দোয়ারাবাজারে বাঁধের দুই পাশ দখল করে ইট বালু পাথরের ব্যাবসা
দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি
দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারখালের বাঁধ, দিন শেষে বিকেল ঘনিয়ে আসলে প্রাকৃতিক পরিবেশে মুখরিত হয়ে উঠে বাঁধের চার-পাশের গাছ পালা। সেই পরিবেশ নষ্ট করতে দিনের পর দিন সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তি।
কয়েক বছর থেকে প্রভাব খাটিয়ে, আইনের তুয়াক্কা না করে আপন মনে অবৈধ ব্যাবসা করে আসছে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যাক্তি।বাঁধের দুই পাশে গাছের গোড়ায় বালু-পাথরের স্তুপ করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এর সাথে ধ্বংশ হচ্ছে প্রাকৃতিক লীলাভূমি পান্ডারখালের দর্শনীয় স্থান।
প্রায় ৫০ বছরের পুড়নো বাঁধটি টেকসই রাখান জন্য লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ,সেখানে ইট বালু পাথরের স্তুপ করার ফলে মরে যাচ্ছে সেখানকার গাছ-পালা,শুধু তাই নয় বাঁধের দুই পাশ ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।
১৯৭৪-সালে ফসল রক্ষায় তৈরি করা হয় বাঁধটি,বাঁধের উপর দিয়ে তৈরি করা হয় ছাতক-সুনামগঞ্জের সড়ক,প্রতিদিন যাতায়াত করে লক্ষাধিক মানুষ কিন্তু বাঁধের চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে ইট বালু পাথর যার ফলে বর্ষার মৌসুম আসলে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এমনকি বাঁধ মজবুত রাখতে যে গাছ গুলো রোপন করা হয়েছিল সেগুলো মরার পথে এবং কিছু গাছ মারা গেছে যা বলেছেন স্থানীয় মানুষ।শুধু তাই নয় সরকারি অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছিল বসার ছাউনি, সেগুলো এখন আর চোখে পরে না।
ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি, সড়কের দুই পাশ অবৈধভাবে দখল করে ইট বালুর ও পাথরের ব্যবসা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে করে যেমন পরিবেশদূষণ হচ্ছে তেমনি দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন যানবাহন চালক ও পথচারীরা। একদিকে ট্রাকে করে বালু নিয়ে যায়,বাতাসের সঙ্গে বালু উড়ে চোখে-মুখে চলে আসে। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে। অন্যদিকে সড়কের পাশে যত্রতত্র ইট বালু রাখায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। গাছতলা দখল করে স্তুপ করা হয়েছে ইট বালু পাথরের।
ব্যস্ত সড়ক ও বাঁধের পাশে বালু পাথরের ব্যবসা করার অনুমতি না থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন প্রশাসনের চোখের সামনে প্রকাশ্যে চলছে এ ব্যবসা। এতে করে পথচারীদের চলাচলে অসুবিধাসহ অনেক সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয় মানু্ষের অভিযোগ অনেকবার এর প্রতিকার করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা কোন এক অদৃশ্য ছায়ায় পার পেয়ে যায়।এমনকি অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। দ্রুত এর প্রতিকার না করলে ভেঙ্গে যাবে বাঁধ,সাধারণ কৃষকরা পরবে হুমকির মুখে, নষ্ট হবে ফসল।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের জিয়াউল ইসলাম (বর্তমান মেম্বার) এই বাঁধের উপরে অবৈধ ভাবে ব্যবসা চালানোর মূল কারিগর।এলাকাবাসী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পান্ডারখাল বাধ থেকে এই অবৈধ ভাবে ইট, বালু-পাথরের ব্যবসা বন্ধ করার পাশাপাশি এই বাধের পরিবেশ ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানিয়েছেন।
স্থানীয় প্রবীন মুরুব্বি সাইদুল হক বলেন,আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয় পান্ডারখালের বাঁধ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁধ রক্ষার দাবি জানান তিনি
স্থানীয় সুরুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মালবাহী ট্রলি বাঁধের উপর নিচে উঠানামা করে এতে বাঁধের মাটি সরে যাওয়ায় মরছে গাছ,ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ,নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ এবং সাধারণ মানুষ পড়েছে হুমকির মুখে কারণ বাঁধ ভেঙে গেলে আশপাশের এলাকার ঘর বাড়ি বিলিন হয়ে যাবে পানির দাক্কায়।
কিভাবে ব্যাবসা করছে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ইউপি সদস্য জিয়াউল মিয়া বলেন, বাঁধে বালি পাথর না রাখতে নিষেধ করেছে এসিল্যান্ড যে বালি পাথর মজুত করা আছে এগুলো বিক্রি হলে আর রাখবো না।কিন্তু এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল প্রায় মাস খানিক আগে।
সত্যতা নিশ্চিত করে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, সরেজমিনে গিয়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানাসহ নিষেধ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাঁধের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।