লেবাবন যুদ্ধে ঝুঁকিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
লেবাননে টানা কয়েকদিন ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েল অব্যাহত হামলায় এখন পর্যন্ত দেশটির এক হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন প্রায় ছয় হাজার অধিক মানুষ। এদিকে দেশটির এমন পরিস্থিতিতে সেখানে থাকা প্রবাসীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত ৬জন বাংলাদেশি ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন বলে দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। পাশাপাশি দেশটির দক্ষিণাঞ্চল ছেড়ে বৈরুতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রবাসীরা।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তথ্যমতে, লেবাননে প্রায় এক লাখের অধিক প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন। গতবছর দেশটিতে কর্মী ভিসায় যান ২ হাজার ৫৯৪ জন। তবে গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে দেশটিতে কর্মী যাওয়ার হার বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটিতে গেছেন ৪ হাজার ২২৫ জন। চলমান পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে দেশটিতে কর্মী যাওয়ার এই ধারা আরও বাড়তো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় অনিশ্চয়তায় জীবন কাটছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। জীবন বাঁচাতে প্রবাসীরা নিজের বাড়ি ছেড়ে দেশটিতে চালু হওয়া আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। তবে আশ্রয়প্রার্থীর তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই কম। তাই অনেক প্রবাসীর জীবন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। ফলে প্রবাসীরা ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলো ছেড়ে অন্য শহরে অবস্থান নিচ্ছেন।
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দূতাবাস থেকে খাবার ও পানি দেওয়ার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা চলমান পরিস্থিতিতে দেশে ফেরার জন্য বিমানের ফ্লাইট চালুর আকুতি জানাচ্ছেন। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি নিজের ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশ বিমান দিয়ে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। তবে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশটিতে সীমিত পরিসরে বিমান চলাচল করছে। তাই প্রবাসীরা বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে দেশে ফেরার আকুতি জানাচ্ছেন।
লেবাননের বৈরুত শহরে অবস্থান নেওয়া মিসবাহ উদ্দিন নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘প্রায় ১৫ হাজার উপরে লেবানন প্রবাসীর বাসস্থান খোলা আকাশের নিচে, বিভিন্ন পার্কে ও মসজিদ পাশে। এখন আতঙ্কের মধ্যে হাজার হাজার প্রবাসীর দিন কাটছে। আমরা মায়ের কোলো গুলির সামনে মরতে রাজি কিন্তু বোমা বিস্টোরণে নয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আকুল আবেদন, দয়া করে খুব শীঘ্রই লেবানন প্রবাসীদেরকে বিশেষ ফ্লাইটে দেশে নেওয়া হোক।’
কামরুল হাসান রুবেল নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, ‘আমরা গত দুইদিন ধরে বৈরুতের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। আমাদের দিন কাটছে আতঙ্কে। কারণ ইসরায়েল তাদের হামলা অব্যাহত রাখছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা দেশে ফিরতে চাই। যতই দিন যাচ্ছে ততই এই দেশের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এভাবে নিরাপত্তাহীনতায় এই দেশে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন।
এদিকে গত চলমান পরিস্থিতিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে এক ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদূত এয়ার ভাইস মার্শাল জাভেদ তানভীর খান বলেন, লেবাননের উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে নিজ নিজ অবস্থানে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করুন। আপনাদের যেকোনও সমস্যা আমাদের জানালে আমরা দ্রুত পাশে থাকার চেষ্টা করবো।’ এছাড়া যুদ্ধাবস্থায় সব ধরনের গুজব পরিহারের আহ্বান জানান তিনি।
জাভেদ তানভীর বলেন, ‘ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আপনারা যারা নিজ কর্মস্থল এবং আবাসস্থল ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সামর্থ্য অনুযায়ী দূতাবাস থেকে সহায়তার প্রক্রিয়া চলমান। যারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন, তাদের দূতাবাসের হেল্পলাইন ও হটলাইনে দ্রুত যোগাযোগের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা আপনাদের যথাসাধ্য নিরাপদ স্থানের পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবো।’
তিনি বলেন, ‘চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বৈরুতের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, উন্মুক্ত গোলাগুলি, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া, যানবাহন ভাঙচুরসহ নিরাপত্তাপরিপন্থি বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের নিরাপদ স্থানে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।
জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসের ফ্রন্ট ডেস্ক ৭১২১৭১৩৯, হটলাইন ৭০৬৩৫২৭৮, হেল্পলাইন ৮১৭৪৪২০৭ ফোন নম্বর এবং ই-মেইলে প্রবাসীরা যোগাযোগ করতে পারবেন।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (শ্রম) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ‘এখানে কেবল লেবাননের জাতীয় এয়ারলাইনের কার্যক্রম চালু আছে, তাও সীমিত পরিসরে। অন্যকোনো দেশ এখন পর্যন্ত তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেয়নি।ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে দূতাবাস এবং অভিবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তারা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করবে।’