কোম্পানীগঞ্জে বাবলুর রহস্যজনক মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ জনতার মানববন্ধন
কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি
বাবুল ইসলাম বাবলু রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতিবাদে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বিশাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
শনিবার ১১টায় উপজেলার টুকের বাজারে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা সদরের দিকে এগিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিআইজি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মৃত বাবুল ইসলাম বাবলু (৫০) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা।
নিহতের পরিবারসূত্রে জানা যায় গত শুক্রবার ১১ এপ্রিল দিবাগত রাত সোয়া একটার সময় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মাথায় ছুরিকাঘাত এবং দুই পা ভেঙ্গে বাবুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপরই হত্যার আলামত নষ্ট করার জন্য হত্যাকারীরা ঘটনাটি দূর্ঘটনা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরদিন ভোরে স্থানীয়রা নিহতের লাশ দেখতে পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনে খবর দেন। খবর পেয়ে উদ্ধারকর্মীরা লাশ উদ্ধার করেন।
সাংবাদিক শের তারিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিতব্য মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট কামাল হোসাইন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া, উপজেলা বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান সফর মিয়া, মুরব্বি কাউয়ুম মাস্টার, মজনু মিয়া, পশ্চিম টুকের গাঁও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি মনির হোসেন, ব্লু বার্ড হাইস্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক মিজানুর রহমান, পাড়ুয়া আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের প্রভাষক বরকত উল্লাহ, তেলিখাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান, রাজনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু নসর শামিম, উপজেলা তাঁতী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক নাজিব হাসান রিসাদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি সিরাজুল হক, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আপন মিয়া। এ সময় হাজারো জনতা নিহত বাবুলের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবী জানান।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত সোয়া একটার সময় উপজেলার কাঠালবাড়ি গুচ্ছগ্রামে ইজারাবহির্ভুত স্থান থেকে বালু উত্তোলনকারীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে মর্মে বাড়ি থেকে রওয়ানা হন বাবুল ইসলাম। স্থানীয় একটি সিসিটিভি ফুটেজের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ১ টা ২৪ মিনিটের সময় থানা বাজার পয়েন্ট থেকে গুচ্ছগ্রামের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলে চেপে যাচ্ছেন তিনি। পয়েন্ট থেকে মাত্র কয়েকশত ফুট দূরে নিহতের লাশ একটি ডোবায় পরে থাকতে দেখা যায়। লাশের প্যান্টের পকেটে তার ব্যক্তিগত ফোনটি অচল অবস্থায় ছিল। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রাত তিনটা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কল দিলে তার সংযোগ পাওয়া যায়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। অথচ ভোরে তার প্যান্টের পকেটে ভেজা ও অচল অবস্থায় তার ফোনটি পাওয়া যায়। মহাসড়কের পয়েন্ট থেকে ঘটনাস্থল মাত্র এক মিনিটের রাস্তা। এই অল্প সময়ের রাস্তা পার হতে বাবলুর দেরঘন্টা সময় লেগেছিল। এই সময়টুকু তিনি কি করেছেন তা বের করতে পারলেই হত্যার রহস্য বেধ করা সম্ভব হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, আনুমানিক রাত দেড়টা থেকে তিনটার মধ্যবর্তী কোনো এক সময় বাবুল ইসলাম বাবলু মিয়াকে হত্যা করে রাস্তার পাশে ডোবায় লাশ ফেলে রাখে হত্যাকারীরা। এ সময় লাশের পাশেই অক্ষতবস্থায় নিহতের মোটরসাইকেলটি একটি লাঠিম গাছের সাথে ধাক্কা লাগানো অবস্থায় ছিল। মোটরসাইকেল রাখার স্থান থেকে প্রায় ১০ ফুট পেছনে ডোবায় নিহতের লাশ পরে থাকায় রহস্যের দানা বাধে।
নিহতের মামা এডভোকেট কামাল হোসাইন বলেন, ঘটনার রাত বাবুলকে ফোনে ডেকে নিয়ে যায় এক লোক। ফোনে কে ডেকে নিয়েছে সে ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারলেই রহস্যের জট খুলবে।
নিহতের স্ত্রী আছমা জানান, যাওয়ার সময় আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বলেন কাঠাল বাড়ি গুচ্ছ গ্রামে বালুর সাইটে ঝামেলা হয়েছে। সেখানে যাচ্ছি। এরপর আর তিনি ফিরে আসেন নি?
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আছমা বেগম থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। তবে থানা সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় একটি ইউডি মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রফিকুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে মূল রহস্য উদঘাটন হবে।