প্রবীণ আলেম মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নূরের ইন্তেকাল, দাফন সম্পন্ন

দৈনিকসিলেট ডটকম
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর আলীয়া মাদরাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা, প্রবীণ আলেমেদ্বীন মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নুর আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি গত রবিবার ১৩ রমজান (২৪ মার্চ) ভোর ৫টা ১০ মিনিটে সৈয়দপুরস্থ তাঁর নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে, বরেণ্য এ আলেমের ইন্তেকালের সংবাদ শুনে দেশ এবং দেশের বাহিরে বিভিন্ন মসজিদ এবং মাদরাসায় বিশেষ দুয়ার আয়োজন করা হয়েছে, এছাড়াও ইউ.কে ভিত্তিক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তাঁর জন্য বিশেষ মুনাজাত এবং তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা হয়। তাঁকে শেষবারের মতো দেখার জন্য অসংখ্য আলেম উলামা এবং আত্মীয় স্বজন সকাল থেকে নিয়ে জানাজাপূর্ব পর্যন্ত ভীড় জমান।
১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া এই সংগ্রামী আলেম সিলেট আলীয়া মাদরাসা থেকে কামিল এবং ঢাকা আলীয়া মাদরাসায় ইফতা বিভাগে পড়াশোনা করেন, তিনি কর্মজীবনে ঐতিহ্যবাহী সৈয়দপুর আলীয়া মাদরাসায় ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব পালনকালীন অবসর গ্রহণ করেন। উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর সাথে আজীবন সম্পৃক্ত ছিলেন, এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন, দাওয়াতি কাজে তিনি তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষ মুরব্বিদের সাথে দেশ বিদেশে বার বার সফর করেছেন।
মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নুর পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আমলে বিভিন্ন দ্বীনি আন্দোলনে ততকালীন শীর্ষ আলেমদের সাথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।পারিবারিক ভাবে তিনি ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক তাঁর ছেলেরা হলেন যথাক্রমে, মাওলানা সৈয়দ মাছরুর কাসিমী, মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ, মাওলানা সৈয়দ সালিম কাসিমী, মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ।
জানাজা পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা স্মৃতিচারণ করে বলেন- আজ থেকে তিনি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি সবসময় হকের পথে অটল ছিলেন। তিনি ছিলেন আমাদের জন্য এই সময়ের এক সুশীতল ছায়া। অসংখ্য গুণের মাঝে আমরা তাঁকে দেখেছি দ্বীনের পথে অটল একজন মনীষা।
ওইদিন রবিবার ১৩ রমজান বিকেল সাড়ে ৩টায় বড়গোল ময়দানে হাজারো আলেম উলামাসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের উপস্থিতিতে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের বড় ছেলে মাওলানা সৈয়দ মাছরুর আহমদ কাসিমী।