আহতের আর্তনাদ আর অসত্য তথ্যের ‘মিথ’
দৈনিক সিলেট ডট কম
গোলাম মোর্তোজা: নিশ্চিত করেই জানি, গালি খেতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু সংবাদ নিয়ে কথা বলব। কো-পাইলট প্রিথুলা রশীদ ‘মেয়ে’ বলে দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন কুৎসিত মন্তব্যের পাশাপাশি, তাকে ‘ডটার অব বাংলাদেশ’ বানানোর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলব। কথা বলব রাশিয়ার একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার ভিডিওচিত্র দেখিয়ে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল কেন এটাকে বাংলাদেশের ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে তা নিয়ে।
আহতদের নেপালে কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না, পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেপালের নেই। অথচ বাংলাদেশ তার নাগরিকদের ফেলে রেখেছে নেপালে, সরকার কথা বলা ছাড়া তাদের ফিরিয়ে আনা জাতীয় কিছু করণীয় থাকলেও করছে না, তা নিয়েও কথা বলব।
গতকাল থেকে ভাবছিলাম বিষয়গুলো নিয়ে লিখব। মানসিকভাবে এত বেশি যন্ত্রণায় ছিলাম যে কিছু লিখে উঠতে পারিনি। এখনও যে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে তা নয়। অতি আকস্মিকভাবে ৫০ জন মানুষ মারা গেলেন। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশের। যার ৩ জন আমাদের অতি ঘনিষ্ঠ। রফিক জামান রিমু আমাদের বন্ধু, অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার স্ত্রী সানসিদা হক বিপাশা, আট বছরের সন্তান অনিরুদ্ধ জামান।
লিখতে গিয়ে দেখছি রিমুর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের বয়স প্রায় ২৮ বছর! ১৯৯১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছি একসঙ্গে। তারপর একেকজন এক একদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছি। বন্ধুত্বের গভীরতা আরও বেড়েছে। আমরা যখন ছাত্র, আমরা যখন বেকার, ঢাকা শহরে আমাদের তখন দুটি ঠিকানা। শুক্রাবাদে রিমুদের বাসা, গ্রিন রোডে আহমেদ রশীদ জয়দের বাসা। বন্ধুরা জানত, রিমু বা জয়ের বাসায় গেলে আড্ডা-গল্প-খাওয়া তো যায়ই, থাকাও যায়। রিমুর বাসার এই চিত্র এখনও এমনই ছিল। সেই রিমু-বিপাশা-অনিরুদ্ধ ছবি হয়ে গেলো! রিমু মানে শুধুই ছবি, কিছু স্মৃতি…! মেনে নিতে পারি না।
যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের সবার অবস্থাই কম বেশি একই রকম বা এর চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। এমন অবস্থায় স্বাভাবিক চিন্তা করা খুব কঠিন। তবুও গণমাধ্যমে কাজ করার কারণে, এসব বিষয় উপেক্ষা করে কাজ করতে হয়, কথা বলতে হয়, লিখতে হয়।
সেই দায়িত্ব থেকেই ক্ষুদ্র এই প্রচেষ্টা।
১. প্রথমে আসি প্রিথুলা রশীদ প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের একজন মানুষ, সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। কো-পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পূর্ণাঙ্গ পাইলট হয়ে ওঠা ছিল শুধুই সময়ের ব্যাপার। সেই প্রিথুলা রশীদ ছবি- স্মৃতি হয়ে গেলেন।
এই শোকের মাতমের মাঝে মানুষের মতো দেখতে একদল প্রাণি কুৎসিত বিষোদগারে মেতে উঠল তাকে নিয়ে। প্রিথুলা ‘মেয়ে’ বলেই ইউএস বাংলার ফ্লাইট দুর্ঘটনায় পড়েছে। একজন মানুষকে ‘মেয়ে মানুষ’ বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা আমাদের এই সমাজে, তা যেন দিন দিন শুধু বাড়ছেই। এই বিকারগ্রস্ত মানুষরূপীদের নিয়ে মন্তব্য করতেও রুচিতে বাধে। এরপর শুরু হলো আরেকটি আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছেয়ে গেলো, প্রিথুলাকে তার অবদানের জন্য ‘ডটার অব বাংলাদেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে নেপালি গণমাধ্যম। বাংলাদেশের একজন মানুষকে নিয়ে, যে মানুষটি নির্মম দুর্ঘটনায় নিহত হলেন, তাকে নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে এত ইতিবাচক সংবাদ দেখে মন কিছুটা হলেও ভালো হয়ে গেলো। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ আরও অনেকে, এমনকি অনেক সিনিয়র সংবাদকর্মীও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদটি শেয়ার করলেন। এত ভালো সংবাদ শেয়ার করারই কথা।
দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকে খুব মনোযোগ দিয়ে নেপালি গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করছিলাম। প্রিথুলাকে নিয়ে ‘ডটার অব বাংলাদেশ’ আখ্যা দিয়ে নেপালি গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোনও সংবাদ চোখে পড়েনি। অবাক হলাম। চোখ এড়িয়ে গেলো কীভাবে এমন একটি সংবাদ। নিজের ওপর নিজে বিরক্ত হয়ে সংবাদ সূত্র খোঁজার চেষ্টা করলাম। নেপালি গণমাধ্যমের কোথাও এমন কোনও সংবাদ খুঁজে পেলাম না। ‘সিকিম ম্যাসেঞ্জার’ নামক একটি ওয়েবপেজ এই সংবাদটি প্রকাশ করেছে। সিকিম নেপালের অংশ নয়, ভারতের অংশ। ‘সিকিম ম্যাসেঞ্জার’ও নেপালি গণমাধ্যম নয়। ‘সিকিম ম্যাসেঞ্জার’ পরিচিত বা নির্ভরযোগ্য কোনও সংবাদ সংস্থাও নয়। ‘সিকিম ম্যাসেঞ্জার’র সংবাদে বলা হয়েছে, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রিথুলা রশীদ ১০ জন নেপালি যাত্রীকে বাঁচিয়েছেন। বেঁচে যাওয়া এসব নেপালি যাত্রী ‘সিকিম ম্যাসেঞ্জার’কে এ তথ্য জানিয়েছেন। রিপোর্টে একজন যাত্রীরও নাম বা পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
সারা পৃথিবীর প্রায় সকল গণমাধ্যম উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করছে, পর্যবেক্ষণ করছে। তারা কেউ এমন সংবাদ জানল না, জানল ‘সিকিম ম্যাসেঞ্জার’? একজন যাত্রীরও নাম পরিচয় প্রকাশ ছাড়া যে সংবাদ প্রকাশিত হলো, তা আমাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলো?
বাংলাদেশের একজন মানুষের আত্মত্যাগ, বীরত্ব বা গর্বের কাহিনি নিশ্চয় প্রকাশ করবো। তার আগে অবশ্যই সংবাদটি সঠিক কিনা নিশ্চিত হয়ে নেব। আমরা তা করিনি। ‘সিকিম ম্যাসেঞ্জার’র মতো অপরিচিত, অনির্ভরযোগ্য একটি ওয়েবপেজকে ‘নেপালি গণমাধ্যম’ হিসেবে প্রচার করেছি। কোনও কোনও অনলাইন পোর্টাল আবার ‘ভারতীয় গণমাধ্যম’ বলেও লিখেছে। ভারতীয় প্রায় সকল গণমাধ্যম নেপালে সক্রিয়। তারা কেউ এই সংবাদ প্রকাশ করেনি, করেনি মানে জানেনি। জানলে নিশ্চয় করত। ‘সিকিম ম্যাসেঞ্জার’কে ভারতীয় গণমাধ্যম বললেও ভুল বার্তাই দেওয়া হয়।
২. দুর্ঘটনায় আগুন ধরে যাওয়া উড়োজাহাজের ককপিটের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে প্রিথুলা ১০ জন নেপালি যাত্রীকে বাঁচিয়েছেন- তা বাস্তবসম্মত কোনও সংবাদ নয়। বাঁচালে শুধু নেপালি নয়, তার মধ্যে বাংলাদেশি যাত্রীও থাকতেন। ঘটনার পরপরই জানা গিয়েছিল পাইলট এবং কো-পাইলট দুজনই নিহত হয়েছেন। যতদূর জানা গেছে, ককপিট ভেঙে যখন পাইলট এবং কো-পাইলটকে উদ্ধার করা হয়, তাদের জ্ঞান ছিল না। পরে জানা যায় পাইলট জীবিত আছেন। কো-পাইলট প্রিথুলা রশীদের মারা যাওয়ার সংবাদ প্রথমেই নিশ্চিত ছিল। তিনি নিজে ককপিটের দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছেন এসব কোনও সংবাদ কোথাও থেকে জানা যায়নি।
অসমর্থিত বা অসত্য তথ্য দিয়ে কাউকে ‘হিরো’ বানাতে চাওয়াটা বিবেচনাপ্রসূত কাজ নয়। যারা প্রিথুলা রশীদকে নিয়ে বিষোদগার করছেন, তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই। যারা ‘ডটার অব বাংলাদেশ’ বিষয়ক সংবাদ প্রচার করছেন, তারা ঠিক করছেন কিনা, নিজেরা নিশ্চয়ই তা আর একবার বিবেচনা করে দেখবেন।
