৮ আমলে মর্যাদা বাড়ে
দুনিয়া ও আখেরাতে মর্যাদার একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা মর্যাদা দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন। মানুষের মর্যাদা শুধু সামাজিক অবস্থান বা অর্থবিত্তের দ্বারা নির্ধারিত নয়, বরং তা সৎকাজ, আল্লাহর নৈকট্য এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এমন কিছু কার্যকরী পথ নির্দেশ করা হয়েছে, যা বান্দাকে আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান করে তুলে এবং পৃথিবীবাসীর কাছেও মর্যাদার অধিকারী করে। এই প্রসঙ্গে কোরআন ও হাদিসের আলোকে ৮টি বিশেষ আমল উল্লেখ করা হলো।
আল্লাহভীত : আল্লাহভীতি বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে। আকাশবাসী ও জমিনবাসীর কাছে তাকে সম্মানিত করে তোলে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে আল্লাহভীরু বান্দাকে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তিরূপে আখ্যায়িত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত ওই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু।’ (সুরা হুজুরাত ১৩)
দ্বীনি জ্ঞান অর্জন : যারা দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করে এবং সেই জ্ঞান জীবনে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে, মহান আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীবাসীর কাছে সম্মানিত করে তোলেন এবং পরকালেও তাদের জন্য সম্মানিত হওয়ার ব্যবস্থা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা ভালোভাবে খবর রাখেন।’ (সুরা মুজাদালাহ ১১)
তাহাজ্জুদ আদায় : তাহাজ্জুদ নামাজ বান্দাকে পৌঁছে দেয় আল্লাহর নৈকট্যে। তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা কিয়ামতের দিন প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত হবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে, যা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসনীয় স্থানে পৌঁছাবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল ৭৯)
নেককার সন্তানের দোয়া : মা-বাবা যদি কোনো নেককার সন্তান দুনিয়ায় রেখে যান, আর সে তার মা-বাবার জন্য দোয়া করে, তবে সেই দোয়ার বদৌলতে মহান আল্লাহ জান্নাতে মা-বাবার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ জান্নাতে তার কোনো নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব! আমার এ মর্যাদা কীভাবে বৃদ্ধি পেল? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তান-সন্ততির ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)
কোরআন চর্চা : কোরআন এমন এক আলোকবর্তিকা, এর সঙ্গে যে সম্পর্ক গড়ে, মহান আল্লাহ তাকে উঁচু মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। আর যে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে নিপতিত হয় লাঞ্ছনার অন্ধকারে। যারা দুনিয়ায় কোরআন শিখবে এবং তা অনুযায়ী আমল করবে, কেয়ামতের দিন তাদের বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, কোরআন কেয়ামত দিবসে হাজির হয়ে বলবে, হে আমার রব, একে (কোরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার রব, তাকে আরও পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার রব, তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি একেক আয়াত পাঠ করতে থাকো এবং ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে। (তিরমিজি)
দরুদ পাঠ : নিজের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করার একটি বড় মাধ্যম হলো দরুদ। যারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে, প্রতি দরুদে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। দরুদ পাঠ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং তার পাপ মোচন করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং তার মর্যাদা ১০ গুণ বৃদ্ধি করেন।’ (সুনানে নাসয়ি)
ভালো কথা বলা : ভালো কথা বলা ইবাদত। এটি বান্দার মর্যাদা বাড়ায় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ সহজ করে দেয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দা কোনো কোনো সময় আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক এমন কথা বলে ফেলে, যে কথা সম্পর্কে তার চেতনা নেই। অথচ এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনো আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক এমন কথা বলে ফেলে, যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই। অথচ সেই কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি)
গোপন ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়া : গোপনে নেক আমল বান্দার মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি কোরআন, হাদিস ও মুসলিম মনীষীদের বাণীতে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। জুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) বলেন, ‘কেউ যদি কোনো গোপন নেক আমল করতে সক্ষম হয়, তবে সে যেন তা করে।’ (মুসনাদে ইবনুল জাদ ১১৩)
কেয়ামতের ময়দানে মহান আল্লাহ যে সাত শ্রেণির বান্দাকে ছায়া দান করবেন, তার মধ্যে তিন শ্রেণির লোক হবে গোপনে আমলকারী। নবী করিম (সা.) বলেন, সেদিন সাত শ্রেণির ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তার (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। (তার মধ্যে অন্যতম হলো) ওই ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এই বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ আর সেই ব্যক্তি ছায়া পাবে, যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী ব্যয় করে বাঁ হাত সেটা জানতে পারে না। অতঃপর সে ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়। (সহিহ বুখারি)
আসুন, আমরা নিয়মিত ফজিলতপূর্ণ এই আমলগুলো করি। তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে মহান আল্লাহর কাছে মর্যাদার অধিকারী হতে পারব। মর্যাদার অধিকারী হতে পারব মানুষের কাছেও। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই আমলগুলো নিয়মিত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।








