কার ভাগ্যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শিরোপা, নিউজিল্যান্ড নাকি ভারত?

স্পোর্টস ডেস্ক:
তাদের না পারার গল্পের চর্চাই হয় বেশি। তবে এমন নয় যে নিউজিল্যান্ডের পেরে ওঠার গল্পও দু-একটা নেই। আছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যের শিকার তারা এত বেশি হয়েছে যে সৌভাগ্যের পরশ পাওয়ার ব্যাপারটি এর আড়ালে ঢাকা পড়েই থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে কেউ একজন তাদের সৌভাগ্যের কথা তুলতেই তাই চমকিত হলেন মিচেল স্যান্টনার।
কিউই অধিনায়ক বিষয়টি লুফেও নিলেন এক রকম, ‘আশা করছি, এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সৌভাগ্যের মুখ দেখব আমরা।’ যদিও গত এক দশকের বিশ্ব আসরগুলো নিউজিল্যান্ডের জন্য কেবলই ব্যর্থতার। এক ওয়ানডে সংস্করণেরই চার আসরের দুটোর ফাইনালে গিয়ে হেরেছে তারা। তবে পাঁচ আসরের মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে যখন সামনে ভারত, তখন তাদের পেরে ওঠার গল্পও পিছু না নিয়ে পারেই না।
যে সাফল্যের গল্প শুধুই ভারতের বিপক্ষে।
ফাইনালে ভারতকে পেলে যে কিউইরা পারে, এর প্রথম ঘটনা ২৫ বছর আগের। ২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে আইসিসি নকআউট টুর্নামেন্ট (যেটি পরে নাম বদলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হয়) শিরোপায় রাঙিয়েছিল তারা। দুই দশক পর ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও উঁচিয়ে ধরা ভারতকে হারিয়েই।
আজ দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতের সামনে পড়া কিউইরা যে তৃতীয় সৌভাগ্যের সাক্ষাৎ চাইবে, সেটি খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ফাইনাল ভারতের জন্যও কম বড় বেদনার প্রতিশব্দ হয়ে নেই। ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জেতার পর থেকে তাদের আরেকটি ট্রফির অপেক্ষা ফুরাতেই চাইছিল না। ২০২৩ সালে নিজেদের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে যেতেই গোটা ভারতবর্ষ আগাম উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে দেয় অস্ট্রেলিয়ার জয়।
সেই ব্যথা এখনো ভোলেননি শুভমান গিল। ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক ভুলতে চান এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা দিয়ে, ‘ভারতের হয়ে আইসিসির প্রতিযোগিতায় এটি আমার দ্বিতীয় ফাইনাল। রোমাঞ্চিত অবশ্যই। তবে আগেরবার যা করতে পারিনি, এবার তা করতে চাই।’
তা করার জন্য ১৯ দিনের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায়ও আছে ভারত। পাকিস্তান আয়োজক হলেও সেখানে গিয়ে খেলবে না বলে ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলেছে দুবাইতে। এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ধাতস্থও হয়ে গেছে তারা। তবে কিউইরা কোথাও থিতু হতে পারেনি। করাচি-রাওয়ালপিন্ডি-দুবাই-লাহোর-দুবাই করতে করতে সাত হাজার কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণও করা হয়ে গেছে তাদের। যদিও পারফরম্যান্সে সেই ভ্রমণক্লান্তির ছাপ নেই। লাহোরের সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৬২ রানের পাহাড় গড়ে ফাইনালে আসা দলের অধিনায়ক তাই বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন, ‘ভারত বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্যই। ওরা এই কন্ডিশনটা খুব ভালো বোঝে এবং খেলছেও দারুণ। তবে আমরাও কিন্তু দুর্দান্ত খেলছি।’
দুটো সেঞ্চুরি করা তরুণ রাচিন রবীন্দ্র আছেন তুখোড় ফর্মে। অধিনায়ক স্যান্টনারও তার বাঁহাতি স্পিনে দারুণ কার্যকরী। কেন উইলিয়ামসনের অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্স কিউইদের দিয়েছে স্থিরতা। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে এক নিমেষে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে জানা গ্লেন ফিলিপসের বাজপাখির মতো ক্ষিপ্রতায় ক্যাচ নেওয়ার দক্ষতা শিরোপা সম্ভাবনায় কোনো অংশেই পিছিয়ে রাখছে না কিউইদের। এদিকে গিলও দেখালেন নিজ দলের শক্তির গভীরতা, ‘আমি খেলেছি, এমন ভারতীয় দলের সেরা ব্যাটিং লাইনআপ এটি। পরের দিকে লোকেশ রাহুল, শ্রেয়াস আইয়ার, হার্দিক পাণ্ডে ও রবীন্দ্র জাদেজাদের উপস্থিতি আমার মতো শুরুর দিকের ব্যাটারদের নির্ভার হয়ে ব্যাটিং করার স্বাধীনতা দেয়।’
অবশ্য ফাইনালের চাপ ভিন্ন জিনিস। সেটি জয় করার সাম্প্রতিক নজিরও আছে ভারতের। ওয়ানডে বিশ্বকাপের হতাশা তারা ভুলেছে গত বছর জুনে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরের ট্রফি নিয়ে উৎসব করে। গিল অবশ্য সেই দলের অংশ ছিলেন না। তবে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আরেকটি আইসিসি প্রতিযোগিতার শিরোপার নাগাল পেতে সেই সাফল্য ভীষণ সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন, ‘অনেক সময় একটি শিরোপা জয় (ফাইনালে গিয়ে না পারার) ধারাটা ভেঙে দেয়। সেই সঙ্গে ধরিয়ে দেয় জেতার ছন্দটাও। এবারও আমরা জেতার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখব না।’
ভারতের সুবিধা দুবাইয়ের কন্ডিশনে কিউইদের চেয়ে বেশি অভ্যস্ততা। যদিও আসরটি শেষ হতে হতে এখানকার আবহাওয়ায়ও কিছুটা বদল এসেছে। ফাইনাল হবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হওয়া ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উইকেটে। এরপর আর ব্যবহৃত না হওয়া উইকেটে রান বন্যাও বয়ে যাবে না বলে নিশ্চিত গিল, ‘আবহাওয়া কিছুটা বদলালেও উইকেটে ভিন্ন কিছু হবে বলে মনে হয় না। এটি লাহোরের মতো উইকেটও নয়।’ লাহোরে অনেক রান হলেও দুবাইতে তা হওয়ার কথা নয়। স্যান্টনার মনে করেন, অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটি, ‘নকআউট ম্যাচের ব্যাপারটি আলাদা। এখানে চাপ সামলে যারা নিজেদের মেলে ধরতে পারবে, ভাগ্য তাদের পক্ষেই যাবে।’
কিউইদের পক্ষে গেলে সেটি হবে তাদের ‘তৃতীয় সৌভাগ্য’। অবশ্য নিকট অতীতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা ভারতেরও আছে ভাগ্য পক্ষে আনার দৃঢ়তা!