খাবার গ্রহণকালে নবীজী (সা.)-এর কয়েকটি সুন্নত
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
খাদ্য গ্রহণ পৃথিবীর সব প্রাণীর জন্য আবশ্যক। মানুষের জন্য তা গ্রহণে আছে ইসলামের সুন্দর নীতিমালা, যা মানুষের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য কয়েকটি হাদিসের দিকে দৃষ্টি দেব।
১. ডান হাতে খাদ্য গ্রহণ : ডান হাতে খাদ্য গ্রহণ করা সব মুসলিমের কর্তব্য।
কারণ বাঁ হাতে শয়তান খাবার গ্রহণ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন বাঁ হাতে পানাহার না করে। কারণ শয়তান বাঁ হাতে পানাহার করে। (মুসলিম, হাদিস : ২০২০)
২. নিজের কাছের দিক থেকে খাদ্য গ্রহণ : খাবারের প্লেট সামনে নেওয়ার পর কোলের দিক থেকে খাদ্য গ্রহণ করা ইসলামের সৌন্দর্য।
থালার মাঝখান থেকে খাদ্য গ্রহণ না করার ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ আছে। কারণ খাবারের মধ্যিখানে বরকত নাজিল হয়। রাসুল (সা.) বলেন, হে বৎস! তুমি আল্লাহর নামে খাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার দিক থেকে খাবার গ্রহণ করো। (বুখারি, হাদিস : ৫০৬১)
৩. অতিরিক্ত খেতে অনুমতি নেওয়া : মানুষ অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ নিজের অধিকার বলে মনে করে।
অথচ প্রস্তুতকৃত খাবারও অতিরিক্ত খাওয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে সতর্কতা এসেছে। নবী (সা.) (একসঙ্গে খেতে বসে) সঙ্গীদের অনুমতি ছাড়া কাউকে একসঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ২৩৫৭)
৪. তিন আঙুলের সাহায্যে খাওয়া : নবী (সা.) বেশির ভাগ সময়ে রুটি খেতেন। নবীজি তিন আঙুলে খেতেন। বৃদ্ধাঙ্গুল, তর্জনী ও মধ্যমা।
হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) তিন আঙুল দ্বারা খেতেন এবং হাত মোছার আগে তা চেটে খেতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৩২)
আমরাও শুকনা খাবার তিন আঙুলে খেতে চেষ্টা করব। তবে ভাত বা এজাতীয় খাবার খাওয়ার সময় সম্পূর্ণ হাত মেখে না যায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ ব্যক্তির প্রকাশ্যে খাওয়া অন্যের জন্য যেন অরুচির কারণ না হয়।
৫. পড়ে যাওয়া লোকমা তুলে খাওয়া : পড়ে যাওয়া খাদ্য তুলে খাওয়া যেন বর্তমান সমাজে ঘৃণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) বলেছেন, শয়তান তোমাদের কারো খাবারের সময় উপস্থিত হয়। সুতরাং যদি তোমাদের কারো লোকমা মাটিতে পড়ে যায়, সে যেন তাতে লেগে যাওয়া আবর্জনা সরিয়ে তা খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন ফেলে না রাখে। খাবার শেষে সে যেন তার আঙুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না, তার খাদ্যের কোন অংশে বরকত (কল্যাণ) আছে। (মুসলিম, হাদিস : ২০৩৩)
৬. হেলান দিয়ে না খাওয়া : হেলান দিয়ে খাদ্য গ্রহণ করা ঔদ্ধত্যের লক্ষণ। নবী (সা.) বলেন, আমি হেলান দিয়ে খাদ্য গ্রহণ করি না। (বুখারি, হাদিস : ৫০৮৩) তাই হেলান দিয়ে খাবার খাওয়া বর্জন করা কর্তব্য।
৭. পেট পূর্ণ করে না খাওয়া : রাসুল (সা.) বলেন, মানুষ পেট থেকে বেশি নিকৃষ্ট কোনো পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮০)
৮. খাবারের সমালোচনা না করা : মানুষ খাবারের প্রশংসা বাদ দিয়ে সমালোচনায় মগ্ন হতে পছন্দ করে। তারা বুঝতে চায় না যে কোনো আয়োজক তার অর্থ ব্যয় করে কোনো অরুচিকর খাদ্য মেহমানের সামনে পেশ করে না। নবী (সা.) কখনো কোনো খাদ্যকে মন্দ বলতেন না। রুচি হলে খেতেন, না হলে বাদ দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৭০)
৯. শোকর করা : খাবার শেষ হলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। রাসুল (সা.) পানাহারের পরে বলতেন, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি খাওয়ালেন, পান করালেন, পেটে প্রবেশ করা সহজ করে দিলেন এবং এগুলো বের হওয়ারও ব্যবস্থা রাখলেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৫১)
আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য শুধু পোশাকে না হয়ে খাবারেও ফিরে আসুক—এটিই আজকের প্রত্যাশা।