ইমরান খান কি ‘আরব বসন্তের’ পাকিস্তানী সংস্করণ?

দৈনিক সিলেট ডট কম
শিতাংশু গুহ:পাকিস্তানের হবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিয়াজী। এটি পুরা নাম, নিয়াজীটা কেউ বলেনা? কারণ হয়তো তিনি তিনি আমাদের অতি পরিচিত জল্লাদ ‘নিয়াজী’র ভাতিজা? বাপের চাচাতো ভাই! আমির আবদুল্লা খান নিয়াজী (এএ খান নিয়াজী), যিনি ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে বীরদর্পে ঢাকার রেসকোর্স আত্মসমর্পণ করেছিলেন। চাচায় সাধের পাকিস্তান ভাঙছে, ভাইস্তায় কি করে কে জানে? ইমরান নিয়াজী এখন অনেক কথা বলছেন, এও বলেছেন যে, তিনি মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাবেন। তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, আহা-রে একবিংশ শতাব্দীতে একটি দেশকে সপ্তম শতাব্দীতে পিছিয়ে নেয়ার কি উদগ্র বাসনা? অন্যরা প্রশ্ন রাখছেন, ইমরান খান কি ‘আরব বসন্তের’ পাকিস্তানি সংস্করণ?
এদিকে মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গের নাম পাল্টে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ এখন শুধু ‘বাংলা’। চিন্তা হচ্ছে, এখন আমাদের ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানের কি হবে? এমনিতে আমরা ‘জনগণ অধিনায়ক–’ রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারিনা, কারণ তাতে ‘ভারতপ্রেম’ উথলিয়া ওঠে, আর সামনে কখনো অন্যরা ক্ষমতায় এলে ‘জয়বাংলা’ বললে হয়তো ‘দেশদ্রোহী’ হতে হবে, বা নিদেনপক্ষে ‘হিন্দুপ্রেমী’ হিসাবে জেলে ঢুকানো হবে? মমতা তো আমাদের তিস্তার জল দেয়ই না, তারওপর একখান এক্সট্রা বাঁশ দিয়ে রাখলেন! আমরা যাবো কোথায়? একদিকে দিদি মমতা, অন্যদিকে নিয়াজীর ভাতিজা ক্রিকেটার ইমরান!
এরপর আছে, ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ’, মাহমুদুর রহমান। তিনি যেন কাদের ‘দিল্লীর কুকুর’ বলেছেন! তা কুকুর তো কুকুর চিনবেই? রাস্তায় এক কুকুর অন্য কুকুরকে দেখলে চিনে এবং ঘেউ ঘেউ করে? তিনি আবার ‘হিন্দুদের ছাল’ তুলে নেবার হুমকি দিয়েছেন! আয়ুর্বেদিক মতে ‘অর্জুন গাছের’ ছাল সব ওষুধে লাগে। হিন্দুর চামড়াও তাই সবাই তুলতে চান? জন্মের পর থেকে দেখছি, ‘হিন্দু ও ভারত’ কার্ড দেশে লোকে ভালোই খায়। মাহমুদুর রহমান একসাথে দু’টোই খেলেছেন। তিনি অবশ্য ‘ইসলাম রক্ষার’ কথাও বলেছেন! একাত্তরে রাজাকাররা, আইসিস, আল-কায়দা সবাই তা-ই বলে? ভাইসাব, ‘ইসলাম-ডারে’ ছাইড়া দিলে হয়না?
