আপসের শর্তে নবীগঞ্জ ঘোলডুবা স্কুলের অফিস সহকারী পারভেজের জামিন
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
স্ত্রীর সঙ্গে আপসের শর্তে নবীগঞ্জ ঘোলডুবা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মাসুম পারভেজ গ্রেপ্তারের এক ১৪ দিনের মাথায় স্ত্রীর করা যৌতুক মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি।
রবিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক স্ত্রীর সঙ্গে আপসের শর্তে আগামী ধার্য্য তারিখ পর্যন্ত মাসুমের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। ওই সময়ের মধ্যে তাকে তার স্ত্রী আনিনার সঙ্গে আপস করতে বলা হয়েছে বলে বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শফিউল আলম জানিয়েছেন।
এর আগে ২১ এপ্রিল রবিবার দিবাগত-রাত নবীগঞ্জ উপজেলার ঘোলডুবা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পারভেজ নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কৈলং গ্রামের মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে। সে নবীগঞ্জ ঘোলডুবা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হিসেবে বেশদিন ধরে কর্মরত। এ সুবাধে নবীগঞ্জে তার অবস্থান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৭ সেপ্টেম্বর মাসুম পারভেজের সঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা গ্রামের কয়রুল মিয়ার মেয়ে আমিনার বিয়ে হয়। বিবাহের পর ঘোলডুবা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারীর চাকুরী নেন পারভেজ। এ সুবাধে নবীগঞ্জ উপজেলার গরু বাজার রাস্তায় ব্রাক অফিসের পাশে জনৈক ইলিয়াছ মিয়ার বাসায় থেকে সুখের সংসার শুরু করেন। তাঁদের ঘরে ফারিহা জাহান মিথি (৮) ও মুনতাহা জাহান রীতি (৩) দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে স্বামী মাসুম পারভেজ স্ত্রী আমিনাকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। গেল বছরের নির্যাতনের ঘটনায় বিগত ২৭ ফেব্রুয়ারী নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একখানা অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পারভেজ কোন সায় না দিলে নিরুপায় হয়ে ২০২৩ সালের ২১ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪ লাখ টাকা যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন।পরবর্তীতে যৌতুক নিরোধ মামলা চলাকালীন সময়ে আপোষের কথা বলে ঘোলডুবা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ আব্দুর রকিব ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি ও সহকারী শিক্ষক মোস্তফা আল হোসাইনের মধ্যস্থতায় স্ত্রীর দায়েরী মামলা ধার্য তারিখে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনাসহ আপোষের মাধ্যমে স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে ঘর সংসার করবে মর্মে আদালতে আপোষের শর্তে জামিন নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয় এবং ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিক পারভেজকে শাসাইয়া দেন। এরপরও বন্ধ হয়নি নির্যাতন।
পূনরায় চাকুরীর পাশাপাশি ব্যবসা করার জন্য আপোষ মিমাংসার ১০ মাসের মাতায় দ্বিতীয় দফা পারভেজ আবারও ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী আমিনাকে বেদম মারপিট করেন8 এবং পুনরায় আমিনা বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাসুম পারভেজের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
বিচারক মামলা আমলে নিয়ে মাসুম পারভেজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ইস্যু করেন। গ্রেপ্তারী পরোয়া জারির পর পারভেজ পালিয়ে যায় তার নিজ বাড়িতে। অবশেষে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নিজ কর্মস্থল নবীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন।
মামলার আইনজীবী এডভোকেট শফিউল আলমo আজাদ জানান, বাদিনীকে যৌতুকের জন্য দ্বিতীয়বার নির্যাতন করায় এবং আদালতের বিচারক স্বামী মাসুম পারভেজের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় বিচারকের আদেশে গ্রেপ্তার হন। পূনরায় আপোষ শর্তে জামিন দেয়া হয়েছে।
মামলার বাদিনী আমিনা বেগম জানান, আমার সুখের জন্য আমার অসহায় পিতা মাতা জমি জমা বিক্রি করে তাকে বিয়ের সময় ফার্নিচার সহ প্রায় ৪ লাখ টাকার উপঢৌকন দেন। বিয়ের পর আমার স্বামীর আসল রূপ আমার কাছে প্রকাশ পায়। আমাকে যৌতুকের জন্য মানুষিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। আমার দুটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে যৌতুক লোভী স্বামী। নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। আমি আমার সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে নির্যাতন সহ্য করে আসছি। কিন্তু ফের টাকা না দেয়ার অজুহাতে মোবাইল ফোনে জুয়া ও পরনারীতে আসক্ত হইয়া পড়ে এবং প্রায় সময়ই গভীর রাতে বাড়িতে ফিরে আমাকে যৌতুকের দাবীতে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করে। এমনকি স্কুলের ছাত্রীদের সাথে অসামাজিক কার্যকলাপের বিভিন্ন ভিডিও করে তাদেরকে ব্লাকমেইল করে যৌন-সম্পর্ককে লিপ্ত হয়।