কঠিন বিপদে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ
আহমাদ মুহাম্মাদ
কোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে মুমিন বান্দা যখন অস্থির ও বিচলিত হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তার হৃদয়ে সাকিনাহ নাজিল করে তাকে প্রশান্ত ও নির্ভার করেন। এটা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়া ‘সাকিনাহ’। এর ফলে সে শত জ্বালা-যন্ত্রণা ও বিপদাপদে আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রশান্তি অনুভব করে। তবে এই সাকিনাহ বা প্রশান্তি তখনই নাজিল হয়, যখন বান্দার বক্ষদেশ ঈমান ও একিনের বলে বলীয়ান থাকে।
যেমন হিজরতের প্রাক্কালে রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আবু বকর (রা.)-কে নিয়ে সাওর গুহায় আশ্রয় নেন, তখন আল্লাহ তাঁর ওপর সাকিনাহ নাজিল করেন। ফলে গুহার ওপর তাঁর প্রাণঘাতী শত্রুদের দেখার পরও তিনি সমান্যতম বিচলিত ও চিন্তিত হননি। উপরন্তু তিনি আবু বকর (রা.)-কে প্রশান্ত থাকার উপদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা তাকে (রাসুলকে) সাহায্য না করো, তবে মনে রেখ আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন, যখন তাকে কাফিররা (মক্কা থেকে) বের করে দিয়েছিল এবং (সাওর) গিরিগুহার মধ্যে সে ছিল দুজনের একজন।
যখন সে তার সাথিকে বলল, চিন্তিত হয়ো না। আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার ওপর স্বীয় প্রশান্তি নাজিল করলেন এবং তাকে এমন সেনা দল দিয়ে সাহায্য করলেন, যাদের তোমরা দেখনি।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪০)
তাফসিরবিদ সাদি (রহ.) বলেন, ‘এখানে সাকিনাহর মর্যাদা ফুটে উঠেছে।
কেননা উৎকণ্ঠা ও বিপর্যয়ের সময় বান্দার অন্তর যখন অস্থির হয়ে যায়, তখন সাকিনাহর মাধ্যমে আল্লাহর নিয়ামত তাদের ওপর পূর্ণতা লাভ করে। ঈমান ও সাহসিকতার মাত্রা অনুযায়ী এই সাকিনাহর পরিমাণ নির্ধারিত হয়।’ (তাফসিরে সাদি, পৃষ্ঠা ৩৩৮)
অনুরূপভাবে বায়আতে রিজওয়ান ও হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় আল্লাহ তাঁর নবী ও মুমিনদের হৃদয়ে সাকিনাহ নাজিল করে তাদের ঈমানকে মজবুত করেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন মুমিনদের প্রতি, যখন তারা বৃক্ষের নিচে তোমার কাছে বায়আত করেছে। এর মাধ্যমে তিনি তাদের অন্তরে যা ছিল তা জেনে নিলেন।
ফলে তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল করলেন এবং তাদের পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ১৮)
ঠিক একইভাবে হুনায়নের যুদ্ধের সংকটকালে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে মুষ্টিমেয় কয়েকজন সাহাবি ছাড়া কেউ ছিল না, তখন আল্লাহ তাদের ওপর সাকিনাহ নাজিল করে তাদের হৃদয় প্রশান্ত করে দেন। ফলে তাদের সাহসিকতা ও তেজস্বিতা বহুগুণ বেড়ে যায়।