বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত সাংবাদিক আল-হেলাল, বঞ্চিতদের নিয়ে আন্দোলন

রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ:
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত সুনামগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক আল হেলাল মো. ইকবাল মাহমুদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। বৈষম্যের শিকার শিল্পী-সাংবাদিক সমাজের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে লড়াই সংগ্রামে মাঠে রয়েছেন পেশাদার সাংবাদিক ও বাউল শিল্পী আল-হেলাল।
সুনামগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক সংগঠন সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির গেল চারটি নির্বাচনে একাধারে ২ বার করে চারবার একই পদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রতিবারই নির্বাচনে তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে। শেষরাতে তাকে পরাজিত করতে ব্যয় করা হয় কালো টাকা। কিন্তু আটকাতে পারেনি ষড়যন্ত্রকারীরা। প্রিয় সহকর্মীরা তাকে সবসময় হৃদয়ের কোনায় পরম ভালবাসায় লালন করে থাকেন। এবার ভোট পলিটিক্সে পলিসি ম্যাকার হিসেবেও নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। শুধু নিজেই নেতা হননি একজন নেতা তৈরীর কারিগর আল-হেলাল। প্রতি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়ন ও বিজয়ে নিশ্চিত ভূমিকা পালন করে সবার পছন্দের ব্যক্তি তিনি।
সাংবাদিক জীবনে কখনও গডফাদার ধরতে হয়নি তাকে। বরং অনেক গডফাদারকে নাকানি চুবানি খাইয়েছেন সাহসী আল-হেলাল। সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের আতংক পেশাদার এই সাংবাদিকের মূল সম্বল হচ্ছে তার বক্তৃতা, কথা, গান ও লেখনি। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে জীবনে অনেক মামলা-মোকদ্দমার আসামী হলেও কোন দন্ডাদেশ এর মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। রাষ্ট্র ও সরকারের আইন বিধি বিধান ও প্রচলিত নিয়ম কানুনকে সমুন্নত রেখে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে সঠিক শব্দ ও বাক্য প্রয়োগে সবসময় পান্ডিত্যের স্বাক্ষর রাখেন তুখোড় এই সাংবাদিক। অসহায়-নিরীহ সাংবাদিকদের আপদকালীন সময়ে আগলে রাখা সাংবাদিক আল-হেলাল ভূয়া-প্রতারক সাংবাদিকদের মুখোশ উন্মোচনে থাকেন কঠোর। বাংলাদেশের মরমী সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার জগতে একটি সাড়াজাগানো নাম আল-হেলাল।
তার পিতা এস.এন.এম মাহমুদুর রসুল যিনি একজন যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাতার নাম মরহুমা রোকেয়া বেগম চৌধুরী। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভরারগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করা সাংবাদিক-গবেষক আল-হেলাল পেশাদারিত্বের সুবাদে স্বপরিবারে বসবাস করেন সুনামগঞ্জ জেলা শহরে।
তিনি ১৯৯০ সালে দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি,১৯৯২ইং সালে দিরাই কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ১৯৯৪ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। পরবর্তীতে রাজধানীর জাতীয় আইন কলেজে অধ্যয়ন করেন। আল-হেলাল ইতিপূর্বে শীর্ষস্থানীয় টিভি চ্যানেল বাংলাভিশন, ইংরেজী দৈনিক আওয়ার টাইম, দৈনিক মুক্তকন্ঠ, দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ সহ অসংখ্য গণমাধ্যমে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন করেছেন। সর্বশেষ রাষ্ট্র পরিচালিত জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক হিসেবে গড়ে তুলেন বাউল কল্যাণ পরিষদ ও বাউল কামাল পাশা স্মৃতি সংসদ নামের দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সিলেট বিভাগ গণদাবী পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাগো সিলেট আন্দোলন এর প্রচার সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে সক্রীয়ভাবে জড়িত।
বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বাউল দল সুনামগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন জেলা শাখার আহবায়ক, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জেলা শাখার সভাপতি, কালনী বেতার স্রোতা ক্লাব এর সভাপতি, জেলা গীতিকার ফোরাম এর জেলা কমিটির সহ-সভাপতি, বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ সুনামগঞ্জ এর সাধারন সম্পাদক, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা জেলা শাখার সভাপতি ও সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন তিনি।
কর্মরত রয়েছেন জাতীয় দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসেবে। তিনি কোয়ান্টাম ল্যাব শান্তিনগর ঢাকার আজীবন রক্তদাতা ও বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্ত্রের তালিকাভূক্ত একজন পল্লীগীতি শিল্পী। তার সম্পাদনায় সম্প্রতি প্রকাশ হতে যাচ্ছে সাপ্তাহিক মুক্তির সনদ ও সাপ্তাহিক হীরামন মানিকের দেশে নামে আরো দুটি পত্রিকা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে ১০১টি গান নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন “গানের সম্রাট কামাল উদ্দিন”নামে একখানা গীতিগ্রন্থ। পরবর্তীতে “শ্রেষ্ট পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত”,“রাজনীতির রবার্টব্রুস মতিউর রহমান” “ভোটযুদ্ধে মমতাজ ইকবাল” “মডেল মানুষ মমিনুল মউজদীন” ও সুনামগঞ্জের সোনার মানুষ মুহাম্মদ আব্দুল হাই”সহ আরো অনেক জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশার শত শত গান নিয়ে পত্রিকা সম্পাদনা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেন তিনি।
একজন গীতিকার হিসেবে তিনি রচনা করেছেন প্রায় শতাধিক গান। সম্প্রতি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইজারাবিহীন ধোপাজান নদীতে বেপরোয়াভাবে বালি পাথর লুটতরাজের প্রতিবাদে “ধোপাজান নদীরে তুমি খবর জাননি,তোর বুকে রইয়াছে কত বালি পাথর খনি” শিরোনামে তাৎক্ষনিকভাবে একটি গান লিখে ও গেয়ে জেলা প্রশাসকসহ পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ সহকারে ফেইসবুক লাইভ করে সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পদ সংরক্ষণে গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন করেন তিনি। আল-হেলাল ২০১৪ ইং সনের ৩রা জুন সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাগলা এলাকার সদরপুর নামক স্থানে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। একজন পেশাদার সাংবাদিক ও বাউল শিল্পী হিসেবে সরকার তাকে বাউল শিল্পীর স্বীকৃতিসহ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সুনামগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গনের সামনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে রাস্তায় পুলিশের নিক্ষেপ করা কাঁদানে গ্যাসে চোখ ও মুখ ঝলসে যায় তার। একজন ছাত্রকে বাঁচাতে গিয়ে লাঠিচার্জে আহত হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রলাণয়ের সরকারী ওয়েবপোর্টালে তার কেইস আইডি নং ৩৪৭২২।
ডিগবাজীর রাজনীতির মাঠে আল-হেলাল এর কোন দখল না থাকলেও একজন আদর্শিক সাংবাদিক হিসেবে তিনি জেলাজুড়ে আলোচিত ও জনপ্রিয়। ইতিপূর্বে সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি পদে ২ বার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে সাংবাদিকদের ব্যালটভোটে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। জেলা শহরে কর্মরত সাংবাদিকদের মূলধারার সংগঠন সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমানে নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে দায়িত্বরত অবস্থায় ২১ ডিসেম্বর নির্বাচনে আবার সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন এই সাংবাদিক নেতা।
একান্ত সাক্ষাতে আল-হেলাল বলেন, আমি সম্মানিত সাংবাদিক ভাইদের কাছে কৃতজ্ঞ। এ পর্যন্ত চারবার আমাকে নিজেদের মূল্যবান ভোটে নির্বাচিত করেছেন। সহকর্মী সকল বিজয়ী সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানিয়ে এবং পরাজিত প্রার্থীদের সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আগামীতে এবারের পরাজিত সহকর্মীদের বিজয়ে আমার অগ্রণী ভূমিকা থাকবে।