পুরুষের স্পর্শকাতর রোগ…

ডা. জাহেদ পারভেজ
ইরেকটাইল ডিজফাংশনজনিত ত্রুটিকে সহজ ভাষায় বলা হয় যৌন অক্ষমতা বা দুর্বলতা। পুরুষদের জন্য এটি খুব স্পর্শকাতর বিষয়। যৌনমিলনের পূর্বশর্ত পুরুষাঙ্গের যথাযথ উত্থান। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, মিলনের আগে লিঙ্গের পর্যাপ্ত উত্থান ঘটছে না বা ঘটলেও বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে পরিপূর্ণ ও সফল যৌনমিলন সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ধরনের সমস্যায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন দম্পতি। এমনকি সংসার ভাঙার উপক্রম হয়ে পড়ে। সংকোচ ও দ্বিধায় চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে কবিরাজি হারবাল বা টোটকা চিকিৎসা গ্রহণ করে রোগটি আরও জটিল করে তোলেন, যা মোটেও উচিত নয়।
যা হয় : ইরেকটাইল ডিজফাংশনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত মস্তিষ্ক, হরমোন, আবেগ, স্নায়ু, পেশি ও রক্ত সংবহনতন্ত্রের। এগুলোর যে-কোনো একটির সমস্যা বা অস্বাভাবিকতায় ইরেকটাইল ডিজফাংশন হতে পারে। এছাড়া মানসিক চাপ, বিষণœতাও রোগটির জন্য দায়ী। এতে শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
যখন বুঝবেন : লিঙ্গের যথাযথ উত্থান ঘটাতে না পারা, লিঙ্গের উত্থান যথেষ্ট সময় ধরে রাখতে না পারা, যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া বা কখনই জাগ্রত না হওয়া, দ্রুত বীর্যপাত অথবা দেরিতে বীর্যপাত। পর্যাপ্ত উত্তেজনা সত্ত্বেও অর্গাজম লাভে ব্যর্থ হওয়া। এছাড়া মনস্তাত্ত্বিক চাপ বা অবসাদ, দুশ্চিন্তা সম্পর্কের অবনতি, আত্মবিশ্বাসহীনতা ও ভীতি ইত্যাদি। লিঙ্গের উত্থানের পেছনে মস্তিষ্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্ক যদি স্বাভাবিক না থাকে, এ প্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়ে। এছাড়া পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরুষাঙ্গে রক্ত চলাচল ও স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রম এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।
যা করবেন : প্রথম কথা হচ্ছে, হতাশা বা সংকোচ বোধ করা যাবে না। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় স্রেফ মানসিক চাপমুক্ত হলে বা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, পুষ্টিকর খাবার খেলে কিছুটা উন্নতি সম্ভব। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এসব রোগে স্নায়ু ও রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মিলনে সমস্যা হয়। ধূমপান পুরোপুরি বর্জন করতে হবে। অ্যালকোহল গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। ওজন ঠিক রাখতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। এক্ষেত্রে সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ জরুরি। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো ও বিশ্রাম নেওয়া, মানসিক চাপ, অবসাদ, দুশ্চিন্তা বা অন্যান্য সমস্যা অবহেলা করা যাবে না। বেশির ভাগ পুরুষের ক্ষেত্রে ইরেকটাইল ডিজফাংশন দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমস্যা নয়; সাময়িক জটিলতামাত্র। এ সমস্যা নিরাময়ে অনুমোদিত ওষুধ বা ইনজেকশন ও সার্জারি ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবন একটাই। তা এত গুরুত্বহীন ভেবে বসে থাকলে চলবে না। মধুময় করে তুলতে হবে। পরিপূর্ণ ভালো থাকতে হবে।
লেখক : চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশন বিশেষজ্ঞ