অনুষ্ঠিতব্য জানাযায় মরহুমের চতুর্থ সাহেবযাদা মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদের পরিচালনায় জানাযাপূর্ব মুহূর্তে শোকগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও মরহুমের জীবন সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোকপাত করেন, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা শায়খ আব্দুল বাছির সাহেব, সৈয়দপুর দারুল হাদিস মাদরাসার মুহতামীম মাওলানা শায়খ সৈয়দ ফখরুল ইসলাম সাহেব, সৈয়দপুর দরগাহ মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা সৈয়দ আব্দুর রাজ্জাক, চৌধুরীবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা সৈয়দ আবু আলী, এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা হাফিজ সৈয়দ শামীম আহমদ, পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ, জনাব আব্দুর সৈয়দ রকিব সাহেব, মাওলানা মুশতাক আহমেদ গাজিনগরী, মাওলানা তৈয়বুর রাহমান, মাওলানা কামরুজ্জামান, মাওলানা আব্দুল মুমিন, মাওলানা আখতারুজ্জামান তালুকদার, মাওলানা মুফতি মুতিউর রাহমান প্রমুখ। জানাযা পরবর্তী তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী পারিবারিক কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক জান্নাতবাসী করুন, আব্দুন নূরের কবরকে নূর দ্বারা আলোকিত করুন, আমিন।
শোক:
এদিকে তাঁর ইন্তেকালে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়। টাওয়ার হ্যামলেটস এর নির্বাহী মেয়র লুতফুর রাহমান মরহুমের ইন্তেকালে বিশেষ সমবেদনা প্রকাশ করেন, জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি শায়খ জিয়া উদ্দিন, সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহা উদ্দিন জাকারিয়া, ভারতের প্রখ্যাত আলেম মুফতি আফফান মনছুরপুরী, ব্রিটেনের শীর্ষ আলেম মাওলানা শায়খ আসগর হুসাইন, শায়খুল হাদীস মুফতি আব্দুর রাহমান মনোহরপুরী, মুফতি আব্দুর রাহমান মেঙ্গেরা, ইউ.কে জমিয়তের সভাপতি মাওলানা শোয়াইব আহমদ, সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা মুফতি আব্দুল মুনতাকিম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদ, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সেক্রেটারি মুফতি সালেহ আহমদ, খেলাফত মজলিস ইউ.কের সভাপতি মাওলানা সাদিকুর রাহমান, সেক্রেটারি মাওলানা শাহ মিজানুল হক, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা শায়খ আব্দুল বছির, সৈয়দপুর দারুল হাদিস মাদরাসার মুহতামীম মাওলানা শায়খ সৈয়দ ফখরুল ইসলাম, সৈয়দপুর দারুল হাদিস বালিকা মাদরাসার মুহতামীম মাওলানা সৈয়দ আবু আলী, সৈয়দপুর আলীয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ, জামেয়া শামিমাবাদ সিলেটের মুহতামীম মাওলানা হাফিজ সৈয়দ শামিম আহমদ, মাওলানা শায়খ ইমদাদুর রাহমান আল মাদানী, মুফতি মওসুফ আহমদ, মাওলানা শেখ নুরে আলম হামিদী প্রমুখ। এছাড়াও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, উমান, সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ জমিয়তের শোক প্রকাশ
মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নূর সাহেবের ইন্তেকালে কেন্দ্রীয় জমিয়তের শোক। সৈয়দপুরের প্রবীণ আলিম, সৈয়দপুর আলিয়া (ফাজিল) মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের অন্যতম উপদেষ্টা, মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নুর সাহেব গতকাল রাতে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
