নির্বাচনে মাঠে নেই বিএনপি জামায়াত
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আ.লীগের একাধিক নেতা
মিসবাহ উদ্দিন, বিয়ানীবাজার
এবার বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক নেতা এ যেন ঘরের ভিতর ঘর, বাইরে কোন কোলাহল নেই। গ্রামে-গঞ্জে নেই উৎসবের আমেজ। নির্বাচনে লড়ছেন চেয়ারম্যানের চেয়ারের জন্য। একই অবস্থা ভাইস চেয়ারম্যান-মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রেও। বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের পরিবেশ এমন। এ উপজেলায় কেবল আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কেউ নেই।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ এরই মধ্যে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে উঠান বৈঠক থেকে মতবিনিময় এলাকার ঐক্য করে চলছে বিরামহীন প্রচারণা ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা। চলমান ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিয়ানীবাজারে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্য সবক’টি রাজনৈতিক দল। আগামী ২৯শে মে বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানকার ৮৯টি কেন্দ্রে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার ভোটার ভোট প্রদান করবেন। তবে ভোটারের সংখ্যা এত বেশী হলেও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন প্রার্থীরা।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি, জামাতে ইসলাম, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জেএসডি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপসহ আরও বেশ কয়েকটি দল অংশ নিচ্ছেনা। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান কিংবা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও তাদের দলীয় সমর্থক কোন প্রার্থী নেই।
বিয়ানীবাজার সুজন’র সভাপতি এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন জানান, যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, সেসব দল ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি। সরকারের ঘনিষ্ঠ ও নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাত ছিল—এমন দলগুলোও অংশগ্রহণ করেনি। বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের এখানে কেউ প্রার্থী হয়নি। তাছাড়া নির্বাচনে আগ্রহী অনেককে আমরা ফিরিয়ে এনেছি।
স্থানীয়ভাবে জামাতে ইসলামীর আমির মাওলানা ফয়জুল ইসলাম নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রচারণা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনিও নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। মাওলানা ফয়জুল ইসলাম বলেন, দেশে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। তাই আমরা অগণতান্ত্রিক কোন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছিনা।
সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা ১৫ জন। এরমধ্যে কেবল একজন আওয়ামীলীগ ঘরানার বাইরে। বাকী সবাই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি শিব্বীর আহমদও নির্বাচন করতে চেষ্টা করেছেন। তবে দলীয় সংকেত না পাওয়ায় তিনিও পিছু হটেন।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ মে বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফেরাতে কৌশলী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলীয় প্রতীক ছাড়াই অংশ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কেবল দলীয় প্রতীকই নয়, একক প্রার্থী বাছাইয়েও তারা আগ্রহী নয়। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী প্রার্থী সহ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা ও নেই পিছিয়ে চলছে জুড়সরে প্রচারনা
প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগকে নানা সংকটে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, যখন থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করা শুরু হয়েছে, মূলত তখন থেকেই সংকট দানা বেঁধেছে। সেটা কাটিয়ে না উঠতেই আবার আগের পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ায় সংকট না কমে বরং ঘনীভূত হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সভাপতি আহমদ হোসেন বাবুল বলেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো লক্ষণ। নিজেকে যাচাই করার সুযোগ। তবে অপর সহসভাপতি ছালেহ আহমদ বাবুল বলেন, দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন দলের জন্য ‘উপজ্বালা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এখন প্রতীক বরাদ্দ ছাড়া উপজেলা নির্বাচন করার সিদ্ধান্তও একই ‘উপজ্বালার’ মুখোমুখি ফেলে দেবে দলকে। একই আশঙ্কা ব্যক্ত করে মোল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের আইন মূলত ওলট-পালট করে দিয়েছে তৃণমূলের রাজনীতি। এতে করে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচন করতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। চেয়ারম্যান পদে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউওর রহমান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, মোহাম্মাদ জাকির হোসেন, হাজী আব্দুল বারী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাসেম পল্লব, জামাল হোসেন এ ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের খণ্ডকালীন প্রভাষক, সাংবাদিক মো. জহির উদ্দিন ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. জাকির হোসেন সুমন। তারাও নির্বাচনী মাঠ চষেবেড়াচ্ছেন। প্রভাষক জহির উদ্দিন বলেন, আমি শিক্ষক, সে কারণে আমার সমর্থনে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী নির্বাচনের আগে মাঠে নামবেন এবং প্রকাশ্যে কাজ করবেন।
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব বলেন, দলীয় সভানেত্রী নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা এবং যোগ্যতা দেখার জন্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই তৃণমূলের কর্মীরা তাদের পছন্দের যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে বাধ্য সৃষ্টি হবে না। ভোটাররা আমাকে নির্বাচন করতে চাপ দিচ্ছেন। তাদের কথা মূল্য দিতেই প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল হক রুনু, সায়দুল ইসলাম, লায়ন সুহেল রাসেদ, উলামা মাশায়েখ মনোনিত মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, জসিম উদ্দিন, পলাশ আফজাল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খালেদুর রহমান ও মহিলা আওয়ামী নেতৃ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসিনা আক্তার, জাসমিন নাহার,রুমানা আফরোজ জাহানা বেগম সাদিয়া, সালমা রহমান,শিক্ষিকা শারমিন আক্তার নির্বাচনের জন্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।