‘মারামারি করাটা তো আমাদের কাজ নয়’
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ২০২৫-২৬ মেয়াদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল (২৮ ডিসেম্বর ) রাজধানীর এফডিসিতে এটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
১৯৮১ সালে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়েছিলেন আলমগীর কুমকুম, সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন।
১/১১-এর পটপরিবর্তনের পর ৭ বছর সংগঠনটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন হয়নি। এবারও হঠাৎ করে নির্বাচন স্থগিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন। ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি। কী ভাবছেন নির্মাতারা? কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রয়েছে ১৮টি সংগঠন। এর মধ্যে অন্যতম চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। ৪৩ বছরের পথচলা নিয়ে গর্ব করেন পরিচালকরা। তবে এবার যেন সেই ঐতিহ্য কিছুটা ম্লান হয়ে গেল, মনে করছেন পরিচালক বদিউল আলম খোকন।
পর পর দুইবার সমিতির মহাসচিব পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এবারও তিনি কার্যনির্বাহী পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। ২৮ ডিসেম্বর সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় হতাশ তিনি।
ক্ষমা
গতকাল এই পরিচালক বলেন, ‘চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রায় তিন দশক ধরে জড়িত। অন্তত ১৫ বার নির্বাচন হতে দেখেছি।এই সংগঠন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও অলাভজনক। এখানে কেউ স্বার্থ নিয়ে কাজ করেন না। একে অন্যের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার প্রত্যয়ে সংগঠনটি চলছে।
আমরা ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্তও জানতাম ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। পরিচালকরা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষাও করছিলেন। অথচ রাতে আমাদের জানানো হলো, এফডিসি কেপিআইভুক্ত এলাকা। নিরাপত্তাজনিত কারণে সচিব আমাদের এমডিকে ভোট গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। জানি না, কিসের নিরাপত্তা! আমরা তো এখানে সবাই সৃজনশীল মানুষ। মারামারি করাটা তো আমাদের কাজ নয়।’
সমিতির সভাপতি হিসেবে গত দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছেন কাজী হায়াৎ। এবার তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হননি। তবে আকস্মিক ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় তিনি অবাক হয়েছেন। কাজী হায়াৎ বলেন, ‘কেপিআইভুক্ত এলাকায় সরকার যদি নির্বাচন না করতে দেয় তাহলে কার কী করার আছে। এর আগে একবার ওয়ান-ইলেভেনের সময় সাত বছর নির্বাচন হয়নি। শওকত জামিল পুরো সময়টা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমি এবার ভোটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত নই। তাই ভেতরের কথা বলতে পারব না। তবে ভোটাধিকার প্রতিটি পরিচালককে দেওয়া উচিত। আশা করব, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’
পরিচালক সমিতির নির্বাচনে সব সময় সরব উপস্থিতি থাকে সায়মন তারিকের। প্রতি নির্বাচনেই তিনি অংশ নেন। রাজনৈতিকভাবে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তিনি। এবার কোষাধ্যক্ষ পদে সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন তিনি। হঠাৎ ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় তিনিও হতাশ হয়ে পড়েন। গতকাল তিনি বলেন, ‘কেন ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছে তার সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিচ্ছেন না। কেউ বলছেন নিরাপত্তার কারণে আবার কেউ বলছেন এফডিসি সংস্কার করে তারপর ভোট হবে। এফডিসির সংস্কার কী? আজ (গতকাল) জানতে পারলাম, চলচ্চিত্রের সার্চ কমিটি বলেছে, শিগগিরই এফডিসিতে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর এফডিসিকে সংস্কার করা হবে। এগুলো শেষ হলে তারপর নির্বাচন। তার মানে আমাদের নির্দিষ্ট কত দিন অপেক্ষা করতে হবে সেটার কোনো ধারণা দেওয়া হলো না। চার দশকের একটা সংগঠনকে এভাবে দমিয়ে রাখাটা ঠিক হলো না।’
পরিচালক সমিতির গঠনতন্ত্রে আছে, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে অন্তর্বর্তী ৯ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সমিতির প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে এই উপদেষ্টা কমিটির ক্ষমতা থাকবে সর্বোচ্চ তিন মাস। তারপর নির্বাচন দিতেই হবে।
এবার সমিতির নির্বাচনে মহাসচিব পদে দাঁড়িয়েছিলেন শাহীন কবির টুটুল। তিনি বলেন, ‘আমরা কেপিআইভুক্ত এলাকার মধ্যেই নির্বাচন করি। এখানে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। হয়তো চাইলে এফডিসির বাইরে নির্বাচন করতে পারতাম। তবে সেটা ভালো দেখাত না। আগের সব নির্বাচনই এফডিসিতে হয়েছে। আমি অপেক্ষা করতে রাজি আছি। পাশাপাশি চাই, সরকার ও এফডিসি দ্রুত আমাদের নির্বাচন করার অনুমতি দিক। আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ করি, নির্বাচিতদের নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করি।’