জমিয়ত ও আকাবির প্রেমী প্রবীন, এ আলেমে দ্বীনের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীন সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী,মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী,সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া এ শোক প্রকাশ করেন। শোকার্তায় জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নূর সাহেবের ইন্তেকালে জাতি এক নিবেদিত প্রাণ দ্বীন দরদী আলেমেদ্বীনকে হারিয়েছে। যার চলনে বহমান থাকত আকাবিরদের প্রতিচ্ছবি আর মরহুমের বলনে সার্বক্ষণিক চলমান থাকত তাবলীগ, আকাবির,দেওবন্দিয়াত আর জমিয়তের সুখময় স্মৃতি। জীবনের বড় সফলতা তাঁর সন্তানদেরকে মানুষের মতো মানুষ করা। তাঁর প্রতিটি সন্তান আজ নিজ অবস্থানে জ্যূতির্ময়। উপমহাদেশে জমিয়তে অনেক আকাবিরদের সাথে সৈয়দ সাহেবের ছিল খুবই সখ্যতা।আল্লাহ সৈয়দ সাহেবকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম নসিব করুণ।
বর্ণাঢ্য জীবনী:
মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি হাসিলের কাংখিত লক্ষ্যে ইলমুল ওহী অর্জন করে সমাজ জীবনে তা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মুসলিম জাতিসত্তা নির্মাণে যারা অবদান রেখে চলেছেন তাঁদের মধ্যে সিলেট বিভাগের অন্যতম প্রবীণ আলেম মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নূর সাহেব। একজন আত্মনিবেদিত শিক্ষাবিদ হিসেবে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। ইলমে দ্বীনের আলোকোজ্জ্বল দ্যুতি বহু শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে প্রজ্জ্বলিত করে তিনি তৈরী করেছেন অনেক আলেমে দ্বীন ও সু-নাগরিক। নিজের সকল সন্তানকে গড়ে তোলেছেন সফল আলেম ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে। দেশে-বিদেশে তাঁর অনেক ছাত্র দ্বীন ইসলামের প্রচার ও প্রসার কল্পে রেখে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একজন মুবাল্লীগে দ্বীন হিসেবেও তাঁর কর্মতৎপরতা আমাদের আশান্বিত করে। ইসলামী রাজনীতির ময়দানেও তার উজ্জল দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আমাদের আলোচ্য ব্যক্তিত্ব মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নূর সাহেব ১৯৪১ সালে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলাধীন ঐতিহ্যের রতœভূমি সৈয়দপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মহান দরবেশ হযরত শাহজালাল (র) এর ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সাথী হযরত সৈয়দ শাহ সামসুদ্দীন (র) এর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সৈয়দপুর বরাবর ইসলামী আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এখানকার উলামা-মাশায়েখগণের ইসলাম প্রতিষ্ঠায় আপসহীন ও সাহসী ভূমিকা এক গৌরবজনক স্থান দখল করে আছে। মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নূরের পিতা মরহুম সৈয়দ ইসহাক আলী একজন গণ্যমান্য ও দ্বীনদার ব্যক্তি ছিলেন। মাতা সৈয়দা ইনসাফ বিবিও একজন পর্দানশীন ও তাক্বওয়া সম্পন্না মহিলা। ছোটোবেলায় তাঁর পিতা ইন্তেকাল করলে সন্তান বিহীন ফুফু সৈয়দা