জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে
দৈনিক সিলেট ডট কম
আসাদুর রহমান:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম রাজনীতির মাঠ। তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মন্ত্রী তফসিল ও ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ উল্লেখ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত ভোটগ্রহণের নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ না করলেও সম্ভাব্য একটি দিন সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে কেএম নুরুল হুদা কমিশন।
জানা গেছে, নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ৩ কিংবা ১০ জানুয়ারি পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। অবশ্য ভোটগ্রহণের দিন হিসেবে ২৭ ডিসেম্বরই বেশি আলোচনায় আছে। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে আগেই বলে ফেলায় ইসি বিব্রত হয়।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।
নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে বসছে ইসি।
ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি আগামী বৈঠকে কমিশনকে অবহিত করা হবে। নির্বাচনী সরঞ্জাম ক্রয় বিষয়ে জানানো হবে। এ ছাড়া ব্যালট মুদ্রণের জন্য কাগজ ক্রয়সহ বিজি প্রেসের সঙ্গে আলোচনা ও প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত করা হবে। তবে ভোটগ্রহণের কোন দিন সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, তা বলতে রাজি হননি তিনি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আগামী ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে। এ জন্য সরকারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরের দিন প্রধান নির্র্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, অর্থমন্ত্রী ভোটের তারিখ বলে কাজটা ঠিক করেননি।
কয়েক মাস ধরেই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলে আসছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় গত ৬ অক্টোবর নির্বাচনী সফরে সুনামগঞ্জে সিইসি কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরে হবেÑ এটা আমরা বলিনি। যারা বলেছেন সেটা তাদের কথা। তারা তাদের হিসাবমতো বলেছেন।
গত রবিবার রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে গণসংযোগকালে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন জানুয়ারির ২৭ তারিখের আগে যে কোনো দিন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারে। সেটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই বিবেচনায় ২৭ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সরকারের এক মন্ত্রী আগেই মিডিয়ায় তারিখ বলে দেওয়ায় ভোটগ্রহণের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে চাইছে ইসি। সে ক্ষেত্রে ৩ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের চিন্তা করা হচ্ছে। তবে ১ জানুয়ারি বই উৎসব থাকায় এ তারিখে পরিবর্তন এলে বিকল্প হিসেবে ১০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হতে পারে। ইসি সচিবালয় তেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে প্রাইমারি, এমপিওভুক্ত ও সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা কাজ করবেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাও থাকবেন। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নির্বাচনের প্রায় ৮০ ভাগ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরই বাকি প্রস্তুতি শেষ হবে।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে সব অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত করা হয়েছে ভোটকেন্দ্র। এবার মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪০ হাজার ১৯৯টি। ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪০। নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে।
ইসির ক্রয় ও মুদ্রণ শাখা সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য ৩৪ লাখ ৪০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ৬ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ স্ট্যাম্প প্যাড, ১৭ হাজার ৪২০ কিলোগ্রাম লাল গালা, ৫ লাখ ৭৮ হাজার অফিসিয়াল সিল, ১১ লাখ ৫৬ হাজার মার্কিং সিল, ৮৭ হাজার ১০০ ব্রাশ সিল, ৬ লাখ ৬৫ হাজার অমোচনীয় কালির কলম কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ কেনার কাজ প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর অপেক্ষায় ইসি। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব করেছে। সরকার এ প্রস্তাব পাস করলে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে। আরপিও সংশোধন না হলেও প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে ইসি।
এ ছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়েও নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে তিনি জানান, আচরণ বিধিমালায় একটি বিধি আছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কথা বলা আছে। ওই বিধি অনুযায়ী সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে সরকারের ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা’ নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না। এটা বিদ্যমান আইনেই আছে। তফসিল ঘোষণার পরে আমরা বিষয়গুলো দেখব।-আমাদেরসময়