কিয়ামতের কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন যারা
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
মাইমুনা আক্তার
হালালভাবে উপার্জিত ধন-সম্পদ মহান আল্লাহর অন্যতম নিয়ামত। তবে একে পরিচালনা করতে হবে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে। অন্যথায় এই ধন-সম্পদই মানুষের আজাবের কারণ হতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না আপনি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।
যেদিন জাহান্নামের আগুনে সেগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে এবং সে সব দিয়ে তাদের কপাল, পাঁজর আর পিঠে দাগ দেওয়া হবে, বলা হবে, এগুলোই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। কাজেই তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ ভোগ করো। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)
এর বিপরীতে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, মহান আল্লাহ তাদের এর প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে এক শ দানা।
আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬১)
আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণে যদি কেউ তার সম্পদ ব্যয় করে, তবে সেই সম্পদের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, আমি নবী রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সুপ্রসন্নতা অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ তৈরি করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করেন।
’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩১৮)
যেসব ধনী তাদের সম্পদ এতিমের প্রতিপালনে ব্যয় করবে, তারা জান্নাতে নবীজি (সা.)-এর কাছাকাছি স্থান পাবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সাহাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি ও এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনিভাবে নিকটে থাকবে। এই বলে তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙুল দুটি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন এবং এ দুটির মাঝে কিঞ্চিৎ ফাঁক রাখলেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)
যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে অনাহারির খাবারের ব্যবস্থা করে, গরিব, দুঃখী ও এতিমের সহযোগিতা করে পবিত্র কোরআনে তাদের সৌভাগ্যশালী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্যদান, এতিম আত্মীয়কে অথবা দারিদ্র্য-নিষ্পেষিত নিঃস্বকে, তদুপরি সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে ধৈর্য ধারণের, আর পরস্পর উপদেশ দিয়েছে দয়া অনুগ্রহের, তারাই সৌভাগ্যশালী।
’ (সুরা : বালাদ, আয়াত : ১৪-১৮)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে লোকসকল, তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, আহার করাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন রাতের বেলা নামাজ পড়ো। শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৫১)
এ ছাড়া যেসব ধনী তাদের সম্পদ সদকায়ে জারিয়া ও জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করবে, বারবার হজ-ওমরাহ করবে ও অন্যকে নিজ খরচে হজ-ওমরাহ করার ব্যবস্থা করে দেবে; পরকালে তাদের নেকির পাল্লা অনেক বেশি ভারী হবে। কেননা সদকায়ে জারিয়ার ধারাবাহিকতা মানুষের মৃত্যুর পরও থাকে, হজ-ওমরার মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব অর্জন করা যায়, যা নিজে করলেও অফুরন্ত সওয়াব, কাউকে নিজ অর্থায়নে করালেও তার সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। এভাবে প্রত্যেকটি নেক কাজে আর্থিকভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ধন-সম্পদকে পরকালের নাজাতের অসিলা বানানোর সুযোগ রয়েছে।
মহান আল্লাহ সবার সম্পদকে সঠিক পথে ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। আমিন