জামালগঞ্জে শতবর্ষী চরক পূজায় হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা
মো. বায়েজীদ বিন ওয়াহিদ, জামালগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে শতবর্ষী চরক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার বিকেলে উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের ছয়হারা গ্রামের পাগনার হাওরে শত বছরের সনাতন ধর্মের ঐতিহ্যবাহী এই চরক পূজায় হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসময় চরক পূজায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দিলীপ কুমার দাস, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম জিলানী আফিন্দী রাজু, সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হক আফিন্দী, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজা আক্তার দিপু, জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো ওয়ালী উল্লাহ সরকার, সমাজকর্মী আকবর হোসেন ও যুবলীগ নেতা আবুল আজাদ।
জানাযায়, শত বছর ধরে চলে আসা এই চড়ক পূজা দেখতে আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার সনাতন ধর্মের লোকজন ছুটে আসেন। চরক পূজাকে ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজনের কাছে বিরাজ করেছে উৎসবের আমেজ। উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের নয় মৌজা এলাকার বিভিন্ন গ্রামের সনাতনধর্মের অনুসারীদের আয়োজনে পাগনার হাওরে শিব চতুর্দশীতে এই চরক পূজা উদযাপন করা হয়। এসময় মাঠের আশেপাশে প্রায় শতাধিক দোকানিরা গ্রামীন মেলা নিয়ে বসেন। লোহার রডের বড়শীর হুক মানুষের পিঠের চামড়ায় আটকিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে তান্ত্রিক মন্ত্রের সাহায্যে সেই মানুষকে চড়কিতে শুণ্যে ঘুড়ানো হয়। ছয়হারা গ্রামের পাশে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজায় এই দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন উপজেলার হাজারো ভক্তদের পদচারণায় মাঠটি কাণায় কাণায় ভরে উঠে। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সব ধর্মের লোকদের উপস্থিতি প্রমাণ করে স্বাধীনতা পরবর্তী সাম্প্রতিক সম্প্রতির মিলনমেলা যেন চড়ক পূজা ঘিরে।
আশপাশের জেলা শহর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ও অন্যান্য ধর্মের লোকজন ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা দেখতে ভীড় করেন প্রতি বছরই। এলাকার বাহিরে বসবাসরত সনাতন ধর্মের অসংখ্য লোকজন ছুটে আসেন এই পুজার আর্শীবাদ নিতে। মোহনগঞ্জ থেকে আসা পলাশ তালুকদার জানান, এটা আমাদের সনাতন ধর্মের ঐতিহ্য বহন করে। শত বছর পূর্বে থেকে এই পূজা করে আসছি। তাহিরপুর উপজেলার নিরঞ্জন রায় জানান, আমরা এই পূজা দেখতে প্রতি বছরই পরিবার নিয়ে ছুটে আসি।
এসময় ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার বলেন, হাওর এলাকার মানুষের অন্যবস্ত্র যোগানের একমাত্র ফসল বোরো ধান যাতে সুষ্ঠুভাবে ঘরে তুলতে পারে এজন্য এই পূজার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন মানুষের মনোবাসনা পূর্ণসহ অনেকের আশা আকাংখা পূর্ণ করতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই চড়ক পূজায়।
এই ব্যাপারে চড়ক পূজার প্রধান সন্যাসী চন্দ্র ধরসহ অন্যান্য সন্যাসীরা জানান, ছয়হারা গ্রামের চড়ক পূজায় ১৫ দিন যাবত একশত সন্যাসী এক কাপড়ে সন্যাসত্যাগী হয়। তারা পরিবার পরিজন থেকে আলাদা থাকা শুরু করেন। নিদিষ্ট একটি নিয়মের ভেতরে চলাফেরাসহ আহার নিদ্রা করে থাকেন।
চড়ক পূজা আয়োজক কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু তালুকদার জানান, এই পুজা প্রায় দেড়শত বছর আগ থেকে চলে আসছে। এই পূজা হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের হাজার হাজার মানুষের মিলন মেলা। প্রতি বছর এই দিনে সম্প্রতিরি বন্ধনে পরিনত হয়। আর আমাদের বিশ্বাসমতে হাওরের ধান সুষ্ঠু ভাবে গোলায় তুলতে এই পূজা করা হয়।