করোনার টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে যে আশঙ্কা
অধ্যাপক ডা: আহাম্মদ আলী
সাম্প্রতিককালে আমরা সবাই বড় একটি মহামারীর ভয়াবহতা অনুধাবন করেছি। আর তা হলো, নিঃসন্দেহে ‘করোনা’। অনেকের ধারনা, করোনা পৃথিবী থেকে পুরাপুরি নিঃশেষ হয়ে চলে গেছে। এটা একটি ভুল ধারনা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন মাত্রায় করোনা এখনো বিরাজমান। ইদানিং নতুন একটি সমস্যা হল, শরীরে নতুন কোন স্বাস্থ্য সমস্যা হলেই অনেকে ভাবছেন এটা করোনা অথবা করোনার টিকা নেবার কারনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিষয়টি অনেকটা মানসিক হলেও, শারীরিক সমস্যা যে, একেবারেই জড়িত নাই তা কিন্তু সবার বেলায় নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। শুরুতে করোনার বিস্তৃতি,ভয়াবহতা ও আচমকা আগমন সমগ্র পৃথিবীর সকল অঞ্চলের মানুষকেই একেবারে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তোলে। এ সময় মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে যে কোন মূল্যে, শুধু বাঁচার তাগিদে একটা ভাল চিকিৎসা পাবার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে, বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়িক ও কিছু কিছু অলাভজনক প্রতিষ্ঠান উঠে পড়ে লেগে যায় এই প্রাণঘাতি মহামারীর নিরাময় উপযোগী ঔষধ এবং এটা প্রতিরোধ এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন এর জন্য।
বিজ্ঞাপন
ব্যবসা অথবা মানবতার কল্যাণ দু’টোই অথবা যে কোন একটি এর পেছনে তখন উৎসাহ যুগিয়েছে। যার ফলে, মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে বিশ্বের ইতিহাস এর সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে, স্বল্পতম সময়েই উদ্ভাবন হয়ে যায়, বিশ্বের বড় বড় নামী দামী বিভিন্ন কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠান এর করোনার টিকা। অথচ ডেঙ্গু-এইডসসহ অনেক বড় বড় প্রাণঘাতি ভাইরাসজনিত রোগ এর টিকা গত ৩০/৪০ বছরেও আবিস্কৃত হয় নাই। চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে, শতভাগ স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী সবকিছু সম্পাদন করার আগেই এই টিকাগুলি যে তড়িঘড়ি করে, বাজারজাত করন করতে হয়েছে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। যা কিছুটা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েও তখনকার বিপুল চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা এবং বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে গ্রহনীয় ছিল। সংগত কারণেই এজন্য কাউকে দায়ী করা যায় না। আর এই ঝুঁকির বিষয়টি, তখনকার আতংকিত অবস্থা ও জনগনের বিপুল চাহিদার কারনে অনেকটা ধামাচাপাও পড়ে যায়। কাজেই করোনা যাদের হয়েছে তাদের এ রোগের প্রভাবে ভবিষ্যতে আর কি কি শারীরিক সমস্যা হতে পারে এবং করোনার টিকা যারা নিয়েছে তাদের এই টিকা নেবার কারনে কি কি শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা নিয়ে দুঃচিন্তা ভয়-ভীতি আতংক এখনও অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং ডাক্তারদের মধ্যেও বিরাজমান। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে রোগীর রোগ পরবর্তী শারিরীক অবস্থা এবং ভ্যাকসিন গ্রহনের পর ভ্যাকসিন গ্রহীতার শারীরিক কোনো সমস্যা হলো কিনা তা তদারকি বা মনিটর করার জন্য বাস্তবসম্মত কার্যকরী সুব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি। এটা থাকলে হয়তো বিষয়টি ভালভাবে নিয়মিত পর্যবেক্ষন করে জনগনকে প্রকৃত তথ্য নিয়মিত জানানো যেত। এখানে আরেকটি কথা উল্লেখযোগ্য যে, এখন থেকে ভবিষ্যত যে কোন স্বাস্থ্য দূর্যোগ/মহামারী মোকাবেলায় শুধু বিদেশী কোম্পানী/প্রতিষ্ঠান এর দিকে মুখ চেয়ে বসে না থেকে নিজেরাই এটা উৎপন্ন করার উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা ও কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। সবশেষ বলা হলো, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এ্যাস্ট্রাজেনকা টিকা কর্তৃপক্ষ, তাদের টিকাটির বাজারজাতকরন বন্ধ ঘোষনা করেছে। যদিও তারা টিকাটির প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করেছে। তথাপি কিছুটা সংশয় ভয় ও খটকা অনেকের মধ্যেই কাজ করছে। কারণ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভ্যাকসিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুসহ বিভিন্ন সমস্যার অভিযোগ ইতিমধ্যেই উত্থাপিত হয়েছে। যেহেতু আমাদের দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠি এই ভ্যাকসিনটি নিয়েছে, তাই তাদের অনেকেই, এমনকি অন্য কোম্পানীর ভ্যাকসিন গ্রহীতারাও বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ফোবিয়া ভয় ও আশঙ্কার মধ্যে আছেন। তাই, অতিসত্ত্বর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, সিনিয়র চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করে জনগনকে সময়ে সময়ে, করোনা এবং করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত প্রকৃত তথ্য জানানো প্রয়োজন।
লেখক
চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান(চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ)
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল,ঢাকা