আমার জন্য দোয়া করবেন যেন হজে যেতে পারি
দৈনিকসিলেটডেস্ক
ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা ওয়ালিউল হক রুমি। অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। জানা যায়, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি অসুস্থাবস্থায় তিনি ভর্তি হন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে। ‘বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি তার অগ্ন্যাশয় ক্যানসার ধরা পরে। ১ মার্চ তাকে নেওয়া হয় ভারতের চেন্নাই অ্যাপোলো ক্যানসার হাসপাতালে। সেখানের ডা. টি রাজা তাকে কেমোথেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেন। মোট চারটি সার্কেলে ১২টি থেরাপি দেওয়া লাগবে। যার মধ্যে প্রথম সার্কেলের প্রথমটি অ্যাপোলো ক্যানসার হাসপাতালে দেওয়ার পর বাকিগুলো তাকে বাংলাদেশে দেওয়ার পরামর্শ দেন ডা. টি রাজা। ৯ মার্চ দেশে এসে প্রথম সার্কেলের দ্বিতীয় থেরাপি নেওয়ার পর কিছুটা সুস্থবোধ করছিলেন তিনি। কিন্তু তৃতীয় থেরাপির (২০ মার্চ) আগেই অসুস্থ হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। কথাগুলো বলেছেন অভিনেতা রুমির স্ত্রী ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষিকা ফৌজিয়া মান্নান মিতি।
স্কয়ার হাসপাতালে অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. এমডি সেলিম রেজার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন রুমি। প্রথমে (১৯ মার্চ) তাকে রাখা হয়েছিল এইচডিইউতে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট)। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় বর্তমানে কেবিনে আছেন। ডা. সেলিম রেজা বলেন, অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। যখন শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ক্যানসার পৌঁছায়, তখন রোগটি শনাক্ত করা যায়। তখন চিকিৎসা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। রুমির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে উনি ও ওনার পরিবার মানসিকভাবে অনেক শক্ত থাকার কারণে এত দ্রুত সময়ে তার চিকিৎসা শুরু করা গেছে। কেমোথেরাপিই এখন তার প্রধান ও একমাত্র চিকিৎসা। বর্তমানে তার নিউমোনিয়া ধরা পরেছে, ফুসফুসে কিছুটা ইনফেকশন আছে। ফলে তার অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে। আশা করছি আজ ও আগামীকালের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে। এরপর আমরা তাকে কেমোথেরাপি দেব। রুমির অনেক সহকর্মীই তাকে হাসপাতালে বিভন্ন সময়ে দেখতে যাচ্ছেন। সবাই তার সুস্থতা কামনা করছেন।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে রাজধানীর শহীদবাগের বাসায় কথা কথা হয় রুমির। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে ডায়াবেটিস ছাড়া আমি কখনোই কোনো রোগে আক্রান্ত হইনি। কিন্তু তিনি আমাকে এমন একটা রোগ দিলেন যা প্রাথমিক অবস্থায় ধরাই পড়ে না। যাক তিনিই ভালো জানেন কেন আমাকে এই রোগ দিলেন। এখন আমার তার কাছে একটাই চাওয়া, তিনি যেন আমাকে হজ করার তৌফিক দেন। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
অভিনয় জীবনের তিন দশকেরও বেশি সময় পার করেছেন রুমি। দীর্ঘ এ পথচলায় অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক ও সিনেমায়। অভিনয় নৈপুণ্য দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। গত কয়েক বছর এই অভিনেতা বরিশালের আঞ্চলিক ভাষাতে বেশি অভিনয় করে আসছিলেন। বরগুনা জেলার বামনায় জন্ম রুমির। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ও মা হামিদা হক। পরিবারে তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে রুমি মেজ। ভাইদের মধ্যে তিনি বড়। রুমির দুই সন্তান। মেয়ে আফরা আঞ্জুম রুজবা স্বামী ও সন্তান নিয়ে থাকেন কানাডাতে। আর ছেলে ফারদিন হক রিতম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি লেখাপড়া শেষ করেন।
রুমির অভিনয়ের শুরু থিয়েটার বেইলি রোডের ‘এখনও ক্রীতদাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে। সেটা ১৯৮৮ সালে। একই বছর ‘কোন কাননের ফুল’ নাটকের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক হয় তার। টেলিভিশনের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সিনেমায়ও। ২০০৯ সালে ‘দরিয়াপাড়ের দৌলতি’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর থেকে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হলো- সাজেশন সেলিম, বোকাসোকা তিনজন, মেকআপ ম্যান, ঢাকা টু বরিশাল, ঢাকা মেট্রো লাভ, বাপ বেটা দৌড়ের উপর, আমেরিকান সাহেব, জার্নি বাই বাস, বাকির নাম ফাঁকি, রতনে রতন চিনে, আকাশ চুরি, চৈতা পাগল, জীবনের অলিগলি, মেঘে ঢাকা শহর ইত্যাদি।
সূত্র:আমাদেরসময়