‘পুরো ফিলিস্তিনকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে’
দৈনিকসিলেটডেস্ক
পুরো ফিলিস্তিনকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। আজ সোমবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে করা সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। সমাবেশের আগে বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনটি।
আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য কলেজ থেকে আগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। ফিলিস্তিনের পতাকা ও বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে মধুর ক্যান্টিন থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার হয়ে পদযাত্রা নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের মিলিত হন নেতাকর্মীরা। তখন হাজারো কণ্ঠে ’জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ’ফ্রি, ফ্রি, প্যালেস্টাইন’, ’ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, জেনোসাইড নো মোর’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সী, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ প্রভৃতি স্লোগানে মুখরিত হয় রাজু ভাস্কর্য।
সংহতি সমাবেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের উদ্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যারা বিভিন্ন সময়ে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার বিপক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছে। সেই দেশের তারুণ্য আজ প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার পক্ষে হ্যাঁ বলেছে। জাতিসংঘে সেই দেশের সরকার যতবার ‘‘নো’’, ‘‘নো’’ বলেছে। সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার পক্ষে তার চেয়ে অনেক গুণ উচ্চস্বরে ‘‘ইয়েস’’, ‘‘ইয়েস’’ বলেছে।’
ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় কীভাবে মানবতাবিরোধী আক্রমণ করা হয়! দশকের পর দশক গাজাকে যুদ্ধনগরীতে পরিণত করা হয়েছে। শুধু গাজাকে নয়, পুরো ফিলিস্তিনকে আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে। যারা গণতন্ত্রের মোড়ল, বাক্-স্বাধীনতার সার্টিফিকেট দেয়, গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিকের মাপকাঠি নির্ধারণ করে। আমরা দেখেছি কীভাবে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।’
বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ অন্য নেতারা। ছবি: আমাদের সময়
তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আন্দোলন চলমান রয়েছে। সেখানে আড়াই হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলন করার জন্য আজ শিক্ষার্থীদের ওপর সাসপেনশন নেমে এসেছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী মাইমুনা ইসলাম নুহা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসাইন্সের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী, শুধু প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা পক্ষে কথা বলার জন্য আজকে তাকে সাসপেনশনের আওতায় আনা হয়েছে। সাউদার্ন ইলিনয়েস শিক্ষক স্টিভ তামারি শিক্ষার্থীদের পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য পাঁজরের তার হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর যারা নির্মম নির্যাতন পরিচালনা করে, তাদের প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই।’
সমাবেশে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’’ জাতির পিতার নিজহাতে গড়া সংগঠনটিও পৃথিবীর সব অত্যাচারিত-নির্যাতিত-নিপিড়ীত মানুষের পক্ষে থাকবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘ফিলিস্তিন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের বন্ধুত্ব ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তন উদ্বোধন করেছিলেন ইয়াসির আরাফাত।’
তিনি বলেন, ‘আজকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু করেছে। আর নগ্নভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটির মদদ দিচ্ছে। আমরা সারা বিশ্বের ছাত্রসমাজ এই গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আহ্বান জানাচ্ছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘আমেরিকার স্থানীয় শিক্ষার্থী হয়ে যারা এই আন্দোলন অংশগ্রহণ করেছে, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আরও ধন্যবাদ জানাই, ইসরায়েলের ভেতরে থেকেও যারা বারবার হামলার প্রতিবাদ করছে। তারাই সত্য ও ন্যায়ের পথে। তাদের আদর্শ ও আমাদের আদর্শ এক। পৃথিবীর সব নির্যাতিত মানুষের পক্ষে যারা কথা বলবে, তারা আমাদের ভাই।’
সংহতি সমাবেশের আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম (বাপ্পি), সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু।