সর্বাধিক রোজা রাখার মাস শাবান
মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ
হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জির নবম মাস শাবান। আরবি অভিধান মতে এর অর্থ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। কথিত আছে, আরবরা পানির খোঁজে নানা দিকে ছুটে বেড়াত। এ মাসে মুমিনের কল্যাণমূলক কাজের শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি পায়। শাবান মাস মুমিনদের জন্য রমজান মাসের প্রস্তুতির বার্তা নিয়ে আসে। এ জন্য রমজানের দুই মাস আগ থেকেই রাসুল (সা.) একটি দোয়া বেশি বেশি পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রজব মাস শুরু হলে রাসুল (সা.) দোয়া পাঠ করতেন, (অর্থ) ‘হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। (বায়হাকি, হাদিস : ৩৫৩৪)
এ মাসের রোজা মহানবীর প্রিয় : রাসুল (সা.) অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাসের রোজাকে বেশি পছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.)-এর কাছে অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে রোজা রাখা অধিক প্রিয় ছিল। তিনি রমজান পর্যন্ত রোজা রাখতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৭৬)
রোজার প্রতি গুরুত্বারোপ : রমজানের আগের মাস হওয়ায় অনেকে শাবানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে না। সবার মধ্যে এর গুরুত্ব তৈরি করতে এ মাসে রাসুল (সা.) সর্বাধিক রোজা রাখতেন। উসামা বিন জায়েদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করি, হে আল্লাহর রাসুল, শাবান মাসে আপনি যে পরিমাণ রোজা রাখেন, সেই পরিমাণ রোজা অন্য মাসে রাখতে দেখি না। রাসুল (সা.) বলেন, রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটা এমন মাস, যে মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭)
সর্বাধিক রোজা রাখার মাস : রাসুল (সা.) শুধু রমজানেই পুরো মাস রোজা রাখতেন। আর শাবান মাসে অন্য মাসের তুলনায় বেশি রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) যখন রোজা রাখতেন তখন আমাদের মনে হতো, তিনি মনে হয় আর কখনো ইফতার করবেন না। আবার যখন তিনি রোজা থেকে বিরত থাকতেন তখন মনে হতো তিনি হয়তো আর কখনো রোজা রাখবেন না। আমি রাসুল (সা.)-কে রমজান মাস ছাড়া পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি। তবে শাবানের তুলনায় অন্য কোনো মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেও দেখিনি। (বুখারি, হাদিস : ১৮৩৩)
বিশেষ রাতের মর্যাদা : শাবান মাসের ১৫তম রাতে ইবাদতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ ১৫ শাবানের রাতে অবতরণ করেন। অতঃপর সৃষ্টিজগতের সবাইকে ক্ষমা করেন। কেবল মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৯০) অন্য হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর কথাও বর্ণিত হয়েছে।
এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফায়সালার কথাও বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘এই রাতে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ বিষয় ফায়সালা হয়।’ (সুরা : দুখান, আয়াত : ৪)।
আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইকরামা (রা.) বলেছেন, এ রাতে যাবতীয় রাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জীবিতদের তালিকা করা হয় এবং হাজিদের নাম লেখা হয়। এরপর তাতে আর বাড়ানো হয় না এবং কমানো হয় না। (তাবারি : ২১/১০)