স্মরণকালের ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি কোম্পানীগঞ্জে
মো. শরীফ আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে হঠাৎ কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। আকাশ থেকে বড় বড় শিলার আঘাতে অনেক ঘর-বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে গেছে। যাদের খড়ের ও টিনশেডের ঘর তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কারো টিন উড়িয়ে নিয়েছে। কারো বাসার টিন ঝাঁজরা হয়ে ঘরের ভিতর পানি ঢুকেছে।
রোববার রাত ১০টার দিকে প্রায় আধাঘন্টা যাবত এই ঝড় হয়। কোম্পানীগঞ্জে এর আগে এমন ভয়ংকর শিলাবৃষ্টি কেউ কক্ষনো প্রত্যক্ষ করেনি।
কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল গ্রামের বাসিন্দা মিনহাজুর রহমান বলেন, এতো বড় বড় শিলাবৃষ্টি এর আগে আমি কখনো দেখিনি। একেকটা শিলাখণ্ড যেন একেকটা বড় বড় পাথরখণ্ড। অনেকের ঘর বাড়ির টিনের চালা নষ্ট হয়েছে। অনেক পাখি শিলাখন্ডের আঘাতে মারা গেছে৷
কোম্পানীগঞ্জ ফটোগ্রাফি সোসাইটির যুগ্ম সম্পাদক ঢালারপাড় গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর আলম বলেন আজকের শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ইতিহাসের সর্বকালের ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। যারা বাসার বাহিরে ছিলেন, বিভিন্ন যানবাহনে ছিলেন, তারাও শিলার আঘাতে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ প্রসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব আহমদ বলেন আজকের শিলাবৃষ্টির সময় যেভাবে ভয়ংকর আওয়াজ হচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো যেন বিশাল কোনো এক মেশিনগান নিয়ে আকাশ থেকে দেদারছে ব্রাশফায়ার করছিলো। একেকটি শিলাখন্ড সহজে গলছিলোও না। ঘর-বাড়ির ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকের যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও পাখি মারা যাওয়ার ছবিও দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ যেনো সকল প্রাণীকুলকে এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে হেফাজতে রাখেন৷
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরুতে দক্ষিণ-পশ্চিমা মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কালবৈশাখী হয়। এ সময় বৃষ্টির ফোঁটাগুলো পড়ার সময় প্রায়ই মাঝপথে বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপের মধ্যে পড়ে। ফলে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো নিচে নামতে নামতে তার কিছু অংশ আবার ওপরে উঠতে শুরু করে এবং আরও ঠান্ডা হতে থাকে। ঘনীভূত পানির ফোঁটাগুলো আরও ভারী হয়ে আবার নিচে নামতে থাকে এবং আবার গরম বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপে পড়ে তার কিছু অংশ আবার ওপরে উঠতে থাকে। কয়েকবার ওঠানামা করতে করতে পানির ফোঁটাগুলোর কিছু অংশ ছোট ছোট বরফখণ্ডে পরিণত হয়। এগুলো বেশি ভারী বলে আর ওপরে উঠতে পারে না। বৃষ্টির ধারার সঙ্গে নিচে নেমে আসে। এটাই শিলাবৃষ্টি। শিলাবৃষ্টির প্রধান শর্ত প্রচণ্ড গরম। চৈত্র–বৈশাখ মাসে এ রকম গরম পড়ে। ফলে কাল-বৈশাখীর সময় শিলাবৃষ্টি হয়।