সন্ত্রাসী হামলায় চোখ হারানোর শঙ্কায় পিকআপ চালক
বালুলুটে জড়িত স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা সাজুর হামলায় চোখ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসিন্দা পিকআপ চালক সোহেল মিয়া। বালু আনতে গেলে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাজুর হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন মৌলভীবাজারের শেরপুরের চারজন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন পিকআপ চালক সোহেল মিয়া (১৮)। হামলায় তার ডান চোখ মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। বর্তমানে তিনি সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীনাক থেকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য গেছেন। তবে চিকিৎসকরা চোখ স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে হবিগঞ্জের নবিগঞ্জ উপজেলার ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামস্থ শেরপুর ইকনোমিক জোন ও নবীগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সড়ক এলাকায়।
আহতরা হলেন শেরপুরের নিমার মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া (১৮) ও জাহাঙ্গীর মিয়া (৩০), পাহাড়পুরের গফুর মিয়া ছেলে সুনু মিয়া (৩২) ও শামীম মিয়া (২৮)।
এতে বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন চোখে আঘাতপ্রাপ্ত সোহেল মিয়ার বড় ভাই আহত জাহাঙ্গীর মিয়া।
থানায় দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ১০ মিনিটে তারা বালু আনতে গেলে স্থানীয় একদল যুবক বাধা দেয় এবং মারামারি করে। এসময় তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করা হয়। প্রতিবাদ করলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়।
এতে থানায় দায়ের করা অভিযোগে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের মানিক মিয়ার ছেলে আউশকান্দি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রার্থী সাজু মিয়া (২৮), আব্দুল মতিনের ছেলে ইমরান মিয়া (২৫), দুদু মিয়ার ছেলে ছুরুক মিয়া (৩০), নজিব উল্লার ছেলে মিজান মিয়া (২৫), আছদ্দর মিয়ার ছেলে মদরিছ মিয়া (৪০), নজিব উল্লার ছেলে শায়েখ মিয়া (২১), মদরিছ মিয়ার ছেলে রায়হান মিয়া (২২), দ্বিঘর ব্রাহ্মণগ্রামের (ডালারপাড়) মনির মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (৩২), পারকুল গ্রামের মশাহিদ মিয়ার ছেলে কামরান মিয়া (২০), ভবানীপুর গ্রামের আব্দুন নূরের ছেলে আল-আমিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, হামলায় সোহেল মিয়ার ডান চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। জাহাঙ্গীর মিয়ার কাছ থেকেও ২০ হাজার টাকা ও একটি স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে জানতে চাইলে কেউই মুখ খুলতে চাননি। নাম গোপন রাখার শর্তে একজন জানান, এ বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন সাজু। মজলিশপুর ও পাওয়ার প্ল্যান্ট এরিয়ার বালুর ব্যবসাসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন সাজু গং। এর আগে এই এরিয়ায় মার্ডারও হয়েছে, যা সাজুদের দিকেই ইশারা করেছে কিন্তু কেউই ভয়ে কথা বলেনি।
এ বিষয়ে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত সোহেল মিয়ার বড় ভাই আহত জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, “আমাদের স্ট্যান্ডের সেক্রেটারি আমাকে ওই পাড়ের জাকারিয়া ভাইয়ের বালু আনতে পাঠিয়েছেন। আমি গিয়েছি দুজন লেবার নিয়ে, সাথে আমার ভাইও (সোহেল মিয়া) ছিল। বালু নিয়ে রাস্তায় উঠতে গেলে হর্ন দেয়, হর্ন দেয়ার কারণে মজলিশপুরের এমরান এসে আমার কলারে ধরে বলেন হর্ন কেন দিলাম। তারপর আমাকে গাড়ি থেকে নামায় এমরান। পরে লেবাররা ওখানেই এমরানকে বলেন আমার ওস্তাদকে কেন মারছেন। কথা কাটাকাটি হয়। কথা-কাটাকাটি শেষে এখান থেকে চলে গিয়ে মেইন রোডের ওখানে গেলে পরে জাবেদ ও সাজু আসে। সাজু স্বেচ্ছাসেবক, সে বিএনপির সাথে জড়িত। সাজু আর জাবেদ হুমকি দিয়েছে আমাদের। এতে তর্কাতর্কি হলে পরে জিআই পাইপ দিয়ে আমার গালে ও পিঠে মেরেছে আর চেলি (গাছের লাকড়ি) দিয়ে আমার ভাইকে মেরেছে চোখে। লেবারদেরও মেরেছে। কিলাকিলিও করেছে। আমি হর্ন দেয়ার কারণে আজকে এই অবস্থা আর আমার ভাইয়ের চোখটা চলে (নষ্ট) হয়েগেছে। আমার ভাই হসপিটালে আছে, ডাক্তার বলেছে ৯৯% চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। থানা থেকেও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছিনা। থানা যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা বড় পদক্ষেপ নিব।”
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাজু মিয়া বলেন, “ওই পাড়ের জাকারিয়া ভাই আমাকে কল দিয়েছেন এক গাড়ি বালুর জন্য। আমি বললাম পাঠিয়ে দেন গাড়ি। ঘন্টা খানেক পর আমাকে বললেন, আমার মাল আনতে গেলে মার লেগেছে। তো আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? উনি বিস্তারিত বলার পরে আমিও গেলাম বালুর ওখানে। পরে গিয়ে শুনি বালুর ড্রাইভার মনে হয় হর্ন বাজিয়েছেন, তারপর সামনে থাকা এলাকার এক লোক গালি দেয়ায় ওখানে ড্রাইভারও গালিগালাজ করেছেন। সেখান থেকেই ভেজাল শুরু হয়। পরে ড্রাইভার আমার বালুর জায়গা থেকে এসে মেইন রোডের এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা এসেছিলাম সমাধান করার জন্য, জাকারিয়া ভাইয়ের লোকেরাও ছিল। তখন শেরপুরের ট্রাক সমিতির সভাপতি গরম গরম কথাবার্তা বলছিল। কথাবার্তার মধ্যেই এখান থেকেই মারামারি শুরু হয়। অন্ধকারের মধ্যে কে কাকে মেরেছে তা দেখিনাই। আমি স্বেচ্ছাসেবক দলের আউশকান্দি ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী। এখানে ব্যবসায় রাজনীতি আনলে হবে না। ব্যবসা শুরু করেছি মাত্র ১ বছর হয়েছে।
এব্যাপারে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ও.সি গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা তদন্ত করছি, এটা খনো তদন্তাধীন আছে। তদন্ত শেষ হলে পরে রিপোর্ট দিব।”