কমছে জন্মহার, তরুণ-তরুণীদের সন্তান ধারনে অনীহা
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
একদিকে যুদ্ধ। অন্যদিকে তরুণ-তরুণীদের সন্তান ধারনে অনীহা। ফলে হু-হু করে কমছে জন্মহার। আর এমন পরিসংখ্যান হাতে আসতেই চোখ কপালে উঠেছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন পদ্ধতির পরিকল্পনা করেছেন তিনি।
রাশিয়ার একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা তৈরির কাজ করবে মস্কোর এই নয়া পদ্ধতি। সন্তান উৎপাদনের জন্য তাদের উৎসাহিত করাই হবে এর প্রধান কাজ। যার দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট পুতিন তার বিশ্বস্ত এক মন্ত্রীর কাঁধে দিতে চলেছেন বলে জানা গেছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। তারপর থেকে দু’বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে বহু রুশ সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোর দাবি, নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৬ লাখ ছাপিয়ে গেছে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক দু’বছর আগে করোনা মহামারির জেরে দুনিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল রাশিয়াও। প্রাণ হারান বহু মানুষ। ২০২১ সালে টিকা আসার আগ পর্যন্ত পরিস্থিতির তেমন বদল হয়নি।
এসব কারণে হঠাৎ করেই জনসংকটের মুখে পড়েছে রাশিয়া। তার উপর আবার বর্তমান সময়ে সন্তানধারণে প্রবল অনীহা দেখাচ্ছেন রুশ তরুণীদের একাংশ। যা মস্কোর কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
এই আবহে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ২০২২ সালের আগস্টেই বড় ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ১০ ও তারও বেশি সন্তানের জন্ম দিলে সরকারের তরফে মোটা টাকা উপহার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। যদিও তা রুশ সমাজে সাড়া ফেলেছিল, এমনটা নয়।
ক্রেমলিন প্রাসাদ থেকে জারি করা এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, দশম সন্তানের প্রথম জন্মদিনে মা-কে সরকারের থেকে ১০ লাখ রুবল (রাশিয়ান মুদ্রা) উপহার দেওয়া হবে। তবে ওই সময়ে বাকি ৯ সন্তান জীবিত থাকলে তবেই মিলবে এই অর্থ। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ২০ লাখ টাকা।
রুশ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জেনি ম্যাথার্স জানিয়েছেন, সোভিয়েত যুগে সন্তান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এই ধরনের প্রকল্প চালু ছিল। যার পোশাকি নাম ছিল ‘মাদার হিরোইন’। ১৯৪৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চালু ছিল এই প্রকল্প। দেশের জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় ফের তা চালু করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
পুতিনের চালু করা এই প্রকল্প রুশ তরুণীদের মনে সে ভাবে দাগ কাটতে না পারায় পরবর্তীকালে নতুন পরিকল্পনা করে মস্কো। ঠিক হয়, রাত ১০টা থেকে দুটো পর্যন্ত আলো ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হবে। যৌন মিলনের জন্য একে আদর্শ সময় বলে চিহ্নিত করেছে পুতিন প্রশাসন।
মস্কোর কর্তাব্যক্তিদের যুক্তি ছিল— রাতে দীর্ঘক্ষণ আলো এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকায় তরুণ-তরুণীদের মন বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ থাকছে। ফলে সঙ্গমের উৎসাহ হারাচ্ছেন তারা। কিন্তু এভাবে রাতে দীর্ঘ দিন ইন্টারনেট ও আলো বন্ধ রাখা যে সম্ভব নয়, তা অচিরেই বুঝে যান রুশ প্রশাসনিক কর্তারা। ফলে ওই পরিকল্পনা সেভাবে কার্যকর করা যায়নি।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে আবার কর্মক্ষেত্রে মধ্যাহ্নভোজ ও কফি পানের বিরতির ফাঁকে সঙ্গমের পরামর্শ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার ওই ঘোষণার পর দুনিয়াজুড়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। একই সুর শোনা গিয়েছিল রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েভজেনি শেস্তোপলোভের গলায়। চাকুরিজীবী তরুণ-তরুণীদের অত্যধিক সঙ্গম ও একাধিক সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা বলতে শোনা গেছে তাকে।
ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম ‘মেট্রো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ায় জন্মহার বর্তমানে নারী পিছু ১.৫। স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখতে যা মহিলা পিছু ২.১-এ নিয়ে যেতে চাইছে মস্কো। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় ১০ লক্ষ রুশ তরুণ-তরুণী দেশ ছেড়েছেন বলে সরকারি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
কীভাবে দেশের তরুণ-তরুণীদের সঙ্গম ও সন্তানধারণের জন্য উৎসাহিত করা যায়, তা দেখাই হবে এর মূল কাজ। নতুন উপায় থেকে সন্তান পালনের জন্য দেদার অর্থ বিলি করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ক্রেমলিন জানিয়েছে, জন্মহারের সমস্যা মেটাতে আগামী দিনে যে রুশ ‘যৌন মন্ত্রক’-এর জন্ম হবে, তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
বিয়ের রাতে মধুচন্দ্রিমার জন্য হোটেলের ঘর বুকিংয়ের টাকাও সরকার থেকে দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে পুতিন সরকারের। উল্লেখ্য, পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই সন্তানের জন্ম দেওয়ায় দম্পতিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। সেই তালিকার প্রথমেই রয়েছে খবরভস্কের নাম। সেখানে মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সি তরুণীরা পুরস্কার হিসেবে সরকারি অর্থ পাচ্ছেন।
রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক অঞ্চলে ২৪ বছরের কম বয়সে প্রথম সন্তানের জন্ম দেওয়া নারীদের ৮,৫০০ পাউন্ড করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ বছরের ডিসেম্বরে এই অর্থ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক রুশ সংবাদ সংস্থা।
এছাড়া বর্তমানে বিনামূল্যে নারীদের প্রজনন ক্ষমতা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে রাশিয়ায়। পাশাপাশি নিষিদ্ধ হয়েছে গর্ভপাত। আগামী দিনে এই সমস্ত কাজ নতুন ‘যৌন মন্ত্রক’-এর নির্দেশে চলবে বলে জানা গেছে।
রাশিয়ার মতো জন্মহারের সমস্যায় ভুগছে দক্ষিণ ইউরোপের দেশ ইটালিও। আর তাই সন্তান উৎপাদনে তরুণ-তরুণীকে উৎসাহিত করতে সরকারের তরফে টাকা ও বাড়ি উপহার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে জর্জিয়ার মেলোনি সরকার।
জন্মহার হ্রাস পাওয়ায় ‘এক সন্তান’ নীতি থেকে সরে এসেছে চীন। একসময়ে পৃথিবীর বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশে বন্ধ্যত্ব বাড়ছে বলে খবর মিলেছে। শিশু কমছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও।