অবশেষে যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব দিল ইসরায়েল

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতার ওই প্রস্তাব ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে দিয়েছে। প্রস্তাবটি এখন পর্যালোচনা করছে হামাস। তবে প্রস্তাবের কিছু শর্ত বিশেষ করে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে আপত্তি জানানো হয়েছে। হামাস বিবৃতি দিয়ে ওই আপত্তি জানায়। এ ছাড়া ইসরায়েল যুদ্ধে ৪৫ দিনের একটি সাময়িক বিরতি দিয়ে চায়। কিন্তু হামাস চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। ফলে তেল আবিবের এমন প্রস্তাব হামাস নাকচ করবে, এটাই স্বাভাবিক। এই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রস্তাব নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলা-অভিযানে গাজা নগরী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে গত ১৯ জানুয়ারি একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি হলেও মার্চেই তা ভেঙে যায়। এরপর ইসরায়েলি বাহিনী আবার অভিযানে নামে। শুরু হয় নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষকে হত্যা। ইসরায়েলের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় গোটা বিশ্ব। যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে লাখো জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এরপর ইসরায়েল নতুন করে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে গত সোমবার প্রস্তাবটি দেয় ইসরায়েল। মিসরের রাষ্ট্রসংশ্লিষ্ট সম্প্রচারমাধ্যম আল কাহেরা নিউজ টিভি এ কথা জানায়। মধ্যস্থতাকারীরা এখন হামাসের উত্তরের অপেক্ষায় আছে।
পরে ওই দিনই হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরায়েলের প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে এবং ‘যত দ্রুত সম্ভব’ এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে। তবে গাজায় যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ এবং ভূখণ্ড থেকে সব ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে তারা।
এ ব্যাপারে হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, হামাসের চাওয়া ছিল ইসরায়েলকে হামলা ও বৈরিতা পুরোপুরি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, কিন্তু প্রস্তাবে তা আসেনি। নতুন প্রস্তাবে প্রথমবারের মতো ইসরায়েল হামাসের নিরস্ত্রীকরণও চেয়েছে। কিন্তু এটা কখনো হামাস মানবে না বলে আবু জুহরি জানান। তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধ বাহিনীর অস্ত্র হস্তান্তর এমন একটি শর্ত, যা নিয়ে আলোচনা তো বাদ, বিবেচনায়ও আনা যাবে না।’
হামাস চাইছে, ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিক এবং জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে গাজা ভূখণ্ড থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নিক। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নির্মূল ও গাজায় আটকে থাকা বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে না।
আবু জুহরি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের বদলে একসঙ্গে সব জিম্মিকে হস্তান্তরে প্রস্তুত হামাস।’
গাজায় ইসরায়েলি ‘সামরিক বর্বরতার’ প্রতিবাদে দেশটির নাগরিকদের মালদ্বীপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গতকাল মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু এ ঘোষণা দেন। এ নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে, যাতে গাজায় ইসরায়েলি ‘বর্বরতার’ কথাও উল্লেখ করা হয়।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি বলছে, মালদ্বীপ অভিবাসন আইনের তৃতীয় সংশোধনীর অনুমোদনের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারই পিপলস মজলিস কর্তৃক অভিবাসন আইনের তৃতীয় সংশোধনী পাস হয়। এর ফলে এখন থেকে ইসরায়েলি পাসপোর্টধারীরা মালদ্বীপে প্রবেশ করতে পারবেন না।
এ প্রসঙ্গে ফেসবুকে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু লেখেন, ‘এই সংশোধনী ফিলিস্তিনে চলমান নৃশংসতার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থানের স্পষ্ট প্রতিফলন। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত আমাদের এই দেশটি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি অটল সংহতি পুনর্ব্যক্ত করছে।’ সূত্র: আল-জাজিরা