স্মৃতিভ্রম যে কারণে হয়
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেব নাথ
ব্রেইনের সেরেব্রাল কর্টেক্স নামক স্থানে যদি কোনো মানুষের বুদ্ধিমত্তা, আচরণ ও ব্যক্তিত্ত্বের পরিবর্তন হয়ে পড়ে, তাকেই বলা হয় ডিমেনশিয়া বা মেমরি লস। সাধারণত সেরেব্রাল কর্টেক্স ও হিপোকেম্পাস নামক স্থানের অসুস্থতার জন্য স্মৃতিশক্তি কমে যায়। রোগটি যে-কোনো বয়সে হতে পারে। তবে ষাট বা তার বেশি বয়সী মানুষের বেশি হয়ে থাকে। চল্লিশ বছর বয়সের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
ডিমেনশিয়া অনেকগুলো রোগের লক্ষণে পাওয়া যায়। যদি ৬৫ বছরের কম বয়সে কেউ স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন, তাকে বলে প্রিসেনাইল ডিমেনশিয়া। মিনি মেন্টাল স্টেট পরীক্ষা করে ডিমেনশিয়া রোগ নির্ণয় করা যায়। রোগের ইতিহাস এবং রোগীকে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। রোগের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে এ রোগকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনÑ একিউট, সাবএকিউট ও ক্রনিক স্টেইজ। উৎপত্তি অনুসারে আরও দুভাবে ভাগ করা যায়। যেমন- কটিকেল ও সাবকটিকেল ডিমেনশিয়া। এর মধ্যে অন্যতম আলজেইমারস ডিজিজ। এতে রোগী ক্রমে খারাপের দিকে যায়। অবশ্য রোগটি সম্পূর্ণ প্রকাশ পেতে কয়েক বছর লাগে। আলজেইমারসে নার্ভ সেলে এমইলয়েড জমে ব্রেইন ফাংশনে প্রভাব ফেলে। এ রোগের রোগী খুব দ্রুত খারাপ অবস্থার দিকে যায়। ব্রেইনের অনেক স্থানে বারবার ইনফার্কশন বা রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয়ে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। একে বলে মাল্টি ইনফার্কশন ডিমেনশিয়া। রোগের প্রধান কারণ স্ট্রোক, আলজেইমারস ডিজিজ, ব্রেইন টিউমর, মাল্টিপল স্কেরোসিস, হেড ইনজুরি, ব্রেইনে পানি জমা বা হাইড্রোফেকালাস, মদ্যপান, সিফিলিস, এইডস ইত্যাদি, বিটামিন-বি১২ ও হিমোগ্লোবিনের অভাব, দীর্ঘক্ষণ ব্রেইন অক্সিজেন সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হওয়া ইত্যাদি।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা : সিটি স্ক্যান অব ব্রেইন, সিবিসি, ইএসআর, সিরাম ইউরিয়া, সিরাম ইলেকট্রোলাইট, সিরাম ক্যালসিয়াম, থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি১২, এক্স-রে চেস্ট, ইসিজি, এইচআইভি চেস্ট ইত্যাদি করতে হবে।
চিকিৎসা : যেসব কারণে হয়, তার চিকিৎসা করতে হবে। ডোনেপেঝিল, রিভাসটিগমিন ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। ব্রেইন টিউমার, হইড্রোকেফালাস, ক্রনিক সাবডুরাল হেমাটোমা রোগীর ও হেড ইনজুরি অপারেশন প্রয়োজন হলে নিউরোসার্জন দিয়ে অপারেশন করতে হবে।
বি১২, থায়ায়ামিন দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। পার্কিনসন্স ডিজিজে ডিমেনশিয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে পার্কিনসন্স ডিজিজের চিকিৎসা করতে হবে। মাল্টি ইনফার্কশন ডিমেনশিয়ায় কলেস্টেরল কমানোর ওষুধ, রক্তসঞ্চালন বাড়ানোর ওষুধ (এসপিরিন) দেওয়া যেতে পারে। নরমাল প্রেসার, হইড্রোকেফালাস রোগীর ডিমেনশিয়া হলে হাঁটতে গেলে পড়ে যাবে ও প্রস্রাব-পায়াখানায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ভেন্ট্রিকুলো পেরিটনিয়াল সান্ট দিলে ভালো হয়। মোটর নিউরন ডিজিজ ডিমেনশিয়া হতে পারে, যার কোনো চিকিৎসা নেই। তবে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম, ধূমপান, মদ্যপান বর্জন, সুষম খাবার, ফ্রেসনেস লাইফ, ভেজিটেবল, দেশীয় ফল, মাছ খেলে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করা যায়।
লেখক : অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়