আকরামুন্নেছা তাঁর লালন-পালন ও লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা ইন্তেকালের কিছুক্ষণ পূর্বে তাঁর ফুফু আকরামুন্নেছাকে ডেকে বলেন- আমি হয়তো আর বেশিদিন বাঁচব না। তুমি আমার ছেলেকে আমার জমি বিক্রি করে হলেও মাদ্রাসায় লেখাপড়া করিয়ে আলেম হিসেবে গড়ে তুলবে। এর কিছুক্ষণ পর উক্ত বাড়িতে অবস্থানরত মাওলানা ইউসুফ খানকে ডেকে বললেন- আমি কবরে নাকির-মনকীরের প্রশ্নের জবাবে কি বলবো ? এরপরই তিনি ইন্তেকাল করেন। এ ঘটনা থেকে বুঝা যায় যে, ইলমে দ্বীন শিক্ষার প্রতি তাঁকে নিয়ে তাঁর পিতার আগ্রহ ছিলো কতো বেশি।
শিক্ষাজীবনের প্রারম্ভে তিনি স্থানীয় সৈয়দপুর হোসাইনিয়া হাফিজিয়া আরাবিয়া দাওরা হাদিস মাদ্রাসায় মক্তব ১ম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যায়ন করেন।সে সময় তাঁর উস্তাদগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- হাফিজ মাওলানা আব্দুল গফফার বারকুটী, মাওলানা আব্দুর রউফ ছাতকী রহ., হাফিজ সৈয়দ আফতাব আলী সৈয়দপুরী রহ., মৌলভী সৈয়দ লুৎফুর রহমান সৈয়দপুরী রহ., মাষ্টার সৈয়দ আব্দাল হোসেন সৈয়দপুরী, মাওলানা আব্দুর রশীদ শিরামিশি প্রমুখ।
তৎতালীন সময়ে তাঁর এক মামা হাফিজ মাওলানা শায়খ সৈয়দ মনজুর আহমদ ঢাকা উত্তর রানাপিং হুসাইনিয়া মাদ্রাসায় অধ্যায়ণরত ছিলেন। সেই সুবাদে উক্ত সৈয়দ মনজুর আহমদের পরামর্শে আব্দুন নূর রানাপিং মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে এক বছর ছাফেলা ১ম বর্ষে অধ্যায়ন করেন। অত্র মাদ্রাসায় অধ্যায়নকালীন তাঁর উল্লেখযোগ্য উস্তাদগণ হলেন- মাওলান আরমান আলী, বণুর হুজুর, টাইটেলী হুজুর প্রমুখ। সেখান থেকে তিনি ক্বায়িদুল উলামা আল্লামা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া রহ.-এর পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা জামেয়া আব্বাসিয়া কৌড়িয়ায় ভর্তি হয়ে নাহুমীর ও হেদায়াতুল্লাহ জামাত পর্যন্ত অধ্যায়ন করেন। সেখানে তাঁর উল্লেখযোগ্য উস্তাদগণ ছিলেন- মাওলানা আব্দুল হাই হায়দরপুরী, মাওলানা আব্দুল কাদির প্রমুখ। এ মাদ্রাসায় দু’বছর লেখাপড়া করে চট্টগ্রাম দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় কিছুদিন অধ্যায়ন করেন। তাঁর সেখানখার উস্তাদের মধ্যে ক’জন হলেন- খলিফায়ে মাদানী মাওলানা শাহ আহমদ শফী, মাওলানা নাদিরুজ্জামান, পীর সাহেব হুজুর প্রমুখ।
এরপর তিনি সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় ৬ বছর অধ্যায়ন করে ১৯৬৭ সালে কামিল পাশ করেন।১৯৬৮ সালে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ফেক্বাহ বিভাগে পুনরায় কামিল পাশ করেন। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় তাঁর উল্লেখযোগ্য উস্তাদ হলেন সিলেট আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল,মাওলানাা ইয়াকুব শরীফ, ফাজিলে দারুল উলুম দেওবন্দ,মাওলানা ফজলে হক (ফাজিল সাব) নারায়ণপুরী, মাওলানা শায়খ আব্দুল ওয়াহিদ রাজারগাঁও রহ., ফাজিলে দেওবন্দ মাওলানা শায়খ আব্দুল বারী শাহাদাতপুরী,মাওলানা আব্দুল হক ঝিঙ্গবাড়ী।ঢাকা আলিয়ার তার উল্লেখযোগ্য উস্তাদগন হলেন আল্লামা আব্দুর রহমান কাশগরী, মুফতি সৈয়দ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দিদী বরকতী, মাওলানা উবায়দুল হক খতীব বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ প্রমুখ।
