিলেট বেতার কেন্দ্রে অনেক অভিজ্ঞ নারী নাট্যশিল্পী রয়েছেন যারা একটি বেতার নাটক নির্দেশনা দিতে সক্ষম। নারীর সমতা ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পুরুষ নাট্যনির্দেশকের পাশাপাশি সিনিয়র মহিলা নাট্যশিল্পীকে নাটক নির্দেশনার দায়িত্ব দেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।
১৫। মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষে আমন্ত্রিত বেতারে আগত নাট্যকার, নাট্যনির্দেশকের জন্য যাতায়াতের কোন ব্যবস্থা নেই এটি আমন্ত্রিত ব্যক্তির প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞার নামান্তর। এমতাবস্থায় নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশকের জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা প্রবর্তন অন্যথায় যাতায়াত ভাতা দেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।
১৬। নাটকের মহড়া, রেকর্ডিং ইত্যাদি চলাকালীন শিল্পীদের নিজস্ব খরচে আপ্যায়ন ইত্যাদির প্রয়োজনে একজন ৪র্থশ্রেণী কর্মচারিকে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করার জন্য বেতার কর্তৃপক্ষ বরাবরে সবিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।
১৭। নাটক রেকর্ডিংয়ের পর নাট্যকার, নির্দেশকসহ সংশ্লিষ্টদের সম্মানী চেক প্রাপ্তির দীর্ঘসুত্রিতা একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। সুতরাং পুর্বের ন্যায় নাটকে অংশগ্রহণকারী সকলের চুক্তিপত্র ন্যুনতম পনর দিন পুর্বে সম্পাদন পুর্বক রেকর্ডিংয়ের পরপরই প্রাপ্ত সম্মানী চেক প্রদানের ব্যবস্থা পুনর্বহালের জোর দাবী জানাচ্ছি।
১৮। বাংলাদেশ বেতার সিলেট’ কেন্দ্রের ফেসবুক পেইজে কৃষি, সংগীত ইত্যাদি বিষয়ের ভিডিও ক্লীপ প্রচারিত হয়ে আসছে। একইভাবে নাটকের রেকডিং চলাকালীন সময়ের উল্লেখযোগ্য কোন অংশের ভিডিও ক্লীপ বাংলাদেশ বেতার সিলেট’ কেন্দ্রের ফেসবুক পেইজে প্রচারের ব্যবস্থা করার দাবী জানাচ্ছি।