পাকিস্তান সরকার গঠন নিয়ে টানাপড়েনে
দৈনিকসিলেটডেস্ক
পাকিস্তানের পেশোয়ারে গতকাল পিটিআই সমর্থকরা নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় দলীয় নেতা ইমরান খানের ছবি হাতে স্লোগান দেন অনেকে। দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন ফল প্রকাশে বিলম্বের বাহানা দিয়ে কারচুপির চেষ্টা করছে – এএফপি
পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক নির্বাচনের পর দেশটির সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীই নিজেদের বিজয়ী দাবি করেছেন- তাদের একজন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফ অপর জন ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনীর ‘নৈরাজ্য ও মেরুকরণ’ পেছনে ফেলে দেশের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসি ও ডন।
পাকিস্তানে গত বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, কারাবন্দি ইমরান খানের দল (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন। দলটির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, তারা শতাধিক আসনে জয়ী হয়েছেন বা বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে নওয়াজ শরিফ নিজের দলকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। দাপ্তরিক ভাষ্য অনুযায়ী পিএমএল-এন সর্বোচ্চ আসনে জয়ী হওয়া রাজনৈতিক দল। এবার নির্বাচনে পিটিআই যেহেতু তাদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারেনি- সে ক্ষেত্রে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গণ্য হচ্ছেন।
এদিকে নওয়াজ শরিফ আরেক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা পিপির সঙ্গে জোট বাঁধতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু গতকাল দিনের শেষভাগে পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো বলেছেন, পিএমএল-এন অথবা পিটিআই কারও সঙ্গে জোট সরকার নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। গতকাল জিও নিউজকে তিনি বলেন, আমরা কিছু নির্র্র্র্র্দলীয় প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি কিন্তু পিটিআই সমর্থিত কোনো স্বতন্ত্র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। যদিও তিনি নির্বাচনের আগে বিজয়ী স্বতন্ত্রদের নিয়ে জোট সরকার গঠনের কথা বলেছিলেন।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এমনকি তথাকথিত ‘এস্টাবব্লিশমেন্ট’-এর সঙ্গে যার বা যে দলের সখ্য ভালো তারাই সরকার গঠনে অনুকূল পরিবেশ পায়। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল জেনারেল অসীম মুনির সব দলকে পরিপক্বতা ও ঐক্য প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ২৫০ মিলিয়ন জনতার জন্য মেরুকরণের রাজনীতি উপযুক্ত নয়, প্রয়োজন প্রগতিশীল ঐক্য। তার কথায়, নির্বাচনে জয়-পরাজয় কোনো শূন্যÑসংখ্যার প্রতিযোগিতা নয়… বরং জনতার ম্যান্ডেট নির্ধারণের একটি মহড়া।
এদিকে গতকালও জাতীয় পরিষদে ১৪টি আসনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি- এই সবগুলো আসনই কম জনবহুল বেলুচিস্তান প্রদেশে। তবে ইমরান ও নওয়াজ শরিফ দুজনই দাবি করছেন তারা জয়ী হয়েছেন। এদিকে গতকাল পিটিআই চেয়ারম্যান গহর আলি খান বলেছেন, তাদের দল সরকার গঠনে চেষ্টা করবে এবং সেই সময় পর্যন্ত নির্বাচনের সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশ না করা হলে রবিবার থেকে বিক্ষোভ শুরু হবে। পিটিআই চেয়ারম্যান গহর আলী খান দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি সরকার গঠনের জন্য তার দলকে আমন্ত্রণ জানাবেন। কারণ, জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছেন। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমের উদ্দেশে গহর আলী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাব এবং সরকার গঠন করব। পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান বলেন, জনগণ অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
অন্যদিকে নওয়াজ শরিফের দল ৭১ আসনে জয়ী হয়েছে। তিনি স্বীকার করেছেন যে, তার একা সরকার গঠনের সুযোগ নেই। তবে তিনি বলেছেন, জোটের প্রধান শরিক হয়ে তিনি দেশকে কঠিন সময় থেকে উত্তরণের পথে নিয়ে আসবেন। পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি ৫৩ আসন পেয়েছে।
তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরিস্থিতি যা বলছে সেটি হলো আগামী সরকার জোট সরকার হতে যাচ্ছে। এতে যারাই জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করুক না কেন রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বেশ বেগ পেতে হবে।
উল্লেখ্য, এবার পাকিস্তান নির্বাচন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে কারাবন্দী ইমরান খানের জনপ্রিয়তা কেমন আছে এবং নির্বাসন থেকে ফেরা নওয়াজ শরিফের অবস্থান কেমন তারও পরীক্ষা ছিল এই নির্বাচন। সর্বোপরি পাকিস্তানের গণতন্ত্রের পরীক্ষা ছিল এই নির্বাচন। যদিও নির্বাচনের দিন বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হয়েছে। ৬ পুলিশসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।