আল্লাহর প্রতি নবী-রাসুলদের ভালোবাসা
মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ :
মানুষ এমন কোনো যন্ত্র নয়, যা শুধু নির্দিষ্ট ফাংশন অনুসরণ করে চলবে। শুধু যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তার অনুকরণও মানুষের কাজ নয়। কারণ মানুষের যেমন বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনার শক্তি আছে, তেমনি তার ভেতরে থাকা প্রশস্ত অন্তরের আছে প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ-অনুভূতি ও দুঃখ-ব্যথা প্রকাশের অন্তহীন শক্তি। তেমনি মন উজাড় করে প্রিয়জনের আনুগত্য ও অনুকরণের সামর্থ্যও আছে তার। এটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা লাভের মূল রহস্য। তাই মানুষ নিজের সৃজনশীল প্রতিভা ও অদম্য শক্তিমত্তা দিয়ে সব ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিত্যনতুন বিস্ময়কর সব কাজ করে তাক লাগিয়ে দেয়। অতঃপর মানুষ এমন অবস্থানে পৌঁছে যায় যে সে পবিত্র কোরআনের আমানত ধারণ করে, যা ধারণ করতে নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও পাহাড়-পর্বত পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি আকাশমণ্ডলী, ভূপৃষ্ঠ, পাহাড়-পর্বতের কাছে এই আমানত উপস্থাপন করি, তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তা নিয়ে শঙ্কিত হয়, আর মানুষ তা বহন করে, সে খুবই জালিম ও অজ্ঞ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭২)
মানুষের সঙ্গে রবের সম্পর্ক কিছু নিয়ম-নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যে মানুষ নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো নির্ধারিত সময়ে পালন করবে, তাঁর কর পরিশোধ করবে, তাঁর আদেশ ও নিষেধ মান্য করবে—এই সম্পর্ক নিষ্কলুষ ভালোবাসা ও আবেগের। তাই মানুষের কাজকর্মে গভীর প্রেম ও আবেগের ছাপ আছে। শরিয়তে এই সম্পর্ক আরো গভীর করার ব্যাপারে উত্সাহ রয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসাকে মুমিনদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অন্যদের আল্লাহর সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালোবাসার মতো তাদেরকে ভালোবাসে; কিন্তু যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর ভালোবাসায় আরো সুদৃঢ়, জালিমরা যখন শাস্তি দেখবে তখন বুঝবে, (আর বলবে) সব শক্তি আল্লাহর এবং আল্লাহ শক্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৫)
অন্য আয়াতে আল্লাহর প্রতি মুমিনদের ভালোবাসার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি বলুন, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল, আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, সন্তান, ভাই, স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজনরা এবং তোমাদের অর্জিত সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য, যা মন্দা পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাসস্থান, যা তোমরা ভালোবাসো, তাহলে তোমরা আল্লাহর বিধান আসার অপেক্ষা কোরো, আল্লাহ পাপাচারী জাতিকে সত্পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৪)
মহান রবের প্রতি নবী ও রাসুলদের ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের কথাও পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। ইয়াহইয়া (আ.) প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে, ‘হে ইয়াহইয়া, এই কিতাব শক্তভাবে গ্রহণ কোরো, আমি তাকে শৈশবে জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমার পক্ষ থেকে অন্তরের কোমলতা ও পবিত্রতা দিয়েছিলাম, সে ছিল আল্লাহভীরু। মা-বাবার অনুগত এবং সে উদ্ধত ও অবাধ্য ছিল না।’ (সুরা : মারয়াম, আয়াত : ১২-১৪)
অন্যত্র আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ইবরাহিম (আ.)-এর ভালোবাসার কথা এসেছে। তিনি নিজ সন্তানের ভালোবাসার ওপর আল্লাহর ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পবিত্র কোরআনে তাঁকে ধৈর্যশীল ও আল্লাহমুখী উল্লেখ করে তাঁর প্রশংসা করা হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে কাত করে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডাকলাম, হে ইবরাহিম, আপনি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। এভাবেই আমি সত্কর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই তা ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে এক কোরবানির বিনিময়ে মুক্ত করলাম।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১০৩-১০৭)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ইবরাহিম সহনশীল, কোমল হূদয় ও আল্লাহ অভিমুখী।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৭৫)
আল-আরকানুল আরবাআহ বই থেকে অনূদিত