সৈয়দপুর আলিয়ায় যোগদান:
১৯৬৯ সালে সৈয়দপুর সৈয়দিয়া শামছিয়া আলিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কল্পে স্থানীয় গন্যমান্যব্যক্তিরা তাকে আসতে অনুরোধ করায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে (৩৫ টাকা মাসিক সম্মানী) যোগদান করেন। তখন হেড মৌলভী ছিলেন মাওলানা রফিকুল হক রফু মিয়া।সেখানে তার প্রচেষ্টায় আলিম ও ফাজিল ক্লাস চালু হয়। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। ১৯৮১ সালে সৌদি আরবে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন এবং ১৯৯০ সালে দেশে ফিরেন। অতপর ১৯৯৪ সালে উপাধ্যক্ষ হিসেবে সৈয়দপুর আলিয়া মাদ্রাসায় যোগদান করেন। তাঁর স্বনামধন্য ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- মাওলানা সৈয়দ লোকমান আহমদ, মাওলানা সালেহ আহমদ লন্ডন,মাওলানা আব্দুল ওদুদ-মুহতামিম বানিয়াচং মাদ্রাসা, মাওলানা সৈয়দ ছাবির আহমদ- ইমাম ও খতিব ডারলিংটন মসজিদ ইউকে, মাওলানা নুর উদ্দীন-প্রিন্সিপাল মাদ্রাসা দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, হাফিজ ক্বারী আবু ইউসুফ, মাওলানা আমিরুল ইসলাম, মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আলী-সাবেক শিক্ষক সৈয়দপুর আলিয়া মাদরাসা, মাওলানা বদরুল-শিক্ষক সৈয়দপুর আলিয়া মাদ্রাসা প্রমুখ।
তিনি ১৯৬৮ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট জেলা শাখার অফিস সেক্রেটারি হিসেবে কিছু দিন দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি যেসব ইসলামী ব্যক্তিত্বের সাথে রাজনৈতিক সফর করেন তাঁরা হলেন- আল্লামা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া,শায়খ রিয়াছত আলী চখরিয়া, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান,মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী, মাওলানা আব্দুল হক শায়খে গাজিনগরী,মাওলানা আমিন উদ্দীন শায়খে ক্বাতিয়া,মাওলানা ওয়ারিস উদ্দীন শায়খে হাজীপুরী,মাওলানা শফিকুল হক আকুনী প্রমুখ। সে সময় কুখ্যাত ড. ফজলুর রহমানের ‘নামাজ তিন ওয়াক্ত ও মিরাজ মিথ্যা’ মন্তব্যের বিরুদ্ধে উক্ত উলামাদের সাথে তিনি বিভিন্ন মিছিল-মিটিং ও প্রতিরোধের আন্দোলনে যোগদান করেন। উক্ত আন্দোলনের কারণে ডা. ফজলুর রহমান দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সিলেট আলিয়ায় অধ্যয়নের সময় ১৯৬৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ স্কুল মাঠে জমিয়তের বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আল্লামা আবদুল্লাহ দরখাস্তি, মুফতি মাহমুদ, গোলাম গৌছ হাজারভী, মাওলানা গুলবাদশাহ উপস্থিত ছিলেন। ছাত্র জীবনে তিনি জমিয়তে তুলাবায়ে আরাবিয়ার সাথে যুক্ত থাকায় জমিয়াতের ঐ ঐতিহাসিক সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব আদায় করেন। সৌদিতে থাকাকালীন তিনি আনুমানিক ১৯৮৫ সালে হাফিজুল দ্বিতীয়বার হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তীর সাথে মসজিদে নববীতে রিয়াদুস সালেহীন পাঠদানের মজলিসে মুলাকাতের সৌভাগ্য লাভ করেন। সালামের পর আল্লামা দরখাস্তী উনার চেহারা দেখে বললেন যে তুমি বাঙ্গালী? উত্তরে উনি বললেন আমি বাঙালি এরপর বললেন ঢাকা দক্ষিণে তুমি আমার উপর ছাতা ধরে ছিলে।