বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ১০ পোষা পাখি
পাখির সঙ্গে মানুষের সখ্য বেশ পুরোনো। পাখি যুগে যুগে শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। অতি প্রাচীনকাল থেকে মানুষ পাখি পুষে এলেও আধুনিক নাগরিক জীবনে তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। শখের পাশাপাশি নানা কারণেও ইট-পাথরের শহুরে মানুষ পাখি পোষে।
পোষার জন্য পাখি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে রং, কণ্ঠস্বর বা আচরণকে মানুষ গুরুত্ব দেয়।
পোষা পাখি যেহেতু মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গী, তাই তাদের পরিচর্যাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সৌন্দর্যের বিচারে জনপ্রিয় ১০টি পাখির সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে আজকের এ আয়োজন।
১. বাজরিগার
বাজরিগার পাখি বা সংক্ষেপে বাজি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পোষা পাখি। বৈজ্ঞানিক নাম মেলোপসিট্যাক্যাস আন্ডুল্যাটাস। অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক তৃণভূমি মূল আবাসস্থল হলেও এখন এটি পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পোষা পাখি হিসেবে জনপ্রিয়। ছোট আকার, লম্বা লেজ ও উজ্জ্বল সবুজ, হলুদ, নীল, সাদা বা ধূসর রঙের মিশ্রণে বাজরিগার পাখি দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। বুদ্ধিমান এ পাখি মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে এবং সহজেই পোষ মানে। যত্ন নেওয়া সহজ, খাবার সহজলভ্য এবং স্বভাব শান্ত হওয়ায় বাজরিগার ঘরোয়া পোষা পাখির মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। মনে রাখা দরকার, বাজরিগার সামাজিক প্রাণী, তাই তাদের একা রাখা উচিত নয়।
২. কোকাটিল
কোকাটিল বন্ধুত্বপূর্ণ পাখি হিসেবে পরিচিত। এদের মাথার চূড়ায় ঝুঁটির মতো কিছু পালক থাকে, যা বেশ চিত্তাকর্ষক। মনের অবস্থার ওপর নির্ভর করে এ পালক ওঠানামা করে। এ পাখির গায়ের রং ধূসর বা হালকা সোনালি হয়ে থাকে। তবে মাথার দিকের রং কিছুটা হলুদ, যা এদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। কোকাটিল শিস দিতে পারে এবং ছোট শব্দ বা বাক্য অনুকরণ করতে দক্ষ। ছোট খাঁচা, নিরাপদ পরিবেশ এবং নিয়মিত মনোযোগ দিলে এরা অত্যন্ত বন্ধুসুলভ সঙ্গী হয়। তবে একা বা নিভৃত পরিবেশে এদের সতর্ক যত্ন প্রয়োজন।
৩. লাভবার্ড
লাভবার্ড বা অ্যাগাপরনিস ছোট, রঙিন ও অত্যন্ত সামাজিক পাখি। আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল এ প্রজাতির পাখির আদিনিবাস হলেও বর্তমানে প্রায় সব দেশে এটি পাওয়া যায়। এদের গড় আয়ু প্রায় ২০ বছর। লাভবার্ড সাধারণত ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। উচ্চস্বরে ডাকতে পারে, বিশেষ করে সকাল বা সন্ধ্যায় বেশ ডাকাডাকি করে। বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রাণবন্ত স্বভাবের কারণে লাভবার্ড পোষা পাখি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। লাভবার্ড জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে এবং একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রদর্শন করে। তাই এই পাখি বন্ধুত্ব ও স্নেহের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। ফল, বেরি, বীজ ও বিভিন্ন শস্য এদের মূল খাবার।
৪. সান কনিউর
সান কনিউর একধরনের ছোট জাতের তোতাপাখি। বন্ধুত্বপূর্ণ, অনুসন্ধিৎসু এ পাখি কথা বা শব্দ অনুকরণে আগ্রহী।সান কনিউরের শরীরের রং হলুদ, বুক কমলা–লাল, আর পা বা ডানায় মাঝে মাঝে নীল ও সবুজের ছোঁয়া থাকে। ভালো মেজাজে থাকলে শিস দেয় বা কথা বলার চেষ্টা করে এটি। আমুদে এই পাখি কখনো কখনো মানুষের সঙ্গে নানা মজায় মেতে ওঠে। ছোট বই বা কলম এদিক থেকে ওদিকে নেওয়ার মতো কাজও করে। একা বা নিষ্ক্রিয় পরিবেশে এ পাখি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।
৫. ইলেকটাস প্যারোট
