ভাতের নেশাই হাতিটির কাল হল!

দৈনিকসিলেটডেস্ক
তাকে ধরেছিল ভাতের নেশায়। আর সেই সামান্য নেশাই হাতিটিকে ফেলেছে অসামান্য দুর্দশায়। ভাতের খোঁজে বারবার লোকালয়ে হানা দিত হাতিটি। আর এ কারণে তার নাম দেওয়া হয় আরিকোম্বান। মালায়ালাম এই শব্দটির অর্থ ভাতখেকো হাতি।
ভাতের খোঁজে বন্য প্রাণীর এমন লোকালয়ে আসার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি মনুষ্য সমাজ। এক মাসের ব্যবধানেই হাতিটিকে দুইবার আটক করা হয়। ওষুধ দিয়ে এটিকে একাধিকবার অচেতন করা হয়। লোকালয় থেকে দূরে রাখতে আরিকোম্বানকে ২৮০ কিলোমিটার দূরের সংরক্ষিত বনে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানেও তাকে আটকানো যায়নি। আবারও এটি লোকালয়ে আসতে শুরু করে।
আর তার এমন বাড়াবাড়ি কাণ্ডে কেরালা ও তামিলনাডুতে শুরু হয়েছে আইনি লড়াই। প্রাণী অধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ, রাজ্য সরকার ও আদিবাসীরাও জড়িয়ে পড়েছে এ ঘটনায়।
পিপল ফর অ্যানিম্যালের সদস্য অধিকারকর্মী শ্রীদেবী বলেছেন, কেরালায় আরিকোম্বান ‘অবিচারের মুখে ঘাতসহিষ্ণুতার প্রতীক’ হয়ে উঠেছে। একটি হাতির জন্য স্থানান্তর প্রক্রিয়া কতটা নৃশংস হতে পারে তা এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
আরিকোম্বানের আদি আবাস্থল কেরালার ইদুক্কি জেলার চিন্নাকানালে। চলতি বছরের শুরুতে কয়েকবার ঘন ঘন লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় হাতিটি স্থানান্তরের দাবিতে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করে। কর্মকর্তাদের দাবি, হাতিটি গত কয়েক বছরে কয়েকজনকে হত্যা করেছে। তবে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। অধিকারকর্মী কার্থা বলেন, হাতির মানুষকে হত্যা করার কোন প্রমাণ দেয়নি সরকার।
তামিলনাড়ুর বন কর্মকর্তারা আরিকোম্বানকে স্থানান্তরের জন্য আবারও অভিযান পরিচালনা করে। কেরালার বন বিভাগ ঘোষণা করে, তারা আরিকোম্বানকে ধরে নিয়ে একটি প্রশিক্ষিত হাতি বানানোর পরিকল্পনা করেছে। অধিকারকর্মীরা পরে পশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে উচ্চ আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন।
এপ্রিল মাসে আদালত-নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, আরিকোম্বানকে স্থানান্তর করাই ভাল সিদ্ধান্ত হবে। আরিকোম্বানকে ধরতে চিন্নাকানালে দুইদিনব্যাপী অভিযান চালানো হয়। এতে সম্পৃক্ত ছিল ১৫০ জন। ২৯ এপ্রিল হাতিটিকে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকা পেরিয়ার টাইগার রিজার্ভে নিয়ে যাওয়া হয়।
তার একমাস পরই প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাডুর বন কর্মকর্তারা প্রাণীটিকে আবারো স্থানান্তরের জন্য অভিযান শুরু করে। কারণ ২৯ মে আরিকোম্বানকে রাজ্যের কাম্বুর শহরে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমের ভিডিওতে দেখা যায়, প্রাণীটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্য দিয়ে দৌড়াচ্ছে। ভবন এবং যানবাহনের ক্ষতি করছে। এসময় তিনজন আহত হয়। আহতদের একজন ৬৫ বছর বয়সী, যিনি দুই দিন পর মারা যান। কর্তৃপক্ষ হাতিটিকে ধরার চেষ্টায় কারফিউ জারি করে।
আরিকোম্বানকে নিয়ে এখন আদালতের আইনি লড়াই চলছে। হাতিটিকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য কেরালা হাইকোর্টে আবেদন করেছেন এক রাজনীতিবিদ। মাদ্রাজ হাইকোর্টে দাখিল করা এক পিটিশনে তামিলনাডুতে আরিকোম্বানের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।
অধিকারকর্মী কার্থা বলেন, কাম্বানের ঘটনায় দেখা গেছে আরিকোম্বান মানুষের জীবনের জন্য হুমকি নয়। তাড়া করা হলেও হাতিটি মানুষের ওপর আক্রমণ করেনি।
৫ জুন তামিলনাডুর বন কর্মকর্তারা হাতিটিকে ধরে অচেতন করে। প্রাণীটিকে বারবার অচেতন করা ও খোলা ট্রাকে নিয়ে যাওয়ার কারণে আঘাত পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।
তামিলনাড়ুর বন বিভাগ জানায়, আরিকোম্বানকে কাম্বান থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে স্থানান্তরিত করা হয়। জানা যায়, স্থান্তান্তরের সময় আশেপাশে বসবাসকারী স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ জানায়। লোকালয়ে এসে ক্ষতি করতে পারে এ আশঙ্কায় তারা প্রতিবাদ জানায়।
কেরালার বনমন্ত্রী বলেন, হাতির সর্বশেষ কাণ্ডে বোঝা গেছে, এটি গভীর বন থেকে আবারো লোকালয়ের দিকে যাবে। স্থানান্তর একটি সাময়িক সমাধান। আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি না যে হাতিটি আর কেরালায় ফিরবে না। কেরালা সীমান্তে বন কর্মকর্তারা এখন সতর্ক অবস্থায় আছে।
অধিকারকর্মী কার্থা বলেন, হাতিদের নিজ আবাসে ফিরে আসার একধরনের প্রবণতা আছে। প্রথমবার স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে আরিকোম্বান ফিরে আসার চেষ্টা করছে। যদি সে মানব বসতিতে আবারও আসে, তাহলে তাকে কেরালায় ফিরিয়ে আনুন। এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধান।
সূত্র: বিবিসি