মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে খোয়াই নদীর বাঁধে অভিযান: নামাত্র অর্থদণ্ড

নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে অবৈধভাবে নদীর উপরিভাগের মাটি কাটার অপরাধে রাজু মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রাজু মিয়া শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পুর্ব লেঞ্জাপাড়া গ্রামের জলিল মিয়ার পুত্র।
রোববার (২৮ এপ্রিল ) দুপুরে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহিদ ভূঞায় নেতৃত্বে উপজেলার পূর্ব লেঞ্জাপাড়া খোয়াই নদীর বাঁধে অভিযান পরিচালনা করে এ জরিমানা আদায় করা হয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহিদ ভূঞা রাতে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি মাটি খেকোরা আলাপুর খোয়াই নদীর চরে অবৈধভাবে মাটি কাটছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ট্রাক্টর বোঝাই মাটি সহ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অমান্য করে নির্ধারিত সীমানার বাহিরে নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় ওই ট্রাক্টর চালককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় । কিন্তু মূল হোতারা অধরা। পরে মাটি বোঝাইকৃত অবৈধ ট্রাক্টর ছেড়ে দেয়া হয়।
এরআগে গত ২৪ এপ্রিল জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে চর খুবলে নিচ্ছে ভেকুর ব্লেড শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে ওই সংবাদের সূত্র ধরে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় রাতদিন শায়েস্তাগঞ্জের লেঞ্জাপাড়া, আলাপুর নদীর বাঁধ ক্ষতবিক্ষত করে খোয়াই নদীর চরের মাটি লোট করে শক্তিশালী সিন্ডিকেট । শায়েস্তাগঞ্জ সহ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্কর, কলিমগর সহ প্রায় পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে অবৈধভাবে মাসব্যাপী নদীর চর কেটে তোলা এ মাটি বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা। কিন্তু রহস্য জনক এ ব্যাপারে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানান, মাটি খেকোদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত নদীর পাড় ও নদীর চর । কখনও রাতে কখনও দিনে খননযন্ত্র ভেকু দিয়ে চলছে মাটি কাটার ধুম। তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের নামমাত্র অভিযান চালালেও মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না বলে দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা, লুৎফুর রহমান,জামিল, সুজন, কাসেম, সহ স্থানীয়রা জানান উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালালে কিছু সময়ের জন্য মাটিকাটা বন্ধ থাকে। তবে প্রশাসনের লোকজন সরে গেলেই শুরু হয় ফের মাটি লুটপাট। মাটি লুটের কারণে প্রতিবছর নদীভাঙন হয় এবং আগামীতেও ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়কগুলো মাটিভর্তি শত শত ড্রাম ট্রাক চলাচলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব ট্রাক এবং ভেকুর শব্দে মানুষ রাতে ঘুমাতে পারেন না। বাধা দিলে হামলা-মামলায় নাজেহাল করা হয় সাধারণ মানুষকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠুকে দেওয়া হয় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা। নদীর দু’পাড়ে দিনরাত চলছে মাটি কাটার অবৈধ যজ্ঞ। সর্বনাশ করা হচ্ছে ফসলি জমির। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান8 চালালেও তা যথেষ্ট নয়। নির্বিচারে মাটি কেটে নেওয়ায় খোয়াই নদীর শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন লেঞ্জাপাড়া, আলাপুর এবং হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর এলাকায় নদীর চরে ফসলি জমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। মাটিখেকোরা বাঁধের কাছে তৈরি করেছে পুকুরের মতো বড় বড় গর্ত। ফলে বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ওইসব এলাকা। এদিকে নদীর বাধের বেহাল অবস্থা হলেও পাউবোর নিরব ভূমিকায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।