রুহের জগতে করা অঙ্গীকার যেভাবে পূরণ করব
মানবজাতিকে পৃথিবীতে পাঠানোর আগেই রুহের জগতে তাদের কাছ থেকে এই মর্মে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয় যে আল্লাহ তাদের প্রতিপালক। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তার বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলে, হ্যাঁ অবশ্যই আমরা সাক্ষী রইলাম। এটা এ জন্য যে তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বলো, আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭২)
উল্লিখিত স্বীকারোক্তির মাধ্যমেই আল্লাহর প্রতি বান্দা তার ঈমান ও আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছে।
আর এই অঙ্গীকারের মধ্যে তিনটি দিক আছে। তা হলো—
১. বিশ্বাসের অঙ্গীকার : আল্লাহর প্রতি বান্দার অঙ্গীকার হলো, সে আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাসে সংশয়হীন হবে, আল্লাহর ইবাদতের নিষ্ঠাবান হবে, নিখাঁদ আল্লাহভীতির অধিকারী হবে এবং আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করবে।
২. আনুগত্যের অঙ্গীকার : বান্দা কোনো প্রকার দ্বিধা-সংশয় ছাড়াই আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মান্য করবে এবং এতেই নিজের কল্যাণের বিশ্বাস রাখবে।
৩. সদাচারের অঙ্গীকার : আচার-আচরণের ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি বান্দার অঙ্গীকার হলো সে নিজে উত্তম চরিত্র ও নৈতিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে এবং আল্লাহর সব সৃষ্টির প্রতি সদয় আচরণে করবে।
অর্থাৎ সমগ্র দ্বিনই আল্লাহর কাছে বান্দার কৃত অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত।
অঙ্গীকারবদ্ধ বান্দার বৈশিষ্ট্য : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাঁর প্রতি অঙ্গীকার পূরণকারী বান্দার বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণনা করেছেন—‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সব কিতাব ও নবীদের প্রতি ঈমান আনলে এবং আল্লাহর ভালোবাসায় আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পর্যটক, সাহায্য প্রার্থীদেরকে ও দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, নামাজ আদায় করলে, জাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে অর্থসংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা, যারা (উল্লিখিত বিষয়গুলো পালন করে) সত্যপরায়ণ এবং এরাই আল্লাহভীরু।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৭৭)
অঙ্গীকার যেভাবে পূরণ করব : সমগ্র দ্বিন পালনই আল্লাহর প্রতি বান্দার অঙ্গীকার, যা পরিপূর্ণভাবে আদায় করা সবার জন্য সহজসাধ্য নয়।
তবে বান্দা নিয়তের বিশুদ্ধতা ও যথাযথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অঙ্গীকার পূরণ করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে শাহাদাত প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। যদিও সে আপন শয্যায় ইন্তেকাল করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৮২৪)
অঙ্গীকার পূরণেই বান্দার সাফল্য : আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূরণেই বান্দার সামগ্রিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আনুগত্য ও ন্যায়সংগত বাক্য তাদের জন্য উত্তম ছিল।
সুতরাং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো যদি তারা আল্লাহর প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার পূরণ করত, তবে তাদের জন্য তা অবশ্যই মঙ্গলজনক হতো।’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ২১)
আল্লাহ সবাইকে তাঁর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূরণের তাওফিক দিন। আমিন।