পুঁটিমাছ থেকে রাগব বোয়াল
দৈনিক সিলেট ডট কম
ফারজানা মৃদুলা: সমসাময়িক কালের জ্বলন্ত বিষয়গুলো প্রতারণা, ঘুষ দূর্নীতি,সরকারী ত্রান আত্মসাৎ,মানব পাচার,মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, বিদেশে টাকা পাচার, চিকিৎসায় নয়ছয়, চাকরি দেবার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এসব নিয়েই চলছে জীবনের চাকা।
প্রতিদিন বেড়েই চলছে প্রতারকদের তালিকা। যেমন ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল!
অতীতের পৃষ্টা না উল্টিয়ে বর্তমানে চোখ বুলালে দৃশ্যমান ঘটনা বলা চলে পাপুল, সাহেদ,সাবরিনা।
তাদের কার্যক্রম কিন্তু একদিনে শুরু করেনি।পুঁটি মাছ থেকেই তারা রাগোব বোয়াল হয়েছে ।আর পেছনে তাদের অবশ্যই যে ব্যক্তি বা ব্যাক্তিবর্গ ( গডফাদার) সহায়তা করেছেন তারাও উচ্চপর্যায়েরই মানুষ। তাদের না ধরলে প্রতিদিনই নতুন করে জন্ম নেবে শত শত পাপুল,সাহেদ সাবরিনা।
আমাদের দেশে কদিন পর পরই হঠাৎ করে বিষয়বস্তুু বদলে অন্যদিকে মোড় নেয়।
যার ফলে অনেক ঘটনা চাপা পড়ে আমরা তার শেষ অবধি পৌঁছতে পারিনা।
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান নিজেকে আওয়ামীলীগ এর বিভিন্ন পদের সম্পাদক, সহ সম্পাদক, দাবী করতেন কী করে? এতটা দিন তিনি কী করে সকলের চোখে ধুলো দিয়ে অপকর্মের পসরা নিয়ে বসেছিলেন? কোন বড় শক্তি যদি না থাকতো তবে কি পারতো এভাবে নিজেকে মেলে ধরতে। এক কিংবা দুদিন/ মাস / বছরে এ সাহেদ তৈরী হয়নি। দীর্ঘ সময় লেগেছে এবং সেই মুখোশধারী গড ফাদাররা তাদের সুযোগ দিয়ে আজ এ পর্যন্ত এনেছেন।
এমপি পাপুল কি করে সংসদীয় আসন নিজের দখলে আনেন তা কি কেউ জানি?
জেকিজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা।
এত বড় বড় মাপের মানুষদের সাথে যোগসুত্র রেখে চলেন আর এইভাবে টাকার বিনিময়ে করোনার ভূয়া সার্টিফিকেট দেন তা কি কোন বড় হাতের ছায়া না থাকলে সম্ভব?
এই রকম বহু বহু সাহেদ,পাপুল, সাবরিনা আমাদের দেশে ব্যাঙ এর ছাতার মত ছড়িয়ে আছে এবং তাদের গডফাদাররা তাদের দিয়ে অপকর্মের মালা গেঁথেই চলছে।
কেউ কেউ হঠাৎ ফসকে লোকচক্ষুর সামনে আসছে, তখন একটু চোর পুলিশ খেলা চলে
তারপর কাহিনী খতম।
এমন নজির তৈরী করতে হবে যেখানে ছোট ছোট অপরাধ গুলোকে গুরুত্ব সহকারে আইনের নজরে আনতে হবে।তাদের যদি ছাড় দেওয়া হয় তবেই তাদের সাহস বেড়ে একদিন তারাই অপরাধের সম্রাজ্য গড়ে তুলবে।
যাদের আইনের আওতাধীন করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে প্রথমে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।এরপর খলনায়কদের ঘাঁটিতে চিরুনি অভিযান সফল ভাবে করতে পারলে অপরাধীদের পূর্নদৈর্ঘ ছবির ইতি হবে চিরতরে।
অভিবাদন জানাই র্যাব ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীদের এত নিঁখুত ভাবে সাহেদের মত অপরাধীদের ধরার জন্যে।সাহেদকে ধরার বিষয়টায় বেশ ভিন্নতার রেশ ছিলো ।
এমন অনেক সাহসী অভিযান চালিয়ে সফলতা এনেছেন তারা। তবে যতদিন অপরাধীদের বটবৃক্ষ গুলোকে উপড়ে না ফেলা হবে, ততদিন স্বস্তি মেলবে না।
এইভাবেই নতুন নতুন সাহেদ,পাপুল আর সাবরিনার নতুন নতুন পরিচয়ে নতুন ভূমিকায় নতুন কৌশলে আসতেই থাকবে আমাদের সামনে।
নিজেকে আড়াল করতে কত রকমের বেশেই না নিজেকে ধারন করেছে সাহেদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হলো না তার।
পরিশেষে বলবো, চালচোর থেকে শুরু করে সাহেদ, আরিফ এবং সাবরিনাদের মতো অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হলে হয়তো এ ধরনের অপরাধের বৃত্তটা কিছুটা সংকীর্ন হবে।
লেখক: কলামিস্ট