বাংলাদেশ উপরোক্ত ‘ত্রিমুখী’ সমস্যায় জর্জরিত? এরচেয়ে বহুগুন ভাল লন্ডনের ডেইলি মেইল পত্রিকার খবরটি। পত্রিকাটি জানিয়েছে, এক ভদ্রলোক প্রায় একসাথে তের পত্নীকে গর্ভবতী করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন এবং গ্রীনিচ বইয়ে তাঁর নাম উঠিয়েছেন। সংবাদটি কোন দেশের তা বলা হয়নি, ছবি দেখে মনে হয় ভারতীয়, কিন্তু তা পড়ে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভেরি প্রোডাক্টটিভ’। বাংলাদেশ এখনো ততটা উন্নত হয়নি, তবে আমাদের মেধা সম্পর্কে যে কারো সংশয় থাকা উচিত নয় তা এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট:
সম্প্রতি ঘন বর্ষায় অনেক রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ট্রাফিক উত্তর বিভাগ একটি সাইনবোর্ড দিয়ে বলেছে, ‘পানির নীচে রাস্তা ভালো’। এর অর্থ হচ্ছে, রাস্তা পানিতে ডুবে গেলেও রাস্তায় কোন খানাখন্দ নেই? কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা বোঝা যায়, কিন্তু সবাই সেটা বুঝতে ব্যর্থ, তারা লিখেছেন, ‘জাতের মেয়ে কালোও ভালো, পানির নীচে রাস্তা ভালো’।
অবাক কান্ড যে, টিএসসি চত্বরে আধো আলো আধো ছায়ায় চুমু খাওয়ার বিরুদ্ধে মোল্লারা মিছিল বের করেনি? ওলামা লীগ বা হেফাজত কি দেশে আছে? তবে ওয়াশিংটন পোষ্ট রিপোর্ট করেছে। ওরা তো অবাক, একটি চুমু নিয়ে এত কান্ড হতে পারে? ইউরোপ-আমেরিকায় তো সবাই সবাইকে চুমু খাচ্ছে; ছেলে-মেয়ে তো বটেই, ছেলে-ছেলে; মেয়েমেয়েও? এত কারো কোন ভ্রূক্ষেপ নেই, তবে সব চুমুই শালীন। টিএসসি’র চুমুও শালীন, আলতো করে চুমু খাওয়া। দৃশ্যটি ভালো। ছবিটি পরিচ্ছন্ন। এনিয়ে টকশো দেখিনি। মন্ত্রীরা কথা বলেননি! হয়তো, ছেলে-মেয়ে উভয়ে ছাত্রলীগ! প্রেমের রাজ্যে রাজনীতি পদ্মময়? তবে বেচারা জীবন আহমদ, ‘বর্ষামঙ্গল কাব্য, ভালোবাসা হোক উন্মুক্ত’ পোস্টিং দিয়ে চাকুরিটি খুইয়েছেন, ‘মাইর’ খেয়েছেন!
আবার পাকিস্তান? শত-হলেও জন্মেছি ওই দেশে? ইমরান-কে নিয়ে এখন অনেক লেখালেখি হচ্ছে। দেখে মনে হয় সবাই ইমরানের বিপক্ষে! কিন্তু ইমরান একবার ঢাকায় ক্রিকেট খেলতে এসেছিলেন। খেলা শেষে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘মনে হয় যেন লাহোরে খেলছি’। আমরা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দিয়েছিলাম। মাইল পাঁচেক রাস্তায় দাঁড়িয়ে দু’পাশে মানুষ তাকে স্বাগত জানিয়েছিলো। আনন্দে তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। সেদিন বলা হয়েছিলো, ‘খেলার সাথে রাজনীতি মেশানো উচিত নয়’? আচ্ছা এই লোকগুলো গেলো কই? ইমরান খান অবশ্য পরে মন্তব্য করেছিলেন যে, পাকিস্তানের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের প্রেমটা খাঁটি!
আরো একখান কথা আছে? পাকিস্তানে নির্বাচনে বোমা ফুটেছে, মানুষ মরেছে, কিন্তু সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর দেখিনি। এমনিতে পাকিস্তানের ৩৩% সংখ্যালঘু ২%-এ এসে ঠেঁকেছে, তারপরও হিন্দু ও খৃস্টানদের ওপর ব্ল্যাসফেমি, ধর্ষণ, ধর্মান্তর, জ্বালাও-পোড়াও চলছে, কিন্তু নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে অত্যাচার হয়নি। এর কারণ সম্ভবত: পাকিস্তানে সংখ্যালঘু নির্যাতনটা ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে; বাংলাদেশে সেটা ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক; এজন্যে হয়তো, ডঃ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘নির্বাচন আসছে, সংখ্যালঘুরা ভীত’? সামাজিক মিডিয়ায় দেখছি, পাকিস্তানে এবার অন্তত: ১৬জন হিন্দু বিজয়ী হয়েছেন, এরমধ্যে ৯জন পিপলস পার্টির, ৪জন মুসলিম লীগ, ও ৩জন বিজয়ী তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির। সেই হিসাবে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশে কতজন হিন্দু বিজয়ী হওয়া উচিত?
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক,নিউইয়র্ক, ২৮শে জুলাই, ২০১৮।