উত্তরে উনি বললেন জি আমি ছাতা ধরে ছিলাম। ২০ বছর পূর্বে ১৯৬৫ সালে উনি খেদমত করেছিলেন তা উনার স্বরন রয়ে গেছে।এরপর আল্লামা দরখাস্তের বললেন বাঙ্গালীদের চারটি আলামত মুখে পান,মাথায় টুপি,হাতে ছাতা এবং পেটে মাছ এইজন্য বাঙ্গালীদের বাচ্চা বেশি হয়।এরপর আল্লামা দরখাস্তী ওনাকে বললেন যে তুমি আমাকে কোরআন তেলাওয়াত শোনাও তখন উনি তেলাওয়াত শুনালেন।
১৯৭২ সালে জমিয়তের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার জন্য তার স্ত্রী সৈয়দা আফিয়া খাতুন নিজ সোনার হার বিক্রয় করে স্বামীর হাতে তুলে দেন। বর্তমানে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পদে আছেন।
তিনি ছাত্রজীবন থেকেই তাবলীগের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে সিলেট টেকনিকেল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা থেকে তিনি ১ চিল্লায় বের হন। তখন সিলেটের বিশ্ব ইজতেমায় হযরতজ্বী ইউসুফ কান্ধলভী, মাওলানা উমর পালন পুরী , মাওলানা রহমত উল্লাহ দেওবন্দি উপস্থিত ছিলেন। এই তিনজন বিশিষ্ট আলেমকে সিলেট সরকারী আলিয়ায় নিয়ে বিশেষ বয়ানের ব্যবস্থা করেন।তৎকালীন সময়ে মুফতী শফী সিলেটে সফরে ছিলেন তখন তাবলীগের বুযুর্গদের অনুরোধে বিশ্ব ইজতেমায় বয়ান করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে এক চিল্লার জন্য দিল্লীর নেজামুদ্দীন সফর করেন। দেওবন্দ, মিরর,সাহারানপুর এবং মেওয়াত সফর করেন। এসময় তার সফর সাথী ছিলেন মাষ্টার সৈয়দ মোস্তফা রহ. (বড়বাড়ি)। ১৫ দিন নেজামুদ্দীন অবস্থান করে চরে যান দারুল উলুম দেওবন্দ। তখন দেওবন্দের মুহতামিম ছিলেন ক্বারী তৈয়্যিব সাহেব রহ.। ১৯৭৬ সালে হজ্ব পালনের জন্য তাবলীগের দায়ীয়ানা জামাতের সাথে সৌদি আরব যান। এ বৎসর মদীনায় তাবলীগের ইজতেমা ছিল।উক্ত ৮১ জনের মুবারক কাফেলায় ছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজ খুলনা, মাওলানা আলী আকবর, মাওলানা লুৎফুর রহমান, মাওলানা রুহুল কিস্ত, ইঞ্জিনিয়ার হাজী আব্দুল মুকিত, মাওলানা হরমুজুল্লাহ এবং হাজী ইয়াকুব প্রমুখ ।
আর ৫০ জনই ছিলেন আলেম। এসফরে বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেমগনের মধ্যে ছিলেন, মাওলানা মোহাম্মদউল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মাওলানা আমিন উদ্দীন শায়খে কাতিয়া, মাওলানা নুরুল ইসলাম শায়খে তারাপাশী।সৌদি আরবের সফরকালে জামিয়া উলুমে শারইয়্যাহ মদীনায় শায়খুল হাদীস আল্লামা জাকারিয়া কান্দলুভীর সাথে সাক্ষাত করেন। শায়খে কাতিয়ার মাধ্যমেই তিনি শায়খুল হাদীস জাকারিয়ার সাথে সাক্ষাত লাভে ধন্যহন। খলিফায়ে মাদানী সৈয়দ তাখলিস হোসাইনের পরিচয়েই তিনি সহজে পরিচিত হন। উক্ত তাবলীগের সফরে আল্লামা উমর পালনপুরী ও হযরতজ্বী এনামুল হাসানের সাথে মদীনায় ইজতেমার মাঠে সাক্ষাত হয়। এছাড়া একবার তিনি মদীনা ইউনিভার্সিটিতে ভিজিট করেন এবং অনেক কিতাবাদি হাদিয়াপ্রাপ্ত হন।
সৈয়দপুর শাহী ঈদগাহ:
