আ. লীগ নেতার ‘ফরমায়েশি’ প্রতিবেদন দাখিল তহশিলদার মোতাহারের বিরুদ্ধে
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের ওলিপুরে ভূমি সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ঘিরে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় রাজিউড়া ইউনিয়নের তহশিলদার মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি কোনো নোটিশ ছাড়াই এবং বাদীপক্ষের বক্তব্য না শুনেই একতরফাভাবে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
বাদীপক্ষের দাবি, ব্রাহ্মনডুরা ইউনিয়ন আওয়ামী শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম টেনুকে অনৈতিক সুবিধা দিতেই এই পরমায়েশি’ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বাদীপক্ষ জানায়, সাহিদা আক্তার রুনুর কাছ থেকে আমমোক্তার পাওয়ারে অলিপুর গ্রামের ৭ শতক ভূমির দায়িত্বে ছিলেন জিয়াউর রহমান জিয়া। এ জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে জিয়া হবিগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা (নং ৮৫০/২০২৫) দায়ের করেন। মামলার তদন্ত ভার পান তহশিলদার মোতাহার হোসেন।
বাদীপক্ষের অভিযোগ, তহশিলদার তাদের আইনসঙ্গত অধিকার উপেক্ষা করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রতিপক্ষের পক্ষে অবস্থান নেন। বাদীর পিতা খিরাজ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের কোনো বক্তব্য না নিয়েই মনগড়া প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাকে সুবিধা দিতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিবেদনে অসঙ্গতি ও ‘লুকোচুরি’র অভিযোগ-তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অলিপুর মৌজার আর এস ১৯২ নং দাগের জমিটি নিলামের মাধ্যমে হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ নেতা ফজলে রাব্বি রাসেল ক্রয় করেছেন এবং সেখানে ১৭ জন ভাড়াটিয়া ব্যবসা করছেন। তবে প্রতিবেদনে শুধুমাত্র ভাড়াটিয়াদের চুক্তিপত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে বাদী পক্ষ দাবি করছে, তাদের বৈধভাবে কেনা জমি নিয়ে ইতোমধ্যে হবিগঞ্জ ল্যান্ড সার্ভে আদালতে আরও একটি মামলা (নং ৪৭০/২০২৫) চলমান রয়েছে। এমন অবস্থায় এ তদন্ত প্রতিবেদনকে তারা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ন্যায়ের পরিপন্থী বলে আখ্যা দিয়েছেন। আরও গুরুতর অসঙ্গতি উঠে এসেছে তহশিলদারের বক্তব্যে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তহশিলদার মোতাহার হোসেন তদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে লুকোচুরি করেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, তদন্তকালে তিনি বাদী জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। অথচ জিয়াউর রহমানের পিতা নিশ্চিত করেছেন যে, তার ছেলে গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত কারাগারে রয়েছেন। ফলে তার বক্তব্য নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, “আমার ছেলে জেলে, মোতাহার হোসেন তদন্ত একতরফাভাবে করেছেন। আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এটি ঢাহা মিথ্যা। তাড়াহুড়োর অজুহাত, প্রভাবশালীর স্বার্থ রক্ষা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তহশিলদার মোতাহার হোসেন প্রথমে স্বীকার করেন যে তিনি বাদীকে ডেকেছিলেন। তবে পরে তিনি ইউএনও’র নির্দেশে তাড়াহুড়ো করে রিপোর্ট প্রস্তুতের কথা জানান। মোতাহার হোসেন বলেন, “হঠাৎ করে ইউএনও রিপোর্ট দিতে বললেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাড়াহুড়ো করে রিপোর্ট প্রস্তুত করতে হয়েছে। অন্যদিকে, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সত্য নয়। আমি কাউকে সুবিধা দিইনি। তবে স্থানীয়দের দাবি, যাদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে তারা সকলেই আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা যদি রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতিস্বীকার করেন, তবে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তারা মনে করছেন, সরকারি কর্মকর্তারা প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলকে সুবিধা দিতে গিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। ভুক্তভোগীরা এ ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একইসঙ্গে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে দোকানপাট বন্ধের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, যেকোন সময় সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয়রা।








