বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায় বাংলাদেশের শিফা
বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশের সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা। ইন]ভিসিবল পাওয়ার ফিমেল লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে তাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম। বিভিন্ন দেশ থেকে আবেদন করা দুই শতাধিক নারীর মধ্য থেকে বাছাইকৃত শীর্ষ ৫০ জনের মধ্যে জায়গা করে নেন তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সমাজকর্ম বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ভারতের মেঘালয়ের নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটিতে গবেষণায় অংশ নেন সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা। পরে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসে (ইউআইটিএস) প্রভাষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন গাজীপুরের এ সন্তান।
গত ফেব্রুয়ারিতে সোচিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইউথ ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশ থেকে ৮৫ জন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে অংশ নেন শিফা। এর আগে ২০২৪ সালের মে মাসে মস্কোতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস কমিটিতে বাংলাদেশের হেড হিসেবে নেতৃত্ব দেন তিনি। একই বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার ওরেনবুর্গ শহরে অনুষ্ঠিত ইউরেশিয়া গ্লোবালে অংশ নেন, যেখানে বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পান শিফা।
মূলত শিফার বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম, অর্জিত পুরস্কার-স্বীকৃতি, পেশাদারী কাজের অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন, গবেষণাকর্ম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কাজের প্রমাণপত্র থাকায় কয়েক ধাপের প্রক্রিয়া শেষে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর একজন হিসেবে মনোনীত হন। শিক্ষা জীবন থেকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তার কাজ শুরু, পরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসহায় নারী এবং শিশুদের নিয়েও কাজ করেছেন শিফা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের তরুণদের সফট স্কিল ও কমিউনিকেশন স্কিল উন্নয়নে কাজ করছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠা করেছেন ভিলেজ ইমপাওয়ারমেন্ট নামে একটি সংগঠন।
বর্তমানে তরুণদের কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের উপস্থাপন করা নিজের লক্ষ্য জানিয়ে সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা বলেন, মূলত মানুষকে সুন্দর করে এপ্রোচ করা, ভালো কথা বলতে পারা তথা কমিউনিকেশনে দক্ষ হলে পৃথিবীর সব প্রান্তে মানুষ একে অন্যের সঙ্গে রিলেট করতে পারে, ফলে সব কাজ সহজ হয়ে যায়। তবে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় সঠিকভাবে কমিউনিকেট করতে না পারায়, ইমিগ্রেশনে বা বিদেশে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এসব ক্ষেত্রে বেসিক কমিউনিকেশন স্কিল জানলে সহজেই এসব ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
দেশের মানুষকে যদি যথাযথ এপ্রোচ, ম্যানার, নরমস এবং রুলসের বিষয়ে সাম্যক ধারণা দেয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদেরকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন শিফা। তার কথায়, ‘আমি মূলত এই জিনিসটা নিয়েই কাজ করতে চাই। আমার কাছে মনে হয়েছে তরুণ প্রজন্ম, যারা এগুলো শিখতে চায়, নিজেদের পরিবর্তন করতে চায়, তাদের যদি আমরা এগুলোতে দক্ষ করতে পারি তাহলে খুব সহজেই তারা নিজেদেরকে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে পারবে।’
শতাধিক তরুণ-তরুণীকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষ করেছেন জানিয়ে শিফা বলেন, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে এসব ছেলেমেয়েরা সব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদেরকে দক্ষ এবং নৈতিকতা সম্পন্ন করে তুলতে পারলে আমরা সুন্দর ও সমৃদ্ধ জাতি পাবো। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, শিফা ২০১৯-২০ সালে টোস্টমাস্টার্স ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব পাবলিক স্পিকিং প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্পিচ কনটেস্ট চ্যাম্পিয়ন, পরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সেমিফাইনালিস্ট হিসেবেও লড়েছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাডভান্সড টোস্টমাস্টার্স ক্লাবের নারী সভাপতিও। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে দুটি ক্লাবের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নেয়া এই নারী।







