নবিজি (সা.)-এর কিছু নাম ও নামকরণের কারণ
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
কোরআন-হাদিসের বর্ণনায় আল্লাহতায়ালার নিরানব্বইটি নাম পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এরও একাধিক সুন্দর নাম রয়েছে। তবে এগুলোর সব পরিচয়বাচক নাম নয়; গুণবাচক নাম। যা তাঁর নানা রকম প্রশংসা ও পূর্ণাঙ্গতার দিকে ইঙ্গিত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মূল ও পরিচয়বাচক নাম মুহাম্মাদ। এটি সমধিক প্রসিদ্ধ নাম। তাওরাতে এ নামেই তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটি নাম আহমাদ। ইসা (আ.) তাঁকে এ নামে ডাকতেন। আরও কিছু নাম হলো, মুতাওয়াক্কিল, মাহি, হাশের, আকিব, মুকাফফি, নবিয়ুর রহমাহ, নবিউল মালহামা, ফাতিহ, নবিয়ুত তাওবাহ, আল-আমিন ইত্যাদি।
জুবায়ের বিন মুতইম (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে তাঁর অনেক নাম উল্লেখ করেছেন। অতএব তিনি বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ। আমি আহমাদ। আমি মাহি, যার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা কুফুর মিটিয়ে দিয়েছেন। আমি হাশের, আমার সামনে কিয়ামতের দিন মানুষকে জমায়েত করা হবে। আমি আকিব, যার পরে আর কোনো নবি নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৫৩২; মুসলিম, হাদিস: ২৩৫৪)
মুহাম্মাদ অর্থ প্রশংসিত। এটি মাহমুদ শব্দের চেয়ে বেশি অলংকারপূর্ণ। আহমাদ শব্দটি আরবি হামদুন শব্দমূল থেকে আধিক্যবাচক ক্রিয়া। অর্থ সমধিক প্রশংসিত। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, ‘আমি তাওরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গুণাবলি পাঠ করেছি। (আল্লাহতায়ালা বলেন) মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ আমার বান্দা ও রাসুল। আমি তাঁকে মুতাওয়াক্কিল নামে নামকরণ করেছি। যিনি কঠোর ও রূঢ় নন। বাজারে হৈচৈকারী নন। মন্দের প্রতিদান মন্দ দিয়ে দেন না। বরং ক্ষমা ও মার্জনা করেন। আমি তাঁকে মৃত্যু দেব না, যতক্ষণ না তাঁর দ্বারা বক্র জাতিকে সোজা করব তথা যতক্ষণ না তারা বলবে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ২১২৫) মাহি অর্থ যার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা কুফুর মিটিয়ে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে যতটুকু কুফুর মিটানো হয়েছে, সৃষ্টির অন্য কারও মাধ্যমে সেই পরিমাণ কুফুর মিটানো হয়নি।
হাশের অর্থ হলো, যার সম্মুখে মানুষকে জমায়েত করা হবে। কেমন যেন মানুষকে (কিয়ামতের দিন) একত্র করার জন্যই তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে। আকিব অর্থ শেষে আগমনকারী। আকিব যিনি নবিগণের পরে এসেছেন। যার পরে কোনো নবি নেই। মুকাফফি মানে অনুগামী। যিনি ছিলেন আগেরকার রাসুলদের অনুগামী। নবিয়ুত তাওবা দ্বারা উদ্দেশ্য যার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীবাসীর ওপর তওবার দরজা খুলে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা তাঁর মাধ্যমে লোকদের ওপর এমনভাবে তওবা গ্রহণ করেছেন, এর আগে যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীবাসীর জন্য নেই। নবিয়ুল মালহামা হলো যুদ্ধের নবি। অর্থাৎ যাকে প্রেরণ করা হয়েছে আল্লাহর শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদ করার জন্য। নবিয়ুর রহমাহ অর্থ রহমতের নবি। তাঁকে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীবাসী বা মুমিন-কাফের নির্বিশেষে সবার জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। ফাতিহ অর্থ উন্মোচনকারী। আল্লাহ তাঁর দ্বারা হেদায়েতের দরজা খুলে দিয়েছেন। অন্ধ, বধির ও মোড়কবদ্ধ অন্তর উন্মোচন করে দিয়েছেন। আল-আমিন হলো বিশ্বস্ত। তিনি আল্লাহর অহি ও দ্বীনের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত। তিনি আকাশে বিশ্বস্ত। বিশ্বস্ত পৃথিবীতেও। এ কারণেই আরবের কাফেররা নবুওয়াতের আগে তাঁকে এই নামে ডাকত। (মুখতাসারু জাদিল মাআদ,পৃষ্ঠা: ২৭-২৯)