প্রেসক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনায় দর্পণ কবীর কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে :: আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভায় মারপিটের ঘটনায় তদানিন্তন সেক্রেটারি দর্পণ কবীর গত ৭ এপ্রিল কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে হাজিরা দিয়েছেন। ১৫ মে এই মামলার পরবর্তী তারিখ। গত ১৫ জানুয়ারি প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সভায় ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ সংবাদদাতা শহিদুল ইসলামের ওপর চড়াও হন দর্পণ কবীর। এক পর্যায়ে শহিদুলকে অকুস্থল থেকে পুলিশ এসে হাসপাতালে নেয়। কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে বিচারাধীন মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী অফিস থেকে এ সংবাদদাতাকে জানানো হয়েছে, ১৫ জানুয়ারি অপরাহ্ন সোয়া ৫টা থেকে ৫টা ২৭ মিনিটের মধ্যে ৩৭-৩৩ ৭৩ স্ট্রিটে দপর্ণ কবীর এহেন হামলা চালায়। তার বিরুদ্ধে থার্ড ডিগ্রি এ্যাসোল্ট এবং হ্যারাসমেন্টের সেকেন্ড ডিগ্রির অভিযোগ রয়েছে। নিউইয়র্ক পুলিশের ডিটেকটিভ ডগলাস ডিয়োটো এ অভিযোগ দায়ের করেছেন। দর্পণ কবীর শহিদুলের মুখের ডান পাশে ঘুষি মারেন। তাকে লাথিও মারেন দর্পণ কবীর-জানান শহীদুল। এরফলে শহিদুলের ইন্টার্নাল ইঞ্জ্যুরি হয় বলেও এলমহার্স্ট হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে শহিদুল এ সংবাদদাতাকে জানান। কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টের মাননীয় জজ ৭ এপ্রিল আরেক নির্দেশে দর্পণ কবীরকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত শহিদুলের আশপাশে না যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসক্লাবের সভায় এহেন মাস্তানীর জন্যে দর্পণ কবীরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সেই গ্রেফতারের নম্বর হচ্ছে ৬০৩০৫৩/১৭।
কার্যকরী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সকলকে অপমানিত করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকার অফিসে বৈঠক চলাকালে সকলকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে ক্লাবের রেজ্যুলেশন বই হাতে নিয়ে দর্পণ কবীর বলেছিলেন, ‘কীভাবে আপনার ক্লাব করেন সেটি আমি দেখে ছাড়বো’। একথা বলে বৈঠক ত্যাগ করেছিলেন। ক্লাবের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব চাইলেই দর্পণ কবীর এমনভাবে উত্তেজিত হন এবং কখনো কখনো শহিদুলের প্রতি তেড়েও যান। এক পর্যায়ে তদানিন্তন সভাপতি নাজমুল আহসানকেও এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়।
যুগ্ম সম্পাদকের ওপর চড়াও হবার ঘটনার ব্যাপারে দর্পণ কবীরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে ক্লাবের নির্বাহী সদস্য লাবলু আনসার একটি চিঠি দেন সভাপতি সমীপে। এক অজ্ঞাত কারণে নাজমুল আহসান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা দূরের কথা, কার্যকরী কমিটির জরুরী একটি সভা আহবানেও রহস্যজনক নিরবতা পালন করেছেন। এভাবেই প্রেসক্লাবকে সকলের জন্যেই বিপজ্জনক করে তোলা হয়েছে। সকলে জোট বেঁধেছিলেন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এমন কর্মকান্ডে লিপ্তদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু সেই নির্বাচনের মধ্যেই দর্পণ কবীরের কূটকৌশলে কথিত কন্ঠভোটে নয়া কমিটি গঠনের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে এবং কথিত সেই কমিটির সভাপতির আসনটিও নিজের কব্জাতেই রেখেছেন। অপরদিকে, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিকে পাত্তা দিতে সীমাহীন কার্পণ্য করছেন দর্পণ কবীর গংরা। ক্লাবকে নিজের পকেট সংগঠনে পরিণত করার মতলব এখনও পরিহার করেননি এটিএন বাংলার সাবেক এই যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি। এখন সকলে কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিচারাধীন মামলার ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গেছে, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সভার শেষলগ্নে এজেন্ডা বহির্ভূত একটি বিষয়ের ওপর আলোচনার এক পর্যায়ে সেক্রেটারি দর্পণ কবীরের তোপের মুখে পড়ে আহত হন যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। পুলিশের উপস্থিতিও ঘটেছিল অকুস্থল পালকি পার্টি সেন্টারে। আহতাবস্থায় শহিদুলকে নেয়া হয় নিকটস্থ এল্মহার্স্ট হাসপাতালে। রাতভর তার চিকিৎসা শেষে পরদিন তাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি রোববার বিকেলে ঐ সভা হচ্ছিল জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে। সভাপতিত্ব করছিলেন ক্লাবের সভাপতি নাজমুল আহসান। প্রথম পর্বে নির্বাচনের জন্যে গঠিত কমিশনের উদ্দেশ্যে কিছু সুপারিশ তৈরী করা হয় এবং