ঐতিহাসিক দৃষ্টিনন্দন বাঘা মসজিদ
রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার একটি ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন নিদর্শন বাঘা মসজিদ। হুসেন শাহি বংশের শাসক সুলতান নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ ১৫২৩-২৪ সালে ২৫৬ বিঘা জমির ওপর এটি নির্মাণ করেন। তিনি সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহর পুত্র। সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী এই বাঘা মসজিদ।
ইট, পোড়ামাটির ফলক, গম্বুজ ও মিনারের নিখুঁত ব্যবহার এই মসজিদকে বিশেষ করে তুলেছে। মসজিদটিতে আছে ১০টি গম্বুজ, পাঁচটি প্রবেশদ্বার এবং ভেতরে চারটি অলংকৃত মিহরাব। এর দৈর্ঘ্য ২২.৯২ মিটার, প্রস্থ ১২.১৮ মিটার এবং উচ্চতা প্রায় ৭.৩২ মিটার। দেয়াল ২.২২ মিটার পুরু।
মসজিদের ভেতরে ও বাইরে অসংখ্য পোড়ামাটির ফলকে আমগাছ, শাপলা ফুল, লতাপাতা ও ফারসি খোদাই শিল্পের বিভিন্ন নকশা দেখা যায়। এই মসজিদের ছবি বাংলাদেশের ৫০ টাকার নোট ও ডাকটিকিটে ব্যবহৃত হয়েছে।
মসজিদটি শুধু নামাজের জন্য ব্যবহৃত হতো না, এটি ছিল মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র। মসজিদের পাশে রয়েছে জনকল্যাণে খনন করা একটি বিশাল দিঘি।
দিঘিটি ৫২ বিঘা জমিজুড়ে বিস্তৃত। এটি স্থানীয় কৃষি, পানির চাহিদা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দিঘির চারপাশে সারি সারি নারকেল ও খেজুরগাছ। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদের গম্বুজগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সেগুলো পুনর্নির্মাণ করে।
বর্তমানে এটি সরকারিভাবে সংরক্ষিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। বহু পর্যটক ও ইতিহাসবিদের আগ্রহের কেন্দ্র এটি। এই মসজিদ চত্বরে প্রতিবছর মেলা বসে। এটি ‘বাঘার মেলা’ নামে পরিচিত। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই মেলা সাধারণত ঈদুল ফিতর থেকে তিন দিন পর্যন্ত থাকে। এই মেলা স্থানীয় সংস্কৃতি, হস্তশিল্প, লোকজ গান ও ঐতিহ্যের মিলনস্থল হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের ইসলামী ঐতিহ্য ও স্থাপত্য-ঐতিহাসিক চেতনার ধারক ও বাহক এই মসজিদ। তবে মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে অনেক পোড়ামাটির ফলক ভেঙে গেছে এবং কারুকাজ নষ্ট হয়ে পড়েছে।