অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসের মুখে শতবর্ষী জমিদারবাড়ি
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে একশ বছরের পুরনো জমিদারবাড়ি। জমিদারবাড়িটিতে রয়েছে তিনটি পুকুর, একটি দুই তলা ভবন, একটি তিন তলা ভবন এবং পাশাপাশি দুটি জমিদারবাড়ি মিলিয়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ একর জমি। তবে যত্নের অভাবে বাড়িটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে চলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়িটি নির্মিত হয় বাংলা ১৩২১ সালে (প্রায় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে)।
মথুরা মোহন সাহা ও পেরি মহন সাহার নামানুসারে এই জমিদারবাড়িটি এলাকায় পরিচিত। এক সময় এ জমিদারবাড়ি ছিল ঐশ্বর্যের প্রতীক। জমিদার পরিবারের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ছিল গোটা অঞ্চলে। কালের আবর্তে জমিদার পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেলে আজ সেই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে বসেছে।
বর্তমানে বাড়িটির অধিকাংশ অংশ ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। দেয়ালে ফাটল, শ্যাওলা, ঝোপঝাড় আর অযত্ন-অবহেলায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে পুরো এলাকা। বাড়ির আশপাশে বসবাসও কমে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দিদার মেম্বার বলেন, ‘আমাদের এলাকার এই জমিদারবাড়ি ইতিহাসের অংশ।
অনেক জমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত আছে, চাইলে এটিকে পর্যটন স্পটে পরিণত করা সম্ভব। এতে এলাকার উন্নয়ন হবে, নতুন প্রজন্মও অতীতের ইতিহাস জানতে পারবে।’
জমিদার পরিবারের বংশধর সঞ্জয় সাহা বলেন, ‘জমিদার মথুরা মোহন সাহা ছিলেন আমার বড় বাবা, আমার বাবার নাম প্রমদ সাহা। এক সময় আমাদের অনেক জমি ছিল। পাশে যে আরেকটি বাড়ি আছে সেটি পেরি মহন সাহার নামে পরিচিত।
তারা প্রায় ৫০ বছর আগে এলাকা ছেড়ে চলে যান। কেউ সিলেট, কেউ যশোর, নারায়ণগঞ্জ কিংবা ঢাকায় চলে গেছেন।’
স্থানীয়রা জানান, এক সময় এই বাড়িতে সামাজিক অনুষ্ঠান, বৈঠকখানা ও জমিদারি কার্যক্রম চলত। এখন তা শুধুই স্মৃতির অংশ হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বা বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংরক্ষণের জন্য। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এটি সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গেলে মেঘনা উপজেলার ঐতিহ্য দেশজুড়ে পরিচিতি পাবে এবং এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। শতবর্ষী এই জমিদারবাড়িটি যদি দ্রুত সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে মেঘনা উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নতুনভাবে আলো ছড়াবে।