৩. কে দায়ী, কার ভুলে এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, তর্ক-বিতর্ক চলছে। যা অস্বাভাবিক নয়। ০২ বা ২০, অবতরণের অনুমতি দিয়ে আবার নিষেধ করা, দায় এড়াতে পারবে না ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ব্ল্যাকবক্স যেহেতু পাওয়া গেছে, সব তথ্য সুনিশ্চিতভাবে জানা যাবে। ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ভুল বা দায় কতটা, পাইলট, কো-পাইলটের ভূমিকা বা দায় বা ভুল ছিল কিনা, কোনও কিছুই গোপন থাকবে না। সব জানা যাবে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের একটি চিত্র নিয়ে বড় রকমের দ্বিধায় পড়ে গেছি। একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল রাশিয়ায় ঘটা একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার ভিডিও চিত্র দেখিয়ে প্রচার করছে, এটা ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ। ভিডিও চিত্রে রাশিয়ার যে উড়োজাহাজের দুর্ঘটনা দেখানো হচ্ছে, আর ইউএস-বাংলার যে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়েছে, তা এক উড়োজাহাজও নয়। যে স্যাটেলাইট চ্যানেলটিতে এই ভিডিওচিত্র দেখাচ্ছে তা ভুল দেখানো হয়ে গেছে, এমনটা হতে পারে না। কারণ, তারা এই ভিডিওচিত্র ইউটিউব থেকে নিয়েছে।
‘Moment An-26 plane crashes during landing in Russia’- নামে দুর্ঘটনার এই ভিডিও চিত্র ( https://youtu.be/V9i15MtHQ10) ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই। ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়েছে গত ১২ মার্চ। চ্যানেলটি সিসিটিভি ফুটেজ নামে প্রচার করেছে ১৩ মার্চ।
জেনে-বুঝেই তারা রাশিয়ার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার ভিডিওচিত্র ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বলে প্রচার করছে।
৪. আমাদের বন্ধু দম্পতি রিমু-বিপাশা, তাদের সন্তান অনিরুদ্ধসহ যারা চলে গেছেন, তারা আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না। কিন্তু বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে, আহত হয়ে যারা হাসপাতালে শুয়ে আছেন তাদের। প্রথম দিন থেকে বলছি, নেপালের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। আহতদের সঠিক চিকিৎসা নেপালে সম্ভব নয়। বিশেষ করে পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেপালে নেই। পুড়ে যাওয়া রোগীর চিকিৎসা করতে সক্ষম এমন মানসম্পন্ন একজন চিকিৎসক আছেন নেপালে। তিনিও ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেছেন।
নেপালে এখন বেঁচে যাওয়া ৮ জন বাংলাদেশি চিকিৎসাধীন। তার মধ্যে পুড়ে যাওয়া ৫ জনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। তারা হাসপাতালে থাকলেও আসলে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে তারা বিনা চিকিৎসাতেই মারা যাবেন। এই অবস্থায় করণীয় কি?
বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতি সরকারের সংবেদনশীল আচরণ প্রত্যাশিত ছিল। দুর্ঘটনা ঘটার তিন বা চার ঘণ্টার মধ্যে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর খুলে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই সরকার চাইলেই বাংলাদেশের আহতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাঠানো যেত। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসা যেত। এসবের কিছুই করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, সবকিছু প্রস্তুত আছে। নেপাল সহায়তা চাইলেই পাঠানো হবে। মানুষ মরছে বাংলাদেশের, নেপাল কখন কবে সহায়তা চাইবে- তার জন্যে অপেক্ষা করে থাকতে হবে?