সভার দ্বিতীয় পর্বে কমিশনের সদস্যগণের উপস্থিতিতে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিশনের প্রধান কাজী শামসুল হক এবং সদস্য রাশেদ আহমেদ ছিলেন সেখানে। আকবর হায়দার কিরণ ব্যক্তিগত কারণে অনুপস্থিত থাকলেও পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের পৃথক বৈঠকে সে সব নিয়ে কথা বলার সম্মতি জানান। দুপুরের বিলম্বিত খাবার গ্রহণের পর নির্বাচন কমিশনের সদস্যগণ সেখান থেকে চলে যান। তারা জানিয়ে যান যে, কার্যকরী কমিটির সুপারিশসমূহ নিয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা শেষে নির্বাচনী তপসিল ও বিধিমালা চূড়ান্ত করবেন। প্রয়োজনে আবারো বসবেন কার্যকরী কমিটির সাথে।
সবকিছু ঠিকঠাকমতই চলছিল। কিন্তু খাবারের পর আবারো কার্যকরী কমিটির সভার কার্যক্রম শুরুর তাগিদ দেয়া হয়। এ সময় বলা হয় যে, ক্লাবের আয়-ব্যয়ের হিসাব চূড়ান্ত হবার পরও কেন সাধারণ সদস্যরা এ নিয়ে প্রশ্নের অবতারণা করছেন। এটি ক্লাবের ভাবমূর্তি বিপন্নের সামিল। এটি বন্ধ করার প্রস্তাব দেন সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাঈদ। গত ৪ বছর ক্লাবের সার্ভিস দেয়ার জন্যে সভাপতি ও সেক্রেটারিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তাবও তিনি করেন। এ প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করে নির্বাহী সদস্য লাবলু আনসার বলেন, ‘সামনে সাধারণ সভা হবে, সেখানে সাধারণ সদস্যরা যে কোন বিষয়ের অবতারণার অধিকার রাখেন। আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়েও যদি তাদের কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে কার্যকরী কমিটির পক্ষে সেক্রেটারি ও কোষাধ্যক্ষ সে জবাব দেবেন। এতেও যদি কোন সদস্য সন্তুষ্ট না হন তাহলে কার্যকরী কমিটির পক্ষে অন্য যে কেউ ব্যাখ্যা/বিশ্লেষণ দিতে পারবেন।’ ‘একইভাবে গত ৪ বছরের কাজের জন্যে ধন্যবাদসূচক সিদ্ধান্তও সাধারণ সভাতেই এসে থাকে’-বলেন লাবলু। এরপর সেক্রেটারি প্রস্তাব করেন ক্লাবের সদস্য হতে আগ্রহীদের আবেদনগুলো বিবেচনার জন্যে। এর বিরোধিতা করেন লাবলু আনসার ও শহিদুল ইসলাম। তারা বলেন, জরুরী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের পর সে সব আবেদন বিবেচনার বিষয় আসবে, এখন নয়। এতে সন্তুষ্ট না হয়ে সেক্রেটারি এ ব্যাপারে ভোট গ্রহণের দাবি জানান অর্থাৎ উপস্থিত সদস্যগণের মধ্যে ভোটে দিতে চান। জরুরী সভায় সকল সদস্যের সম্মতিতে গৃহিত সিদ্ধান্তের পরিপন্থিভাবে কার্যকরী কমিটির এমন প্রক্রিয়ায় সায় দিতে না পারায় সভাস্থল ত্যাগ করেন লাবলু আনসার। এরপর সেখানে আরো ছিলেন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ ওয়ালিউল আলম এবং কানু দত্ত। জানা যায়, সৃষ্ট উত্তেজনার এক পর্যায়ে দর্পণ কবীর চড়াও হন শহিদুলের ওপর। এ নিয়ে এক পর্যায়ে মারপিটেরও উদ্ভব হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আসে এই পার্টি সেন্টারে। পুলিশের এ্যাম্বুলেন্সেই শহিদুলকে নেয়া হয় হাসপাতালে।
শহিদুল এক লিখিত বিবৃতিতে সে সময় বলেছেন, নির্বাহী সদস্য লাবলু আনসার যখন সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সভা থেকে বের হয়ে যান তারপর তাকে মিটিংয়ে ফিরিয়ে আনার জন্য আমি উপস্থিত সবাইকে অনুরোধ জানাই। আমিও এজেন্ডাবহির্ভূত বিষয় সভায় না আনার জন্য এবং প্রয়োজনে অন্য আরেকটি মিটিং ডাকার অনুরোধ জানাই। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক দর্পণ কবীর এতে তীব্র আপত্তি জানান। একপর্যায়ে আমি সভা শেষ করার জন্য সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ এবং রেজ্যুলেশন খাতায় সমাপ্তি স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বললে সাধারণ সম্পাদক আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। আমি গালি না দেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে টেবিলের আরেকপ্রান্ত থেকে আমার কাছে এসে চেয়ার উঁচিয়ে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করে এবং বলতে থাকে ‘তোকে আজকে মেরেই ফেলবো।’ এরপর আমার বাম পাঁজরে সজোরে লাথি এবং আমার ডান গালে ঘুষি মারে। শহিদৃুল বলেছেন, এর আগেও গত ৭ ডিসেম্বর কার্যকরী কমিটির মুলতবী সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যা হয়েছিল তা পরিবর্তন করে ভিন্ন কথা রেজ্যুলেশনে লেখার অভিযোগ রয়েছে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এ কারণে আমি সভা সমাপ্ত করে রেজ্যুলেশনে স্বাক্ষর করার কথা বলি।
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দর্পণ কবীরের অনিয়মের বিষয়টি কার্যকরী কমিটির অধিকাংশ সদস্য অবহিত রয়েছেন। এর আগে কার্যকরী কমিটির বিভিন্ন সভায় তহবিল তছরূপসহ অন্যান্য অনিয়মের প্রসঙ্গ তুললে তখনও তিনি অশালীন আচরণ করেন বলে উল্লেখ করেন শহিদুল।