‘বিয়ে করার উদ্দেশে প্রেম’ প্রশ্নে ইসলাম যা বলে
সাআদ তাশফিন
প্রেম মানুষের অন্তরের একটি বিশেষ অবস্থার নাম, যা কারো প্রতি আবেগ, গভীর অনুভূতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়। প্রকৃত প্রেম হলো মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি প্রেম, যা ছাড়া অন্য কোনো মানুষ ঈমানদার হতে পারবে না। দুনিয়ায় কেউ কাউকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মা ও রক্তের আত্মীয়দের প্রতি প্রেমও মহান আল্লাহ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত করে দেন।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সওয়াবের আশায় কোনো মুসলমান যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসেবে গণ্য হয়। (মুসলিম : ১২/১৪, হাদিস : ১০০২) কিন্তু বর্তমানে প্রেম বলতে যা প্রচলিত হয়ে গেছে, তা নিছক একটি অবৈধ সম্পর্ক। যে সম্পর্ক মানুষকে পাপের অতল সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। এ এক মরীচিকা, যা তাকে আল্লাহর রহমত থেকে অনেক দূরে নিয়ে যায়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা : মোনাফিকুন, আয়াত : ৯) ওই আয়াতে যাদের ভালোবাসা জায়েজ ও ইবাদত, তাদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে তারা যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে।
তাহলে যে সম্পর্কগুলো মহান আল্লাহ হারাম করেছেন, সেই সম্পর্ক যদি কাউকে আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল করে দেয়, তবে তা কতটা জঘন্য হবে? আল্লাহ হেফাজত করুন।
সাইকোলজিস্ট রবার্ট স্টেনবার্গ ভালোবাসাকে তিনটি উপাদানের মধ্যে ভাগ করেছেন। সেই উপাদানটিকে একটি ত্রিভুজের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। সেই তিনটি উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো আবেগ (যৌন অথবা রোমান্টিক আকর্ষণ)। যেই আকর্ষণ মানুষকে ব্যভিচারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা : ইসরা, আয়াত : ৩২)
তাই কাউকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যেও তার সঙ্গে বিবাহপূর্ব প্রেম নামে যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে, তা করার কোনো অবকাশ নেই। প্রশ্ন জাগতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে তা হয়তো শারীরিক সম্পর্কে না-ও গড়াতে পারে, সে ক্ষেত্রেও কি তা হারাম হবে? এর উত্তর খোঁজার জন্য এই হাদিসগুলোতে চোখ বোলানো যেতে পারে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের ব্যভিচার যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের ব্যভিচার আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের ব্যভিচার (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত, হাদিস : ৮৬)
মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন সে তার মনের মানুষকে না দেখে থাকতে পারে না। সে দূরে থাকলেও কমপক্ষে তার ছবি দেখে অথবা তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে, কমপক্ষে তাকে নিয়ে স্বপ্নের বাসরে হারিয়ে যায়, যার প্রতিটি স্তরকেই উল্লিখিত হাদিসগুলোতে হারাম বলা হয়েছে। কারো প্রতি সত্যি দুর্বলতা চলে এলে, পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ে করে নেওয়া উচিত। বিয়ে করার দৃঢ়সংকল্প থাকলেও কোনো বেগানা নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। আর বেশির ভাগ প্রেমের শেষ পরিণতিই হয় বিচ্ছেদ, ধোঁকা।