জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ মাধবপুর উপজেলা পরিষদ
নাহিদ মিয়া, মাধবপুর প্রতিনিধি
দুমাস পরেই চতুর্থ দফায় ১ জুন মাধবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্টিত হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারন মানুষের তেমন কোন আগ্রহ নেই। এর কারন হচ্ছে গত ১০ বছরে মাধবপুর উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা জনগনের কল্যাণে কোন অবদান রাখতে পারেনি।
উপজেলা পরিষদের যোগাযোগ, রাস্তাঘাট, কৃষি সেচ আইনশৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, যুব ও ক্রীড়া, সমাজকল্যান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সহ ১৭ স্থায়ী কমিটি রয়েছে। এসব স্থায়ী কমিটিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যানকে প্রধান করে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। কিন্তু মাধবপুরে এসব কমিটি শুধু কাগজে কলমে। স্থায়ী কমিটির উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান এবং উপজেলা পরিষদের দপ্তর প্রধানদের নিয়ে কয়েক মাস অন্তর অন্তর মাধবপুর উপজেলার জনগনের সমস্যা শনাক্ত করে এগুলো বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও কার্যত কোন সভা করা হয়নি।
মাধবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলা সড়ক, রেল ও নৌ পথ সমৃদ্ধ উন্নত যোগাযোগের একটি প্রশাসনিক উপজেলা। ঐতিহ্য এবং ব্যবসায়িক অঞ্চল হিসেবে এর রয়েছে বিশাল সুনাম।তিন লাখ ৯১ হাজার ভোটারের ২৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলার জনগণ পাচ্ছে না উপজেলা পরিষদের সেবা।১৯৮৫-২০২৪ পর্যন্ত মোট ৩৮ বছরে মধ্যে মাত্র ১০ বছর দায়িত্ব ছিল মনিরুল বর চৌধুরী এবং জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম। বাকি ২৮ বছরই এ পরিষদের দায়িত্ব সায়হাম পরিবারের হাতে। অর্থবিত্তে এবং ক্ষমতায় অনেক দাপটে হওয়ায় এ পরিবারের হাত থেকে কেউ এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদটি নিতে পারছে না।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম একবার চেয়ারম্যান হলেও তাদের ষড়যন্ত্র এবং অর্থ বৃত্তের নিকট টিকে থাকতে পারেনি।
বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নৌকা মার্কা নিয়ে তার সাথে প্রার্থী হলেও অর্থবৃত্ত এবং ষড়যন্ত্রের নিকট পরাজিত হয়েছে। আপন বড় ভাই কায়সার যুদ্ধাপরাধী রাজাকার হিসেবে ফাঁসির দন্ড মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। আরেক ভাই কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নেতা এবং জেলা সভাপতি।
জানা যায়, প্রতিটি নির্বাচনে বিশাল পরিমাণ টাকা খরচ করে সায়হাম পরিবার তার ভাই শাহজাহানকে এই পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়ে রাখে। অনেক বড় শিল্পপতি এবং ঢাকায় বসবাস করার কারণে জনগণ তার সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারে না। জনসাধারণ কোন কাজে গেলে তিনি বলে দল ক্ষমতায় নাই আমার কথা কেউ শোনে না। এসব কথা বলে সাধারণ জনগণকে দূরে রাখে। কিন্তু সায়হাম পরিবারের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা তিনি ভোগ করেন।উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি কাজে লাগিয়ে নিজের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা, সুবিধাজনক ব্যবসা, জায়গা সম্পত্তির সংরক্ষণ এবং অন্যান্য সুবিধা তিনি ঠিকই ভোগ করছেন। অনেকে মনে করেন তিনি দীর্ঘদিন এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকায় এটি এখন জামাত বিএনপির নীতি নির্ধারণ কেন্দ্র স্থলে পরিণত হয়েছে । সামাজিক বিচার-আচার, অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য বিষয়ে সম্পৃক্ত না হওয়ায় উপজেলার মামলা মোকাদ্দামা বৃদ্ধি পেয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে।রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম ৭ই মার্চ, ১৭ মার্চ, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৫ আগস্ট শোক দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অংশগ্রহণ করেন না তিনি।দিবসগুলোতে অংশ গ্রহণ বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মজিব উদ্দিন তালুকদার ওয়াসিম বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জাতীয় দিবস গুলোতে অংশ গ্রহণ করেন না এটি আমাদের জন্য কলঙ্ক। তাকে বার বার অনুরোধ করেছি তিনি অংশ গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা হলে যেন আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি আমাদের কোনো দায়িত্ব দেন নি।
আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গভীর ভাবে লক্ষ করেছি তিনি জাতীয় দিবসে অংশ গ্রহণ করেন না। তিনি আরও বলেন জাতীয় প্রোগ্রাম এড়িয়ে চলেন। উপজেলায় বিভিন্ন জাতীয় প্রোগ্রামে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি দেখে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আরও জানা যায়, তার পরিষদেই দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করে জেল খেটেছেন বিএনপির আরেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী কাসেদ। বর্তমানে মাত্র দুইজন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান বাকি চেয়ারম্যান বিএনপি প্রার্থী এমনকি পৌরসভার মেয়র বিএনপির।
মাধবপুর উপজেলা পরিষদের দুবার নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এডঃ সুফিয়া আক্তার হেলেন বলেন, মাধবপুর উপজেলা পরিষদের ১৭টি স্থায়ী কমিটি রয়েছে। এসব স্থায়ী কমিটি সভাপতি হলেন দুজন ভাইস চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের সরকারি দপ্তরের প্রধানরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সচিব। দুমাস অন্তর অন্তর স্থায়ী কমিটির সভায় উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো মাসিক সভায় উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু স্থায়ী কমিটির কোন সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানদের টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিপি প্রকল্প থেকে কোন বরাদ্ধ দেওয়া হয়না। যেকারনে জনগনের উপকার করা সত্বেও কোন কোন উপকার করা যায়নি। মাধবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ শাহজাহান বলেন, গত ১০ বছরে মাধবপুর উপজেলার উন্নয়নে চেষ্টার কোন ক্রুটি ছিলনা। মানুষের আশা আকাঙ্খা পুরন করতে সক্ষম হয়েছি।