তিনি সৈয়দপুরের শীর্ষ উলামায়ে কেরামের মধ্যে গণ্য হয়ে আসছেন। তিনি ৮ বছর সৈয়দপুর শাহী ঈদগাহের ঈদের জামাতে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন। কাজী আব্দুর রউফ সাহেবের ফতোয়ার মাধ্যমে সৈয়দপুর ঈদগাহ নির্মানের সিদ্ধান্ত হয়। সৈয়দ ওয়াহিদ উদ্দীন প্রদত্ত ৬ হাজার টাকার দিয়ে ১৯৬১ সালে নোয়াপাড়ায় শাহী ঈদগাহের ভিত্তি রাখা হয়। ঈদগাহের ইমাম ছিলেন যারা: মাওলানা কাজী আব্দুর রউফ, মাওলানা সৈয়দ হাবিবুর রহমান, হাফিজ শায়খ আবু সাঈদ , মাওলানা সৈয়দ আব্দুন নুর (৭ বছর), হাফিজ মাওলানা মনজুর আলী, হাফিজ মাওলানা সৈয়দ মুতিউর রহমান। ১৯৮০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের শতবার্ষিকী সম্মেলনে যোগদানের জন্য ৩ দিনের সফরে ভারত গমন করেন। এসময় মদনী মনজীলে একদিন ফজরের নামাজের ইমামতি করেন।এ সময় পিছনের কাতারে ছিলেন ফেদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী, আল্লামা আরশাদ মাদানী এবং মাওলানা আসজাদ মাদানী প্রমুখ।
১৯৮১ সালে সৌদি আরবে চলে যান। ৮৪ সালে স্ত্রীও ছোট ছেলে মুফতি সৈয়দ রিয়াজকে হজ্বের সফরে সৌদিতে নেন। ১৯৯১ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এসময় ৭ বার পবিত্র হজ পালন করেন। এর আগে একবার মোট ৮ বার হজ পালন করেন।এরপর ১৯৯৪ সালে আবারো সৈয়দপুর আলিয়ায় যোগদান করে ১২ বছর উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ২০০৪ সালে ৬ মাসের সফরে ইংল্যান্ড যান। তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান হাসিলের লক্ষ্যে কুতবুল আলম সাইয়্যেদ মাদানী রহ.- এর সুযোগ্য পুত্র আসআদ মাদানীর কাছে ১৯৬৯ সালে নয়াসড়কে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তিনি ফেদায়ে মিল্লত, মাওলানা আসআদ মাদানীকে প্রথমবারের মতো ১৯৭৩ সালে সৈয়দপুরে নিয়ে আসেন। এসময় ফেদায়ে মিল্লতের সফরসঙ্গী হয়ে আব্দুল কারীম শায়খে কৌড়িয়া, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী,খতীব উবায়দুল হক সহ ১৭ জন বিশিষ্ট আলেম সৈয়দপুরে আগমন করে ছিলেন।তখন শেরপুর থেকে লঞ্চে সৈয়দপুর আসেন। লঞ্চে ডা: সৈয়দ আব্দুল হক ফেদায়ে মিল্লাতের নিরাপত্তায় (বন্দুকসহ)নিয়োজিত ছিলেন।পারিবারিক জীবনে তিনি একই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বড়বাড়ীর আলহাজ মাষ্টার সৈয়দ সাদ উদ্দীন আহমদের ১ম কন্যা সৈয়দা আফিয়া খাতুনের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৫ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক। তারা হলেন- মাওলানা সৈয়দ মাছরুর আহমদ কাসেমী, হাফিজ মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ,হাফিজ মাওলানা সৈয়দ সালিম আহমদ কাসেমী, হাফিজ মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, মুফতি মাওলানা সৈয়দ রিয়াজ আহমদ।এছাড়া কন্যারা হলেন সৈয়দা ফারহানা খাতুন (এর ৩ ছেলে হাফিজ ও মাওলানা,২ মেয়ে আলিমা), সৈয়দা রাহনুমা খাতুন (১ ছেলে হাফিজ ও মাওলানা, ১ ছেলে মাওলানা, ১ মেয়ে আলিমা), সৈয়দা সাফওয়ানা খাতুন (৩ ছেলে হাফিজ ও মাওলানা, ১ ছেলে মাওলানা, ৩ মেয়ে আলিমা)। অপর দিকে বড় ছেলে মাওলানা মাছরুর আহমদের তরফে ২ ছেলে হাফিজ,২ মেয়ে আলিমা,১ মেয়ে হাফিজা। পরিশেষে আমরা মহান আল্লাহপাকের নিকট নিবেদিতপ্রাণ এই মুবাল্লীগ ও শিক্ষাবিদের নেক হায়াত কামনা করছি।