পবিত্র কোরআনে নারীর মর্যাদা
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টির সেরা বলে ঘোষণা করেছেন, যার অর্ধেক হলো নারী। ইসলামে নারীর মর্যাদা অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন নারীর প্রসঙ্গে আলোচনা এসেছে। যাঁদের কেউ নবীদের স্ত্রী, কেউ আবার কোনো নবীর মা।
আজ আমরা পবিত্র কোরআনে আলোচিত নারীদের সম্পর্কে সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
হাওয়া (আ.) : হাওয়া (আ.) মানবজাতির মা। আদম (আ.)-এর সহধর্মিণী। পবিত্র কোরআনে তাঁর আলোচনা এসেছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি বললাম, হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং তা থেকে আহার করো স্বাচ্ছন্দ্যে, তোমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী এবং এই গাছের নিকটবর্তী হয়ো না, তাহলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৫-৩৬)
সারাহ (আ.) : তিনি ইবরাহিম (আ.)-এর স্ত্রীদের একজন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে সন্তান দানের সুসংবাদ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তার স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল, সে হেসে উঠল।
অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের এবং ইসহাকের পর ইয়াকুবের।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৭১)
হাজেরা (আ.) : তিনিও ইবরাহিম (আ.)-এর একজন স্ত্রী, ইসমাঈল (আ.)-এর মা। মহান আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহিম (আ.) তাঁকে জনমানবহীন উপত্যকা তথা কাবা প্রাঙ্গণে রেখে যান। পবিত্র কোরআনে সেই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যাতে পরোক্ষভাবে হাজেরার কথাও ইঙ্গিতে উল্লেখ আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের কাছে বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে।
সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদের রিজিক প্রদান করুন ফলফলাদি থেকে। আশা করা যায়, তারা শুকরিয়া আদায় করবে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৩৭)
জাকারিয়া (আ.)-এর স্ত্রী : তিনি ইয়াহইয়া (আ.)-এর মা ছিলেন। জাকারিয়া (আ.) মহান আল্লাহর কাছে সন্তানের জন্য দোয়া করার বিষয়টি পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, যেখানে তাঁর স্ত্রীর আলোচনাও আছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছিলেন, হে আমার রব! আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে, বার্ধক্যে আমার মাথা শুভ্রোজ্জ্বল হয়েছে; হে আমার রব! আপনাকে ডেকে আমি কখনো ব্যর্থকাম হইনি। আর আমার পরে স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে আমি আশঙ্কাবোধ করছি। আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, অতএব, আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত : ৪-৫)
আয়েশা (রা.) : আয়েশা (রা.)-এর ইফকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেছিলেন এবং অমূলক তথ্য প্রচারের কঠোর বিরোধিতা করেছেন। সুরা নূরের সেই আয়াতগুলোতে পরোক্ষভাবে আয়েশা (রা.)-এর আলোচনা পাওয়া যায়।
মুসা (আ.)-এর মা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর আমি মুসার মায়ের প্রতি নির্দেশ পাঠালাম, ‘তুমি তাকে দুধ পান করাও। অতঃপর যখন তুমি তার ব্যাপারে আশঙ্কা করবে, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করবে। আর তুমি ভয় করবে না এবং চিন্তা করবে না। নিশ্চয় আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসুলদের অন্তর্ভুক্ত করব।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৭)
মুসা (আ.)-এর বোন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর সে মুসার বোনকে বলল, ‘এর পেছনে পেছনে যাও। সে দূর থেকে তাকে দেখছিল, কিন্তু তারা টের পায়নি।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ১১)
মুসা (আ.)-এর স্ত্রী : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মুসা (আ.)-কে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় করানোর বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, যেখানে তাঁর স্ত্রীর আলোচনা এসেছে। (সুরা কাসাস, আয়াত : ২৩)
ইমরান (আ.)-এর স্ত্রী : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার রব, আমার গর্ভে যা আছে, নিশ্চয়ই আমি তা খালেসভাবে আপনার জন্য মানত করলাম। অতএব, আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩৫)
মরিয়ম (আ.) : তিনি একমাত্র নারী, পবিত্র কোরআনে যাঁর নাম বহুবার সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর তার রব তাকে উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে গড়ে তোলেন। আর তাকে জাকারিয়ার দায়িত্বে দিলেন। যখনই জাকারিয়া তার কাছে তার কক্ষে প্রবেশ করত, তখনই তার কাছে খাদ্যসামগ্রী পেত। সে বলত, ‘হে মরিয়ম, কোথা থেকে তোমার জন্য এটি? সে বলত, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসাবে রিজিক দান করেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩৭)
রানি বিলকিস : সুলাইমান (আ.)-এর পাখি হুদহুদ সুলাইমান (আ.)-কে এক রানির খবর দিয়েছিল, যার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, আমি এক নারীকে দেখতে পেলাম, সে তাদের ওপর রাজত্ব করছে। তাকে দেওয়া হয়েছে সব কিছু। আর তার আছে এক বিশাল সিংহাসন। (সুরা নামল, আয়াত : ২৩)
নবীজি (সা.)-এর সব স্ত্রী : হে নবী-পত্নীরা, তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে (পরপুরুষের সঙ্গে) কোমল কণ্ঠে কথা বোলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। (সুরা আহযাব, আয়াত : ৩২)
আজিজে মিসরের স্ত্রী : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর মিসরের যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল, ‘এর থাকার সুন্দর সম্মানজনক ব্যবস্থা করো। আশা করা যায়, সে আমাদের উপকার করবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করব’ এবং এভাবেই আমি জমিনে ইউসুফকে প্রতিষ্ঠিত করলাম এবং যেন আমি তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিই। আল্লাহ নিজ কর্ম সম্পাদনে প্রবল; কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না। (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ২১)
এই সুরার ৩০-৩১ নম্বর আয়াতে মিসরের নারীদেরও আলোচনা এসেছে, যারা ইউসুফ (আ.)-এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নিজেদের হাত কেটে ফেলেছিল।
ফিরাউনের স্ত্রী : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর ফিরাউনের স্ত্রী বলল, ‘এ শিশুটি আমার ও তোমার চক্ষু শীতলকারী, তাকে হত্যা কোরো না। (সুরা কাসাস, আয়াত : ৯)
আবু লাহাবের স্ত্রী : সুরা লাহাবের মধ্যে মহান আল্লাহ আবু লাহাবকে অভিশাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রীকেও অভিশাপ দিয়েছেন।
নুহ (আ.) ও লুত (আ.)-এর স্ত্রী : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা কুফরি করে তাদের জন্য আল্লাহ নুহের স্ত্রীর ও লুতের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন; তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে দুজন সত্বান্দার অধীনে ছিল, কিন্তু তারা উভয়ে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, অতঃপর আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষায় নুহ ও লুত তাদের কোনো কাজে আসেনি। বলা হলো, তোমরা উভয়ে প্রবেশকারীদের সঙ্গে জাহান্নামে প্রবেশ করো।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ১০)
এ ছাড়া পবিত্র কোরআনের কিছু জায়গায় আরো কিছু নারীর আলোচনার ইঙ্গিতে পাওয়া যায়।