যে কারণে ঘাড়ে ব্যথার হয়
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ
মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে ঘাড় একটি। এই অঙ্গটিতে নানা কারণে ব্যথা হতে পারে এবং এই ব্যথা যে কোনো বয়সী মানুষেরই হতে পারে। তবে কম বয়সীদের এই ব্যথা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ আঘাত। যদি কেউ দুর্ঘটনাজনিত কারণে ঘাড়ে আঘাত পেয়ে থাকেন বা ভুল ভঙ্গিতে ঘুমান অথবা কোনো ভারী জিনিস উত্তোলন করেন, তখন দেখা দিতে পারে অসহনীয় ঘাড়ব্যথা। রোগটি শীতকালে রোগীদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়ে থাকে। তবে গরমকালেও যে রোগীরা স্বস্তিতে থাকেন, বিষয়টি তেমন নয়। ঘাড়ব্যথা যে কোনো সময়ের জন্যই অত্যন্ত কষ্টকর। ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ভারী ব্যাগ বহন করে থাকে। ইদানীং বড়রাও ল্যাপটপসহ অনেক ভারী ব্যাগ বহন করেন। আর এ কারণে কম বয়সীদের ঘাড়ে ব্যথা দেখা দিয়ে থাকে। এতে মেরুদণ্ডের মারাত্মক ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে।
ঘাড়ে ব্যথা সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব বয়সী বয়সী মানুষের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। তাদের কাছে এটি খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। মূলত বয়স চল্লিশের পর থেকেই মেরুদণ্ডের হাড়ে প্রথম ক্ষয় শুরু হয়। পরে তাতে ক্যালসিয়াম জমে কাঁটার মতো হাড় বৃদ্ধি পেতে থাকে। বৃদ্ধিজনিত এই সমস্যার নাম স্পন্ডাইলোসিস। সমস্যা বাড়তে থাকলে নার্ভের চলার পথে ব্যাপক চাপ পড়ে। রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়। আর নার্ভের রক্তসঞ্চালন কমে গেলে তাতে মানবশরীরের অন্যান্য স্নায়ুতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে থাকে। স্নায়ুরজ্জুতে প্রচণ্ড চাপ পড়ার পরিণতিতে রোগী ঘাড়ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এই ব্যথা ক্রমে ঘাড় ছাড়িয়ে হাতে চলে যেতে থাকে। আর তাতে হাত-পা ঝিনঝিন, রিনরিন করে। অনেক সময় হাত-পা অবশ হয়ে আসে। রোগটি পুরনো হয়ে গেলে রোগীর হাত-পায়ে প্যারালাইসিস হতে পারে। প্রস্রাব-পায়খানা আটকে যেতে পারে। অনেক সময় রোগী প্রস্রাব-পায়খানা ধরে রাখতে পারেন না। শুধু তা-ই নয়, যৌন সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করে।
ঘাড়ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় : বয়স চল্লিশ হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক ব্যক্তিকে এ রোগটির ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। অনেকে লম্বা ট্রাফিক জ্যামে বসে গাড়িতে ঘুমান। এটা কোনো ভালো অভ্যাস নয়। গাড়িতে ঘুম এলে অবশ্যই ঘাড়ে সার্ভাইক্যাল কলার ব্যবহার করতে হবে। নিচু বালিশ ব্যবহার করতে হবে। ঘুমাতে হবে শক্ত বিছানায়। নিয়মিত ঘাড়ের ব্যায়াম করতে হবে। উপুড় হয়ে ঘুমানো উচিত নয়। ঘাড়ে ভারী জিনিস নেওয়া যাবে না। ঘাড়ব্যথার গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু কারণ রয়েছে। তবে ঘাড়ে ব্যথা শুরু হয়ে গেলে রোগটির সঠিক কারণ নির্ণয় করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। সাধারণত ঘাড়ব্যথার প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা হলো- ঘাড়ে কলার পরা, ব্যথার ওষুধ ভরা পেটে খাওয়া, সঙ্গে ফিজিওথেরাপি। কোনো কারণে রোগ থেকে মুক্তি না পাওয়া গেলে ঘাড়ে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
লেখক : ব্রেইন টিউমার, স্পাইন সার্জারি, শিশু নিউরো সার্জারিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত