পা শরীল চলে না, ভাতার টাকা নিতে ব্যাংকে আইতে হয়
হাসিনা বেগম (৭৬) এসেছে বয়স্ক ভাতা নিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর পাড়ে রতনপুর গ্রাম থেকে। তার মত অনেকেই এসেছেন সোনালী ব্যাংকে ভাতার টাকা উত্তোলন করতে। এসময় তিনি বলেন, পা চলে না রে বাবা এরপরও ভাতার টাকা তুলার লাগী নৌকায় সকালে বাড়ি থেকে রওনা দিয়া আইছি। এই টকার লাগী কষ্ট করতে হয়, টাকাও খরচ করতে হয় আর একটা দিন লাগে। সারাদিন যাইয়া সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরতে হয়। আসা যাওয়ার খরচ দুপুরে খাওয়া সব মিলিয়ে ৫-৬ টাকা খরচ হয়। এই টাকায় আমাদের উপকার হলেও কষ্ট বেশী হয়,যদি টাকা টা ব্যাংকের একাউন্টে না হয়,বিকাশে না হয় ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাংকের প্রতিনিধি গিয়ে টাকা টা দিলে আমরা মত হাজার হাজার মানুষ কষ্ট থেকে মুক্তি পেত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,তাহিরপুর উপজেলায় ১৩ হাজার ভাতা ভোগী রয়েছে। বয়স্ক মাসে ৬৫০, বিধবা ৬৫০, প্রতিবন্ধী ৯০০, হিজরা ৬৫০ টাকাসহ ১০ টি ক্যাটাগরিতে ১৩ হাজার ভাতা প্রদান করা হয়। আর বছরের দুই বার দেয়া হয়।
ভাতা ভোগীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, প্রতিবন্ধী,বিধবা, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধা সরকারের পক্ষ থেকে দিচ্ছে। সেই সুবিধা নিতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সুবিধা ভোগী হাজার হাজার শিশু,নারী,পুরুষ। নিদিষ্ট সময়ে এই ভাতা নেয়ার জন্য উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের প্রত্যান্ত এলাকা থেকে বর্ষা মৌসুমে নৌকায় আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হেটে মোটরসাইকেল আসতে হয় ঝড়,তুফান সহ্য করে উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংকে বাধ্য হয়ে। এতে করে খরচের পরিমান ও কষ্ট দুটিই বেড়ে যায়। অনেক সময় অসুস্থ শরীল নিয়ে নৌকা, অটোরিক্সা দিয়ে ও পায়ে হেটে বয়স্ক নারী ও পুরুষ এবং প্রতিবন্ধীদের আনতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছেন সুবিধা ভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
সূর্বন রানী সেন (৮০) তিনি এসেছে বানিয়াগাও থেকে। চোখে দেখেন না তিনি এরপরও এসেছেন ভাতার টাকা তুলতে আরেক জনের সহযোগিতায়। তিনি জানান,টাকা পাওয়ার জন্য হাওর পাড়ি দিয়া আসছি। আমাদের সুবিধার জন্যই ত সরকার টাকা দিছে,সেই টাকা নিতে এসে আমাদের কষ্টের শেষ নাই। টাকা গুলো ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ব্যাংকের প্রতিনিধি না হয় বিকাশের এজেন্টের মাধ্যমে দিলে সহজে নিতে পারতাম,কষ্ট থেকে বাচঁতাম। একেই কথা জানালেন,নোয়াবন গ্রামের বাসিন্দা ঝর্না রানী পাল (৮০), সীমান্ত এলাকা বাগলী থেকে আসা আমীর আলী(৮০), আব্দুল কাদির (৭৮),লাকমা থেকে আসা শক্কুর বানু (৮০)।
উপজেলা শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান,বর্ষার সময় পানিতে চারপাশ ভরপুর থাকে হাওর পাড়ে গ্রাম গুলো তাই নৌকা ছাড়া চলা মুশকিল আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হেটে না হয় মটর সাইকেল হাওর পাড়ে ভাতা ভোগীদের আসতে হয়। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। তাই প্রতিবন্ধী, বিধবা, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগীদের জন্য বিকাশ, নগদ বা সহজ পথ করলে উপকৃত হবে।
এই বিষয়ে তাহিরপুর সোনালী ব্যাংক ম্যানাজার অর্পণ জেত্রা জানান, ভাতার টাকা উত্তোলন করতে হলে আমাদের ব্যাংকে আসতে হয় হাজার হাজার ভাতা ভোগীদের। আর আমাদেরকেও এই ভাতার টাকা দিতে হিমসিম খাচ্ছি। তার জন্য বিকল্প সহজ চিন্তা করা হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান মানিক জানান, উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকা থেকে অনেক কষ্ট করে নৌকা ও মটর সাইকেল করে আসতে হয় উপজেলার সোনালী ব্যাংকে ভাতার টাকা উত্তোলন করতে। ভাতা ভোগীদের সুবিধার্থে নিজ নিজ বিকাশ বা নগদ একাউন্টে বা তাদের সুবিধা মত দিলে তাদের আর উপজেলা সদরে ব্যাংকে আসতে হবে না।







