তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬শত শিক্ষার্থীর ভার তিন শিক্ষকের কাঁধে
এক সময়ের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা হাওর পাড়ে শিক্ষার আলো ছড়াতো তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়টি। সেই বিদ্যালয়টি দায়িত্বশীল কতৃপক্ষের খামখেয়ালি ও উদাসিনতার কারনে শিক্ষা ব্যবস্থা গত তিন যুগ ধরে ভেঙে পড়লেও এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না দায়িত্বশীল কতৃপক্ষ।বরং একের পর এক বদলী বানিজ্য,প্রশিক্ষণ ও ডেপুটেশন থাকায় সুযোগ দেয়ায় বিপর্যয়স্থ হয়ে পরেছে পাঠ্যদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। ফলে প্রতি বছরেই ফলাফলে ধস নেমেছে। এর মধ্যেই সর্বশেষ চারজন শিক্ষক থাকার পরও দু জনকে সম্প্রতি বদলির অনুমতি দিয়েছেন উর্ধবতন কর্মকর্তাগন। এ নিয়ে অভিভাবকসহ উপজেলা জুড়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়টিতে এমনি অবস্থা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,তাহিরপুর উপজেলা সদরের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের শনি হাওর ঘেঁষে ১৯৫০সালে তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৫৪সালে নিম্ন মাধ্যমিক,১৯৬০সালে মাধ্যমিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এ সময় ১১জন শিক্ষক ও ৫ শত শিক্ষার্থী ছিল। ১৯৮৭ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের পর থেকেই শিক্ষক সংকট শুরু হয়। তিন যুগ পরও পূরণ হয়নি প্রধান শিক্ষকের পদ। বর্তমানে চারজন শিক্ষক দিয়ে পাঠ্যদান চললেও বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুপেশ দাশ নামে এক শিক্ষক বদলি হয়ে চলে গেছেন। চলতি মাসের শেষে ব্যাংকে যোগদানের জন্য চলে যাবেন তপু বিশ্বাস নামে আরেক শিক্ষক। এরফলে দুই জন শিক্ষক জামাল উদ্দিন (ভৌত বিজ্ঞানের) এবং এ এইচ এম লিয়াকত (সামাজিক বিজ্ঞান) এর বিপরীতে ৬০০শত শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।
বিদ্যালয়ে বাংলা,ইংরেজি,গণিত,ইসলামিয়াত,শারীরিক শিক্ষা শিক্ষকের পদ শুন্য,শূন্য হবে কৃষি শিক্ষা। এছাড়াও বিএড প্রশিক্ষণে আছে জীববিজ্ঞানের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। শূন্য পদে কর্মরত আছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক ফয়যূল হুসাইন। অফিস সহকারীর পদ শূন্য। অফিস সহায়কের ২টি পদের মধ্যে একটি শূন্য। ১৯৮৭ সাল থেকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক সংকটে ভোগছে ২০০৪ সাল থেকে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা এই বিষয়ে সমাধানে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। ফলে প্রতি বছরেই শিক্ষার্থীর ফলাফলে ধস নামছে।
বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী সামরুল ইসলাম, শ্যামল বর্মন জানান,বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১১জন শিক্ষকের পদ থাকলেও ৩ জন শিক্ষক কর্মরত,একজন অফিস সহকারী,একজন অফিস সহায়কের পদও শূন্য রয়েছে। কিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলে আর দায়িত্বশীল কতৃপক্ষই বা কি করেন তা আমাদের বোধগম্য হয় না। এভাবে উপজেলার একটি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগন ক্ষোভের সাথে জানান,বিদ্যালয়ে শিক্ষক সহ জনবল সংকটের কারনে শিক্ষার্থীদের জীবন ধংশের দিকে যাচ্ছে। পাঠ্যদান চলছে নামকাওয়াস্তে এর মধ্যে শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বশীলগন বদলী বানিজ্য করছেন বলে অভিযোগ করেন।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্নব পুরকায়স্থ, লুইপা বেগমসহ অনেকেই জানান,দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটের কারনে আমরা সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে ক্লাস করতে পারছি না। তাই সিলেবাসও সম্পন্ন হয়না।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস রশ্মিসহ অনেকেই জানান,শিক্ষক সংকট দুর না করায় নিয়মিত পাঠাদানে ব্যগাত সৃষ্টি হচ্ছে।
আমরা ভাল ফলাফল করতে পারছি না।
ভৌত বিজ্ঞানের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ জামাল উদ্দিন জানান,শিক্ষক সংকটের কারনে বিদ্যালয়টির প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ ও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফয়যূল হুসাইন জানান, শিক্ষক সংকটসহ প্রতিষ্ঠানটির জনবল সংকটের বিষয়ে বারবার উর্ধবতন কতৃপক্ষের কাছে জানানো হলেও কোনো সমাধান হয়নি। মোট ১১ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর গত চার মাসের মধ্যে তিনজন বদলী,চলতি মাসে আরও একজন ব্যাংকে চাকরী পেয়েছেন তিনিও চলে যাবেন। ফলে ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রমে চরম ভাবে ব্যাগাত সৃষ্টি হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান,দীর্ঘদিন ধরে তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান,আমি আমার উর্ধবতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি শিক্ষক সংকট এর বিষয়ে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।
এবিষয়ে সিলেট আঞ্চলিক উপ পরিচালক এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয় অবগত আছি। আমি বার বার শিক্ষক সংকট এর বিষয়ে বলি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। আর বদলী করে মাউশি আমার কিছুই করার থাকে না। তবে বদলী করার সময় কোন স্কুলে কতজন শিক্ষক আছে তা দেখে বদলী করলে এভাবে সংকট তৈরী হতো না।







