অল্পে তুষ্ট, জীবনে পরিতৃপ্তি আনে
জাওয়াদ তাহের
অল্পে তুষ্ট জীবনে পরিতৃপ্তি আনে। অল্পে তুষ্ট দরিদ্র ব্যক্তি সম্মানের জীবন যাপন করে, আর ধনী লোভী সে লাঞ্ছিত হয়। তার আজীবন হৃদয়ে হাহাকার থেকে যায় আরো পাওয়ার আশায়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি বনি আদমের স্বর্ণভরা একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দুটি উপত্যকা হওয়ার কামনা করবে।
তার মুখ মাটি ছাড়া অন্য কিছুতেই ভরবে না। তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৯)
নিম্নে আমরা অল্পে তুষ্ট থাকার কিছু উপায় আলোচনা করব—
মধ্যপন্থা অবলম্বন
লোভ-লালসা নির্মূলের জন্য জীবিকার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা আর আয় অনুযায়ী ব্যয় করা। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ একদম না করা। যথাসাধ্য এসব থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা। ধীরে ধীরে অল্পতে তুষ্ট থাকার অভ্যাস করা, পরিবারের সদস্যদের এভাবে অভ্যস্ত করানো। আল্লাহ তাআলা প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এবং যারা ব্যয় করার সময় না করে অপব্যয় এবং না করে কার্পণ্য; বরং তা হয় উভয়ের মাঝখানে ভারসাম্যমান। ’ (সুরা : আল-ফোরকান, আয়াত : ৬৭)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী ব্যক্তি দরিদ্র হয় না। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৪২৬৯)
ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়া
আমাদের অনেকের প্রবণতা রয়েছে, সম্পদ থাকার পরও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া। এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশা যত কম হবে তার জন্য মঙ্গল তত বেশি হবে। আজকে যিনি আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ রিজিক দিয়েছেন, সামনেও তিনি আমাকে দেবেন। রিজিক আসার কোনো মাধ্যম যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে উত্তম পথ খুলে দেবেন। তাই এসব নিয়ে হা-হুতাশ করার কিছু নেই।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে লোকসকল, যে ব্যাপারে আমি তোমাদের আদেশ করেছি তা ছাড়া এমন কোনো জিনিসই নেই, যা তোমাদের জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। আর যা থেকে আমি তোমাদের নিষেধ করেছি তা ছাড়া এমন কোনো জিনিসই নেই, যা তোমাদের জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। এরপর তিনি বলেন, জিবরাইল (আ.) আমার অন্তরে এ কথাটি ঢেলে দিয়েছেন যে কোনো দেহ তার (নির্ধারিত) রিজিক পরিপূর্ণভাবে ভোগ না করা পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং ধনসম্পদ উপার্জনে উত্তম নীতি অবলম্বন করো। কাঙ্ক্ষিত রিজিক পৌঁছার বিলম্বতা যেন তোমাদের আল্লাহর অবাধ্যতা খোঁজার পথে তা অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা নির্ধারিত রিজিক আছে তা আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অর্জন করা যায় না। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১০৩৭৬)
অল্পে তুষ্টির কল্যাণ
অল্পে তুষ্ট ও অমুখাপেক্ষীর মধ্যে যেসব বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে এসব নিয়ে চিন্তা করা। আর অতিরিক্ত লোভ-লালসার যেসব ক্ষতি রয়েছে তাও উপলব্ধি করা। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, তাহাজ্জুদের নামাজ আর মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে আছে মুমিনের সম্মান। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, হাদিস : ৯২৯)
অন্যের সচ্ছলতা না দেখা
অল্পে তুষ্ট থাকার অন্যতম আরেকটি মাধ্যম, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দাদের নিয়ে চিন্তা করা। আল্লাহ তাআলা যত নবী পাঠিয়েছেন এবং তার যত প্রিয় বান্দা ছিল, তাদের জীবন-যাপন নিয়ে ভাবা। বিপরীতে ইহুদি-খ্রিস্টান ও বিলাসী মানুষের জীবন নিয়ে চিন্তা করা। আর নিজের বিবেককে সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করা, প্রকৃত সফল কারা, আর ব্যর্থ কারা? আল্লাহর প্রিয় বান্দা কারা আর অপ্রিয় কারা। অধিক আহার ও ভোগবিলাসের মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। এসব ভাবনা আমাকে অল্প তুষ্ট জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের চেয়ে নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি দৃষ্টি দাও। তবে তোমাদের চেয়ে উঁচু স্তরের লোকদের দিকে লক্ষ্য করো না। কেননা আল্লাহর নিয়মতকে তুচ্ছ না ভাবার এটাই উত্তম পন্থা। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩২০)