ইলেকটাস প্যারোট ওশেনিয়া অঞ্চলের এক প্রজাতির বুদ্ধিমান তোতাপাখি, যা বিশেষভাবে নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। পুরুষের পালক উজ্জ্বল সবুজ, পেটে নীলচে লাল ও ডানায় নীল ছোপ থাকে। আর নারীর পালক উজ্জ্বল লাল, ডানা ও পেটের নিচের অংশে নীল বা বেগুনি রং থাকে। দেখতে মনোরম এ পাখি শান্ত, আবেগপ্রবণ এবং মানুষের সঙ্গে গভীর বন্ধন তৈরি করতে পারে। বেশ বুদ্ধিমানও। শব্দ অনুকরণ করতে পারে। বড় খাঁচা, সঠিক খাদ্য ও নিয়মিত যত্নে নিলে সুস্থ থাকে। দুই বছর বয়সে প্রজনন উপযোগী হয়। গড় আয়ু ৩০ থেকে ৪০ বছর।
৬. ইন্ডিয়ান রিংনেক প্যারাকিট
ইন্ডিয়ান রিংনেক প্যারাকিট মধ্যম আকারের তোতাপাখি। উজ্জ্বল সবুজ রং, গলার রিং ও বুদ্ধিমত্তার কারণে পোষা পাখি হিসেবে এটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পুরুষ পাখির গলায় লাল-কালো রিং দৃশ্যমান হতে ১৮ মাস লাগে। নারী পাখির সাধারণত রিং থাকে না। কথা বলা ও শব্দ অনুকরণে দক্ষ ইন্ডিয়ান রিংনেক প্যারাকিট। সঠিক মনোযোগ পেলে শেখার ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায় এদের। বড় খাঁচা, নিরাপদ পরিবেশ এবং মানুষের পর্যাপ্ত সাহচর্য ইন্ডিয়ান রিংনেক প্যারাকিটকে সুস্থ ও আনন্দময় রাখে। আয়ু ২৫ থেকে ৩০ বছর হয়।
৭. গোল্ডিয়ান ফিঞ্চ
গোল্ডিয়ান ফিঞ্চ ছোট, কিন্তু অত্যন্ত রঙিন ও আকর্ষণীয় পাখি। আদিবাস অস্ট্রেলিয়ায়। বৈজ্ঞানিক নাম ক্লোবিয়া গুল্ডিয়ি বা এরিথরুরা গুল্ডিয়ি। রেইনবো ফিঞ্চ হিসেবেও পরিচিত এরা।
পিঠ উজ্জ্বল সবুজ, পেট হলুদ, বুক বেগুনি, আর মুখের রং সাধারণত কালো গোল্ডিয়ান ফিঞ্চের। কিছু বিরল প্রজাতিতে সোনালি মাথাও দেখা যায়। শান্ত ও ধীরস্থির স্বভাবের এ পাখি মৃদু কিচিরমিচির আওয়াজ করে।
গোল্ডিয়ান ফিঞ্চ ঘাসজাতীয় উদ্ভিদের বীজ খায়। তবে অভ্যাস করালে সবুজ শাকসবজি ও অঙ্কুরিত বীজও খায়। শান্ত স্বভাব ও আকর্ষণীয় আচরণের কারণে পাখিপ্রেমীদের কাছে এটি বেশ প্রিয়।
৮. ম্যাকাও
চড়া দামের কারণে ম্যাকাওকে ড্রিম বার্ড বা স্বপ্নের পাখি বলা হয়। একসময় ১৯ ধরনের ম্যাকাওয়ের দেখা পাওয়া গেলেও বর্তমানে কয়েকটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আদিনিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা। ম্যাকাওয়ের পালক সাধারণত নীল, হলুদ, লাল ও সবুজ রঙের মিশ্রণে ভরা থাকে। আকৃতি বড় হওয়ায় প্রতিদিন যথেষ্ট যত্ন, বড় খাঁচা এবং মানুষের পর্যাপ্ত সাহচর্য দরকার হয়। ধৈর্য নিয়ে শেখালে কথা বলতে ও শব্দ অনুকরণ করতে পারে।
ছোট ম্যাকাও পোষা তুলনামূলক সহজ হলেও বড় প্রজাতি পোষার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও সময় অত্যন্ত জরুরি। শক্ত, লম্বা ঠোঁটের কারণে ভুলে কামড় দিলে বিপজ্জনক হতে পারে। রং, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসী স্বভাবের কারণে ম্যাকাও ঘরোয়া পাখি হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি সঙ্গীর জন্য আদর্শ।
৯. ক্যানারি
ক্যানারিকে বলা হয় সংগীতসাধক পাখি। বৈজ্ঞানিক নাম সেরিনাস ক্যানারিয়া ফর্মা ডোমেস্টিকা। আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব অংশের ম্যাকারোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জে এর আদি বসবাস। হলুদ, সাদা, লাল, কমলা, ধূসরসহ নানা ধরনের ক্যানারি পাখির দেখা মেলে। এটি বুদ্ধিমান, কৌতূহলী ও মানুষের সঙ্গ পছন্দ করে। তবে একা থাকতেও পারে। পুরুষ ক্যানারি প্রায় ছয় মাস বয়স থেকে সুন্দর গান গাইতে শুরু করে, যা আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করে। ছোট আকারের হওয়ায় সহজে খাঁচায় রাখা যায়। নানা বীজ, শস্যদানা এদের প্রিয়। ভালো যত্নে প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
১০. রেইনবো লরিকিট
রেইনবো লরিকিট একটি উজ্জ্বল, রঙিন তোতাপাখি। বৈজ্ঞানিক নাম ট্রাইকোগ্লোসাস মোলুক্কানাস। গায়ের রং সাধারণত সবুজ, মাথা বা বুক লাল, গলা নীল। কমলার আভা দেখা যায় কিছু অংশে।
এ পাখি মূলত অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল, মালুকু, পশ্চিম নিউগিনি, পাপুয়া নিউগিনি ও নিউ ক্যালেডোনিয়াতে বাস করে। এদের জিহ্বা ব্রাশের মতো, যা ফুল থেকে মধু ও পরাগ খেতে সাহায্য করে।
রেইনবো লরিকিট খুব সামাজিক, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসে। এদের কণ্ঠস্বর মিষ্টি। একা বা অলস থাকলে কষ্ট পেতে পারে। নিয়মিত যত্ন ও সময় দিলে সারা ঘর মাতিয়ে রাখে।