এমন তো নয় যে নেপালে যাওয়ার জন্যে ভিসার দরকার হয় বা অন্য কোনও জটিলতা আছে।
অনেক বিজ্ঞকে বলতে দেখলাম, নেপাল না চাইলে বাংলাদেশ ইচ্ছে করলেই ডাক্তার পাঠাতে পারবেন না। একটা নিয়ম-কানুন আছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম, বাংলাদেশ ইচ্ছে করলেই পাঠাতে পারত। জটিল নিয়ম-কানুনের কোনও বিষয় এখানে নেই। তারপর বলা হলো, আগুনে পোড়া এত গুরুতর রোগীকে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়।
সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝি, বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার চেয়ে, ঢাকায় নিয়ে আসার চেষ্টা করাটাই প্রথম গুরুত্ব পাওয়ার কথা।
বিশেষজ্ঞ দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার জন্যে কথা বললাম ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে। ডা. সামন্ত লাল সেন আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় এক নির্ভরতার নাম। শুধু বাংলাদেশ নয়, আমাদের এই পুরো অঞ্চলে তিনি সুপরিচিত। একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ঢাকা মেডিক্যালের অত্যাধুনিক বার্ন ইউনিট, যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।
তিনি বললেন, ‘নেপালে পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা কেমন তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। সেখানে একজন ডাক্তার আছেন। তিনি আমাদের এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেছেন। আজ আমাদের দুজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেপালে যাচ্ছেন।’
এই দুজন গেলে কী বাংলাদেশের আহতরা চিকিৎসা পাবেন?
‘নিশ্চয় তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবেন। তবে মনে রাখতে হবে, পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা শুধু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকলেই সম্ভব নয়। এর জন্যে ইকুইপমেন্টগত সাপোর্ট অপরিহার্য, যা আমাদের আছে। নেপালে আছে বলে মনে হয় না।’
কিন্তু অনেকেই বলছেন গুরুতর পুড়ে যাওয়া রোগীদের স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে করণীয় কী?
‘গুরুতরভাবে পুড়ে যাওয়া রোগীদের স্থানান্তর করা একটা বড় সমস্যা। উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ভেতরে থাকা যাত্রীরা যখন শ্বাস নেন, তখন তাদের শ্বাসনালী পুড়ে যায়। এটা খুবই ভয়াবহ ব্যাপার। দ্রুত প্রপার চিকিৎসা দিতে পারলেই শুধু বাঁচানো সম্ভব।’
নেপালে তো প্রপার চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। জেনেছি আমাদের জেলা-উপজেলা শহরগুলোর হাসপাতালে যে ব্যবস্থা, নেপালে এসব পুড়ে যাওয়া রোগীরা তেমন চিকিৎসা ব্যবস্থায় আছেন। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে এদের আনার ব্যবস্থা করা যায় না?
‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্স তো প্রায় একটি পূর্ণাঙ্গ অত্যাধুনিক হাসপাতাল। নিশ্চয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাদের আনার ব্যবস্থা করা যায়। কাজটা করতে হবে সরকারকে। আমরা পরবর্তী দায়িত্ব নিতে পারব। দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই আমরা প্রস্তুত হয়ে আছি।’
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসার যে দাবি দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকে করছি, বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্ত লাল সেনও মনে করেন, নিয়ে আসা দরকার। কাজটা বা উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ৩টি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আছে। ৩টি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটে উড়ে গিয়ে ৮ জন বাংলাদেশের আহত মুমূর্ষু মানুষকে নিয়ে আসতে পারে। প্রয়োজনে থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর থেকে আরও অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা যেতে পারে। সব মিলিয়ে দু’তিন কোটি টাকার বেশি খরচ হবে না। একটি রাষ্ট্রের জন্যে এটা কোনও বিষয়ই নয়।
‘সব ব্যবস্থা নিয়ে’ বসে থাকা সরকার, মানুষগুলো জীবিত থাকা অবস্থায় ‘যা যা করা দরকার’ করবে কিনা!
লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক